শেষ বিচারের দিন — কে কী অবস্থায় থাকবে

Giraffes

শেষ বিচারের দিনে বর্তমান পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবীতে পরিণত হবে এবং পাহাড়-পর্বত সব একাকার হয়ে সমতল হয়ে যাবে (দেখুন: সূরা ত্ব-হা: ১০৬)। মহান আল্লাহ সমস্ত মানুষ ও জ্বীনকে হাশরের মাঠে একত্রিত করবেন হিসাবের জন্য। তিনি বলেন: 

14:48

“সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এই পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে ও পরিবর্তিত করা হবে আসমানসমূহকে, এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে।” [সূরা ইবরাহীম: ৪৮]

কিয়ামতের সেই দিনটির দৈর্ঘ্য হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। ভয়ঙ্কর এক প্রকম্পনের মাধ্যমে দীর্ঘ এই দিনটি শুরু হবে। মহান আল্লাহর বর্ণনায়:

22:1

22:2

“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিণী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন।” [সূরা হাজ্জ: ১-২]

পুনরুত্থানের এই দিনটি মানুষের জন্য কত বেশি আতঙ্ক ও ভয়ের হবে তার একটি সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে সূরা আবাসা-র ৩৩ থেকে ৩৭তম আয়াতে, যেখানে আল্লাহ বলেন:

80:33

“অতঃপর যখন কর্ণ বিদারক আওয়াজ আসবে। …

80:34

… সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে, …

80:35

… তার মাতা, তার পিতা, …

80:36

… তার পত্মী এবং তার সন্তানদের কাছ থেকেও। …

80:37

… সেদিন প্রত্যেকেই নিজের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। [সূরা আবাসা: ৩৩-৩৭]

দুনিয়া কাপানো ভয়ঙ্কর অপরাধীদের তখন দেখা যাবে অবনত মস্তকে, অপলক নেত্রে। তাদের অন্তর থাকবে শূন্য। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। মানুষের হৃদয় সেদিন থাকবে ওষ্ঠাগত, বিষন্ন। কঠিন সেই দিনে কাফির ও জালিমদের অবস্থা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:

17:97

“… আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব।” [সূরা ইসরা: ৯৭]

ওই দিন সূর্য মানুষের মাথার উপরে চলে আসবে। মাত্র এক মাইলের ব্যবধান থাকবে। মানুষেরা তাদের নিজ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। মানুষের শরীরের পঁচা ঘাম কারো টাখনু পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো নাকের ডগা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। একথা বলার পর নবী (ﷺ) তাঁর মুখের দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। [মুসলিম]

তবে, ভয় নেই তাদের যারা এখন আল্লাহর ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। সেদিন তারা আল্লাহ তা’আলার ছায়াতে আশ্রয় পাবে। রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেন, যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে আমারই জন্য তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করবো। আজ এমন দিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া নেই।” [মুসলিম]

রসুলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেন: “কিয়ামত দিবসে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোনো ছায়া থাকবে না — (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক; (২) এমন যুবক যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে; (৩) ওই ব্যক্তি যার হৃদয় সর্বদা সংশ্লি­ষ্ট থাকে মসজিদের সাথে; (৪) এমন দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তাঁরই জন্য; (৫) এমন ব্যক্তি, যাকে কোনো সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া এক রমণী আহ্বান করল অশ্লীল কর্মের প্রতি, কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি; (৬) এমন ব্যক্তি, যে এরূপ গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে অবগত হয় না; আর (৭) এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দুচোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা।” [বুখারী ও মুসলিম]

এছাড়াও, যে ব্যক্তি কোনো ঋণগ্রস্ত বা অভাবী ব্যক্তিকে সুযোগ দেবে অথবা তাকে ঋণ আদায় থেকে অব্যাহতি দেবে আল্লাহ তাকে নিজ ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। [মুসলিম]

কবর থেকে পুনরুত্থানের পর শেষ বিচারের সেই দিনে আপনার-আমার অবস্থান কোথায় হবে তা নির্ভর করছে দুনিয়ার এই জীবনে আমাদের ঈমান ও আমল কেমন তার উপর।

কপিকৃতঃ লেখককে আল্লাহ তাআলা উত্তম বিনিময় দান করুন। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নফস, রুহ, কলব......পরিচয়, ব্যাধি, প্রতিকার

চৌদ্দশ বছরের আমরা এক কাফেলা

হাদিস ছাড়া শুধু কুরআন অনুসরণ কতটুকু যৌক্তিক