হাদিস ছাড়া শুধু কুরআন অনুসরণ কতটুকু যৌক্তিক


ইসলাম আজ শত শত ফির্কায় জরজরিত। যদিও মহান আল্লাহ ফির্কা সৃষ্টি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করছেন (সূরা আনআম-৬:১৫৯)। যে কোন ফির্কা সৃষ্টির মূলে ছিল, ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ, গোত্রীয় কোন্দল, রাজনৈতিক স্বার্থ, নিজের মতাদর্শণ প্রচার, কোন জাতীর প্রতি কর্তৃত্ব বজায় রাখা
https://www.youtube.com/watch?v=sq8EuNODZbE

more | https://bit.ly/2wDbRdB
ইত্যাদি। কিন্তু ইদানিং একটি ফির্কার আবির্ভার লক্ষ করা যায় এরা নিজেদেরকে নাম দিয়েছে আহলে কুরআন বা কুরআনের অনুসারী। তাদের স্বার্থ খুজে পাওয়া কষ্টকর। তারা কিভাবে কখন সৃষ্টিহল তা বলা কঠিন তবে নবুওয়তের যুগ পার হওয়ার পরপরই শিয়া ও খারেজী সম্প্রদায়ের হাত ধরে বিভিন্ন দল তৈরি হয় তারা হাদীসের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বলে কুরআনই যথেষ্ট এবং হাদীস ও সু্ন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর উনিশ শতকের শেষ দিকে এবং বিশ শতকের প্রথম দিকে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে নতুন করে এই ভ্রান্ত মতবাদের উৎপত্তি হয়। তারপর তা পাকিস্তানে জায়গা নেয়। এরপরে ক্রমান্বয়ে তা আরও বিভিন্ন মুসলিম দেশে সংক্রমিত হতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ তাদের কার্যক্রম লক্ষ করার মত। বাস্তবতা হল তারা এখন আমাদের সামনে। তারা মানুষকে প্রাকাশ্যে ও গোপনে দুইভাবেই প্রতারিত করছে। তারা বলতে চায় শুধু কুরআন যথেষ্ট। হাদীস মানার প্রয়োজন নাই। তারা ইসলামি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার ভান করে, অনেক কে প্রশ্ন করে কুরআন কি স্বয়ং সম্পুর্ণ না? জ্ঞান সল্পতার দরুণ অধিকাংশ সাধারণ মানুষ চুপথাকে। এরপর তারা বলেন, মহান আল্লাহ কুরআনে এরশাদ করেন,
أَفَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡتَغِى حَكَمً۬ا وَهُوَ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ إِلَيۡڪُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ مُفَصَّلاً۬‌ۚ
অর্থঃ এমতাবস্থায় আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মীমাংসাকারীর সন্ধান করবো? অথচ তিনি পূর্ণ বিস্তারিত বিবরণসহ তোমাদের কিতাব নাযিল করেছেন। (সুরা আনআম ৬:১১৪)।
এভাবে তারা এর সমর্থনে সূরা আনআমের-৫৫, ৯৭, ৯৮, সুরা বাকারার-১৫৯, সূরা আরাফের-৩২,৫২,১৪৫ সূরা বণী ঈসরাইলের-১২ এবং সূরা রুমের ২৮ নম্বর আয়াত তুলে ধরে। উক্ত আয়াতগুলিতে বলা হয়েছে কুরআন কে সকল কিছুর বিস্তারিত বিবরণসহ নাজিল করা হয়েছে। এর পরই বলবেন কুরআন যেহেতু সকল কিছুর বিস্তারিত বিবরণসহ নাজিল করা হয়েছে। তাহলে হাদিস মানার প্রয়োজন নেই। কুরআনের মত হাদিস সংরক্ষিত নেই। হাদিস না মানলে ইসলাম বা মুসলিমের কোন ক্ষতি নেই ইত্যাদি ইত্যাদি।
আহলে কুরআনের দল যে, শুধু সরাসরি দাওয়াত দিচ্ছে তা নয়, এ জন্য তারা ফেসবুক, ওয়েবসাইট, ওয়াজ মাহফিল, সভা, দু চার জনের আলপচারিতা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের এই জঘন্য অপ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।  ইউ টিউবে ভিডিও আপলোড করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে ফিতনার সৃষ্টি করছে। এমতের অনুসারীদের কেউ কেউ ইউরোপ, আমেরিকায় বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের এই বিষাক্ত মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। ফেসবুকে গড়ে তুলেছে বড় বড় গ্রুপ। মানুষকে তারা হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সন্দিহান করে তুলছে। কুরআনের আয়াতগুলির অপব্যাখ্যা করে হাদীস সম্পর্কে মানুষের মনে কুধারনার সৃষ্টি করছে। এতে করে তারা হাদিস তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মানহানি করছে। এবং সাধারনের নিকট হাদীসকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যর বিষয় হিসাবে উপস্থাপণ করছে। এই হাদীস অস্বীকার কারীর দল তাদের নোংরা নখর বের করে সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্বত্বা এবং হাদীসে রাসূলের উপর কঠিন ভাবে আক্রমণ শুরু করেছে। কারণ, হাদীস থেকে মুসলমানদের দূরে সরাতে পারলে মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো যাবে অনায়াসে। কাজেই থেকে এদের এখনই সাবধান না হলে, ইসলামের ব্যাপক ক্ষতি না করতে পারলেও গুটি কয়েক মুসলিম ভাই যে বিভ্রান্ত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এদের সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎ বাণী কত সত্য ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। মিকদাম বিন মা’দিকারিব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘শোন! আমাকে কুরআন দান করা হয়েছে এবং তারই সাথে তারই মতো (সুন্নাহ) দান করা হয়েছে। শোন! সম্ভবতঃ নিজ গদিতে বসে থাকা কোন পরিতৃপ্ত লোক বলবে, ‘তোমরা এই কুরআনের অনুসরণ কর; তাতে যা হালাল পাও, তাই হালাল মনে কর এবং তাতে যা হারাম পাও, তাই হারাম মনে কর। সতর্ক হও! আল্লাহর রসূল যা হারাম করেন, তাও আল্লাহর হারাম করার মতোই।’’ (আবূ দাঊদ ৪৬০৬, ইবনে মাজাহ ১২, দারেমী ৫৮৬, মিশকাত ১৬৩)।

কুরআন এবং হাদিসের উত্স কোথায়?
কুরআনঃ কুরআন বলতে বুঝি এমন একটি কিতাব যা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বিধি বিধান সম্বলিত, তার নির্বাচিত প্রিয় বান্দা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর, ফিরিস্থা জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে আরবী ভাষায় নাজিল করেছেন।
হাদিসঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌র রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদীস বলা হয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কিত বর্ণনা ও তার গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন।
কুরআন হাদিসের উত্স কোথায়?
কুরআন এবং হাদিস উভয়টির মূল উত্স হল ওহী। মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মাধ্যমে অথবা ইলহাম এর মাধ্যমে দ্বীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নাজিল করেছেন। তার মধ্য তিনি নিজের কোন কথা সংযোজন বা বিয়োজন করতে পারে না। যেমন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
وَلَوۡ تَقَوَّلَ عَلَيۡنَا بَعۡضَ ٱلۡأَقَاوِيلِ (٤٤)-لَأَخَذۡنَا مِنۡهُ بِٱلۡيَمِينِ (٤٥) ثُمَّ لَقَطَعۡنَا مِنۡهُ ٱلۡوَتِينَ (٤٦) فَمَا مِنكُم مِّنۡ أَحَدٍ عَنۡهُ حَـٰجِزِينَ (٤٧)
অর্থঃ যদি এ নবী নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো। তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম। এবং ঘাড়ের রগ কেটে দিতাম৷ তোমাদের কেউ-ই (আমাকে ) এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতো না৷ (হাক্ক ৫৯:৪৪-৪৭)।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের তরফ থেকে কিছুই বলতে পারেন না, যা কিছু বলেন মহান আল্লাহর তরফ থেকেই বলেন। আর এ জন্য তিনি তিনটি উত্স থেকে ওহী পেতেন।
১) জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে।
২) ইলহাম এর  মাধ্যমে।
৩) পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথার মাধ্যমেঃ
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحۡيًا أَوۡ مِن وَرَآىِٕ حِجَابٍ أَوۡ يُرۡسِلَ رَسُولاً۬ فَيُوحِىَ بِإِذۡنِهِۦ مَا يَشَآءُ‌ۚ إِنَّهُ ۥ عَلِىٌّ حَڪِيمٌ۬ (٥١)
অর্থঃ কোন মানুষই এ মর্যাদার অধিকারী নয় যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন৷ তিনি কথা বলেন হয় অহীর (ইংগিতমাধ্যমে অথবা পর্দার আড়াল থেকে কিংবা তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতাপাঠান এবং সে তার হুকুমে তিনি যা চান অহী হিসেবে দেয়। তিনি সুমহান ও সুবিজ্ঞ৷ (সুরা শুরা ৪২:৫১)।
১) জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমেঃ  যে পদ্ধতিতে নবী রাসূলদের নিকট অহীর মাধ্যমে আশমানী কিতাব এসেছে।  সরাসরি অহী আসার এ পদ্ধতিটিই সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয়েছে আল্লাহর ওহী বা নির্দেশনা নাযিলের ক্ষেত্রে। আর তা হয়েছে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এর মারফত। তাঁকে আমীনুল ওহী বলা হয়। কুরআনে রূহুল আমীন বলা হয়েছে। তাকে রাসুল এর সম্মানিত দূত বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ (١٩٣)
অর্থঃ  “বিশ্বস্ত রূহ (জিব্রাঈল আঃ) উহা নিয়ে অবতরণ করেছেন। ”(সূরা শুআরা ২৬:১৯৩)
আল্লাহ্‌ আরও বলেন:
إِنَّهُ ۥ لَقَوۡلُ رَسُولٍ۬ كَرِيمٍ۬ (١٩) ذِى قُوَّةٍ عِندَ ذِى ٱلۡعَرۡشِ مَكِينٍ۬ (٢٠) مُّطَاعٍ۬ ثَمَّ أَمِينٍ۬ (٢١)
অর্থঃ “নিশ্চয় উহা সম্মানিত রাসুল জিবরীল (আঃ) এর আনিত বাণী। যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী, ফেরেশতাগণের মান্যবর এবং আল্লাহর বিশ্বাসভাজন।” (সূরা তাকভীর ৮১:১৯-২১)।
আল্লাহ আরও বলেন,
إِنَّهُ ۥ لَقَوۡلُ رَسُولٍ۬ كَرِيمٍ۬ (٤٠)
অর্থঃ  “নিশ্চয় এই কুরআন একজন সম্মানিত রাসূলের আনিত বাণী।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:৪০)।
হাদীছ অস্বীকারকারীরা এই আয়াতগুলোতে ‘রাসূল’ বলতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বুঝাতে চায়। অথচ আয়াতের প্রসঙ্গতেই বুঝা যায় এখানে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম কে বুঝানো হয়েছে।
২) ইলহাম এর  মাধ্যমেঃ মনের মধ্যে কোন কথা সৃষ্টি করে দেয়া কিংবা স্বপ্নে কিছু দেখিয়ে দেয়ার নাম ইলহাম।  মহান আল্লাহ অনেক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্তরে অনেক কথা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। হাদিসে কুদসি যার প্রকৃষ্ট উদাহরন। অপর পক্ষে তার স্বপ্ন যে ওহী এর স্বপক্ষে শত শত সহিহ হাদিস বিদ্যমান। স্বপ্নে কিছু দেখিয়ে দেয়া, যেমন হযরত ইবরাহীম ও ইউসুফকে দেখানো হয়েছিলো (সুরা ইউসুফ ১২:৪ ও ১০০ এবং সূরা সাফ্ফাত ৩৭:১০২)। অর্থাৎ যে কথা নবীর মনের ভাবনা আল্লাহ কতৃর্ক উদভাসিত হত অথবা স্বপ্ন যোগে নবীকে জানিয়ে দিতেন তাই ইলহাম। এখানে মাধ্যম হিসাবে ফিরিশতা ছিল না। সাধারণত: আল্লাহ্‌ তাআলার পক্ষ থেকে শব্দ বা বাক্য অবতীর্ণ হয় না। কেবল বিষয়বস্তু অন্তরে জাগ্রত হয়, যা পয়গম্বরগণ নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেন।

৩) পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথা বলার মাধ্যমেঃ এই পদ্ধতিতে বান্দা শব্দ শুনতে পায় কিন্তু শব্দদাতাকে দেখতে পায় না, যেমন হযরত মূসার ক্ষেত্রে ঘটেছিলো। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে মিরাজে গিয়ে আরশে পাকে হয়েছিল। আল্লাহ দর্শন না দিয়ে পর্দার অন্তরাল থেকে তাঁদের সাথে কথা বলেছেন এবং ওহী করেছেন আর সে সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। আর আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহিস সালাম এর সাথে তূর পর্বতে পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথা বলেছিলেন। তূর পাহাড়ের পাদদেশে একটি বৃক্ষ থেকে হঠাৎ আওয়াজ আসতে শুরু হলো। কিন্তু যিনি কথা বললেন তিনি তার দৃষ্টির আড়ালেই থাকলেন। (সুরা ত্বাহা ২০:১১-৪৮; সুরা নামল ২৭:৮-১২; আল কাসাস ২৮:৩০-৩৫)।

হিকমত বা হাদিস আল্লাহ তায়ালার  নাজিল করেছেন তার প্রমানে কয়েকটি আয়াতঃ
আল্লাহ তায়ালা কুরআনের পাশাপাশি হিকমত নাজিল করেছেন আর হিকমত যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস (কথা, কাজ, সম্মতি) তাতে কারও কোন সন্ধেহ নেই। কুরআনের বর্ণিত আয়াতগুল সরাসরি জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম মাধ্যমে এসেছি যা পূর্ব আলোচিত হয়েছে কিন্তু এই হিকমাত হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি মহার আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা ইলহাম। যা আল্লাহ কোন ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া নাযিল করেছেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কাবা গৃহ নির্মাণ করার পর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এর বংশের জন্যে দুআ করেছিলেন। সে সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেন
رَبَّنَا وَٱبۡعَثۡ فِيهِمۡ رَسُولاً۬ مِّنۡہُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡہِمۡ ءَايَـٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَيُزَكِّيہِمۡ‌ۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ (١٢٩)
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, তাদের মধ্যে থেকে তাদের মধ্যে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের নিকট আপনার আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করে শোনাবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা প্রদান করবে এবং তাদেরকে শিরক ও পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি মহা পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞ।(সূরা বাকারা ২:১২৯)।

আল্লাহ্‌ এই দুআ কবুল করে তাদের মধ্যে তথা ইসমাঈলের বংশধর আরব জাতির মধ্যে সেই রাসূল প্রেরণ করেছেন। সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيہِمۡ رَسُولاً۬ مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡہِمۡ ءَايَـٰتِهِۦ وَيُزَڪِّيہِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحِڪۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِى ضَلَـٰلٍ۬ مُّبِينٍ (١٦٤)
অর্থঃ আল্লাহ্‌ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যখন তিনি তাদেরই ভিতর থেকে তাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যে তাদেরকে তাঁর আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করে শোনাবে, তাদেরকে পবিত্র করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে। যদিও তারা ইতোপূর্বে সুস্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা আল ইমরান ৩:১৬৪)।
এ দু’টি আয়াতে হিকমত হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীছ, যা তিনি  মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহ্‌ যেমন কুরআন নাযিল করেছেন তেমনি হিকমত তথা হাদীছও নাযিল করেছেন। আল্লাহ্‌ বলেন,
وَٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَمَآ أَنزَلَ عَلَيۡكُم مِّنَ ٱلۡكِتَـٰبِ وَٱلۡحِكۡمَةِ يَعِظُكُم بِهِۦ‌ۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيمٌ۬ (٢٣١)
অর্থঃ তিনি তোমাদের উপদেশ দান করছেন, যে কিতাব ও হিকমাত তিনি তোমাদের ওপর নাযিল করেছেন তাকে মর্যাদা দান করো। আল্লাহকে ভয় করো এবং ভালোভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ সব কথা জানেন৷ (সূরা বাকারা ২:২৩
১)।
আল্লাহ তা’আলা তা’আলা কুরআনে সূন্নাহকে হিকমাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمۡ تَكُن تَعۡلَمُۚ ١١٣
“এবং আল্লাহ তোমার প্রতি গ্রন্থ ও হিকমাহ (হাদিস) অবতীর্ণ করেছেন এবং তুমি যা জানতে না, তিনি তাই তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন”। (সূরা নিসা ৪:১১৩)।
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
وَٱذۡكُرۡنَ مَا يُتۡلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱلۡحِكۡمَةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا ٣٤
“আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ (হাদিস) এর কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মèদর্শী ও সর্ব বিষয়ে অবহিত। ( আহযাব ৩৩:৩৪)।

এখানে হিকমত অর্থ সুন্নাত বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীছ যা আল্লাহ্‌ পরোক্ষভাবে কোন ফেরেশতার মাধ্যম ব্যতীত তাঁর নবীর কাছে নাযিল করেছেন। অনেক বিদ্বানরা বলেছেন, হিকমাহ হল সুন্নাহ বা হাদিস। কেননা কুরআন ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের গৃহে যা পাঠ করা হত, তা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ। এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
সাবধান‍! আমাকে কিতার (কুরআন), তার সঙ্গে অনুরূপ কিতার (হাদিস) দেোওয়া হয়েছে। (আহমদ-১৭১৭৪ এবং আবু দাউদ-৪৬০৪)।
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ)বলেন, “আল্লাহ্‌ এই আয়াতে “কিতার” উল্লেখ করেছেন তার অর্থ হচ্ছে কুরআন। আর উল্লেখ করেছেন হিকমাত যার অর্থ, আমি কুরআনের পণ্ডিতদের নিকট শুনেছি তাঁরা বলেছেন যে, এখানে হিকমত হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সুন্নাত। তিনি বলেন, এখানে হিকমত অর্থ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত ব্যতীত অন্য কিছু করা জায়েজ হবে না। কেননা উহা কিতাবের কথা উল্লেখ করার সাথে সাথেই উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ্‌ তাঁর নিজের আনুগত্যের সাথে সাথে তাঁর রাসূলের আনুগত্য ও অনুসরণ করা মানুষের উপর ফরয করে দিয়েছেন
উপরের আলোচনা দ্বারা বুঝাগেল হাদিস (হিকমত বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথা, কাজ ও সমর্থ) আল্লাহ কর্তৃক নাজিলকৃত। ইহা অস্বীকার করার মত কোর দলিল, হাদিস অস্বীকারকারিদের নেই।

সাধারণত ওহী কত প্রকারঃ
ইসলামের শরীয়তের মুল উত্স হচ্ছে ওহী। এবং দ্বীনে ইলাহীর ভিত্তি শুধুমাত্র আল্লাহর নাজিলকৃত ওহীর উপর প্রতিষ্ঠিত। পুর্বের আলোচনায় জেনেছি নাজিলের ধরণ অনুসারে এই ওহী তিন প্রকার। ইসলামি পন্ডিতেরা  মনে করে শরীয়তের উত্স হিসাবে ওহী দুই প্রকারঃ
১। ওহীয়ে মাতলু (আল-কুরআন)
২। ওহীয়ে গাইরে মাতলু (সুন্নাহ ও হাদীস)।
একটি আল্লাহর কিতাব আল-কুরআন ও অপরটি রসূলের সুন্নাত বা হাদীস। আর উভয়টি ‘ওহী’ একটি হল ওহী মাতলু অর্থাৎ যা তিলাওয়াত করা হয়; অপরটি গাইরি মাতলু অর্থাৎ যা তিলাওয়াত করা হয় না। কিন্তু উভয়টি ‘ওহী’।
কোন প্রকার ওহী পরিবর্তণ পরিবর্ধনের ক্ষমাতা আল্লাহ আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেন নাই।  মহান আল্লাহ বলেন,
ۚ قُلۡ مَا يَكُونُ لِىٓ أَنۡ أُبَدِّلَهُ ۥ مِن تِلۡقَآىِٕ نَفۡسِىٓ‌ۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ‌ۖ إِنِّىٓ أَخَافُ إِنۡ عَصَيۡتُ رَبِّى عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٍ۬ (١٥)
হে মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলে দাও, “নিজের পক্ষ থেকে এর মধ্যে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন করা আমার কাজ নয়৷ আমি তো শুধুমাত্র আমার কাছে যে অহী পাঠানো হয়, তার অনুসারী৷ যদি আমি আমার রবের নাফরমানী করি তাহলে আমার একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশংকা হয়”৷ (সূরা ইউনুস ১০:১৫)।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ (٣) إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡىٌ۬ يُوحَىٰ (٤)
সে (মুহাম্মাদ সাঃ) নিজের খেয়াল খুশীমত কথা বলে না৷ যা তার কাছে নাযিল করা হয়, তা অহী ছাড়া আর কিছুই নয়৷  (সূরা আন-নাজম ৫৩:৩-৪)

কুরআন এবং হাদিসের মধ্যে সম্পর্ক কতটুকু?
০১। কুরআন হল মুল পাঠ আর হাদিস হল দার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।
কুরআন এবং হাদিস দুটিই ইসলামি শরীয়তের মুল উত্স। কুরআনুল কারীমের পর ইসলামের দ্বিতীয় উৎস হাদিস। এতে বর্ণিত আমল, আদেশ, নিষেধ অবশ্য পালনীয়, যদিও কুরআনে তার উল্লেখ নেই। তাই কুরআনের ন্যায় হাদিসও পরিপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দলিল। দ্বিতীয়ত কুরআন কতক মৌলিক ও সাধারণ নীতিমালার সমষ্টি, হাদিস তার সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা প্রদান করেছে।
যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
بِٱلۡبَيِّنَـٰتِ وَٱلزُّبُرِ‌ۗ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّڪۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡہِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ (٤٤)
(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট (ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ) করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে। (সুরা নাহল ১৬:৪৪)

০২। কুরাআন ও হাদিস একই উত্স থেকে নাজিল হয়েছে।
কুরআন জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে সরাসরি নাজিল হয়েছে। আর হাদিস আল্লাহ কতৃর্ক নবীর অন্তরে উদ্ভাসিত কোন বার্তা অথবা স্বপ্ন যোগে জানিয়ে দেওয়া আল্লাহর কোন বাণী। (সুরা শুরা ৪২:৫১)। কুরআনুল করীম আল্লাহ তা’আলার বাণী যা সরাসরি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে জিবরীলের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ওহী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে। অপর পক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ আল্লাহ তা’আলার বাণী না হলেও তা ওহী হতে মুক্ত নয়, বরং তাও ওহী এর অন্তর্ভুক্ত, আল্লাহ তা’আলাই সে স্বীকৃতি দিয়েছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, সে (মুহাম্মাদ সাঃ) নিজের খেয়াল খুশীমত কথা বলে না৷ যা তার কাছে নাযিল করা হয়, তা অহী ছাড়া আর কিছুই নয়৷  (সূরা আন-নাজম ৫৩:৩-৪)
০৩। কুরআন এবং হাদিস উভয়ই শরীয়তের প্রধান দুটি উত্সঃ
শরীয়তের প্রধান ও প্রথম উত্স হল কুরআন আর দ্বিতিয় উত্স হল হাদিস। শরীয়তের দ্বিতিয় উত্স হিসাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যে কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেওয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে এবং মুমিদের জন্য সেই ফয়সালা মানা ফরজ করেছেন। যেমনঃ
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٍ۬ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُ ۥۤ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَـٰلاً۬ مُّبِينً۬ا (٣٦)
অর্থঃ যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই৷ আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়৷ (সুরা আহজাব ৩৩:৩৬)

০৪। কোন কোন হুকুম আহকামে কুরআন ও সুন্নাহর হুবহু মিল পাওয়া যায়।
কুরআনুল করীমেও এসেছে, আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ ١١٠ ﴾ [البقرة: ١١٠]
অর্থঃ তোমরা সালাত কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর। (সূরা বাকারাহ ২:৮৩)।
তিনি আরও বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর [রমাযান মাসের] রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। (বাকারা ২:১৮৩)
তিনি আরও বলেন
, ﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧﴾ [ال عمران: ٩٧]
অর্থঃ আল্লাহর উদ্দেশ্যে (কাবা) গৃহে হজ সম্পাদন করা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের অপরিহার্য কর্তব্য। (ইমরান ৩:৯৭)।

সহিহ হাদিসে বুখারী ও মুসলিম শরিফে এসেছে, যার আলোচ্য বিষয়গুলি হুবহু উক্ত কুরানুল কারিমের আদেশের মত।
যেমনঃ হাদিসে এসেছে,
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بُنِيَ الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلاً
অর্থঃ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি হল পাঁচটি যথাঃ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বুদ বা উপাস্য নেই এবং সাক্ষ্য প্রদান করা যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার রাসূল।  সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং সামর্থ্য বান ব্যক্তির বাইতুল্লায় হজ্জ সম্পদান করা। (সহিহ বুখারি ১/৮, সহিহ সহিহ মুসলিম ১৬)।
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিআল্লাহু আনহু-এর বর্ণিত হাদিসে যেমন, সালাত, যাকাত, সাওম ও হজ্জ মৌলিকভাবে আলোচিত হয়েছে ঠিক তেমনি কুরআনুল করীমের আয়াতসমূহে উক্ত বিষয়গুলি মৌলিকভাবে আলোচিত হয়েছে। সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে এ ক্ষেত্রে হুবহু মিল রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি কুরআনে বিষয়টি সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হয়েছে আর হাদিসে আরও বিস্তারিত করে আলোচনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয় নি। কারন সালাত, যাকাত, সাওম ও হজ্জ এর আলোচনা বিস্তারিতভাবে হাদিসেই আছে।


একই সাথে কুরআন ও হাদিসের অনুসরণ করতে হবে, কুরআন যার প্রমান বহন করেঃ
কুরআনে বর্ণিত কিছু আয়াত উল্লেখ কবর যেগুলোতে মাহান আল্লাহ যেভাবে তার আদেশ পালন করতে বলেছেন ঠিক তেমনিভাবে রাসূল এর আদেশ নিষেধ পালন করতে বলেছেন। এবং তেমনি ভাবে আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ ও অনুকরণ করা ঠিক তেমনিভাবে হাদিসে রাসূলের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধরা, আল্লাহর কিতাবের আদেশ নিষেধ পালন করা ফরয, ঠিক তেমনিভারে আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা ও তিনি যা নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেছেন তার আনুগত্য করাও ফরয। কুরআন ও হাদিস একটি অপরটির সম্পূরক ও অবিচ্ছেদ্য মূল উৎস। দুটির কোনোটিকেই অস্বীকার করা যাবে না। যদি কোনো ব্যক্তি একটিকে স্বীকার করে এবং অপরটিকেও অস্বীকার করল, তবে সে ইসলাম ধর্মের প্রতি মিথ্যারোপ করল। আর এ জাতীয় কাজ সকল উম্মতে মুসলিমার ঈমানদার ও জ্ঞানীদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাফির এবং ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। কুরআন এবং হাদিসের (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথা, কাজ ও সমর্থ) পাশপাশি মেনে চলতে হবে। এমনই আদেশ আল্লাহ দিয়েছের যান উদাহরণ নিম্মে দেয়া হলঃ

০১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য হল আল্লাহরই আনুগত্য।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَ‌ۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَـٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظً۬ا (٨٠)
অর্থঃ যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করলো সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো৷ আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, যাই হোক, তাদের ওপর তো আমি তোমাকে পাহারাদার বানিয়ে পাঠাইনি৷ (সূরা নিসা ৪:৮০)

০২। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য করা ফরজ।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
﴿ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١ ﴾ [الانفال: ١]
“তোমরা যদি মু’মিন হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর”। (সূরা আনফাল ৮:১)

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ وَلَا تَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ وَأَنتُمۡ تَسۡمَعُونَ (٢٠)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো এবং হুকুম শোনার পর তা অমান্য করো না৷ (আনফাল ৮:২০)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَٱحۡذَرُواْ‌ۚ فَإِن تَوَلَّيۡتُمۡ فَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَا عَلَىٰ رَسُولِنَا ٱلۡبَلَـٰغُ ٱلۡمُبِينُ (٩٢)
অর্থঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মেনে চলো এবং (নিষিদ্ধ কাজ থেকে ) বিরত থাকো৷ কিন্তু যদি তোমরা আদেশ অমান্য করো, তাহলে জেনে রাখো, আমার রসূলের প্রতি শুধুমাত্র সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ পৌঁছিয়ে দেবারই দায়িত্ব ছিল৷  (সূরা মায়েদা ৫:৯২)


০৩। আল্লাহ  তাঁর রসূলদের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡفُرُونَ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيۡنَ ٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيَقُولُونَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٍ۬ وَنَڪۡفُرُ بِبَعۡضٍ۬ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيۡنَ ذَٲلِكَ سَبِيلاً (١٥٠)
অর্থঃ যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের সাথে কুফরী করে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে আমরা কাউকে মানবো ও কাউকে মানবো না আর কুফর ও ঈমানের মাঝখানে একটি পথ বের করতে চায়।  (সূরা নিসা ৪:১৫০)

০৪। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধীতা কারিদের লাঞ্ছিত  অপমানিত করা হবে।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحَآدُّونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ كُبِتُواْ كَمَا كُبِتَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ‌ۚ وَقَدۡ أَنزَلۡنَآ ءَايَـٰتِۭ بَيِّنَـٰتٍ۬‌ۚ وَلِلۡكَـٰفِرِينَ عَذَابٌ۬ مُّهِينٌ۬ (٥)
অর্থঃ যারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের বিরোধীতা করে তাদেরকে ঠিক সেইভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হবে যেভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হয়েছে৷  আমি পরিস্কার ও স্পষ্টভাবে সব নির্দেশ নাযিল করেছি৷ কাফেরদের জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি৷ (সূরা মুজাদিলা ৫৮:৫)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ ۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَـٰلِدً۬ا فِيهَا وَلَهُ ۥ عَذَابٌ۬ مُّهِينٌ۬ (١٤)
অর্থঃ আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানি করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করে যাবে, তাকে আল্লাহ আগুনে ফেলে দেবেন৷ সেখানে সে থাকবে চিরকাল, আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা ও অপমানজনক শাস্তি৷ (সূরা নিসা ৪:১৪)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
ذَٲلِكَ بِأَنَّهُمۡ شَآقُّواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ‌ۚ وَمَن يُشَاقِقِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ فَإِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ (١٣)
অর্থঃ এটা করার কারণ, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিদ্রোহ পোষণ করেছে৷ আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিদ্রোহ করে আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷ আর আল্লাহর পাকড়াও বড়ই কঠিন৷  (সূরাআনফাল ৮:১৩)।

০৫ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধীতা করবে তারা কিয়ামতের দিন আফসস করবে।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
وَيَوۡمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيۡهِ يَقُولُ يَـٰلَيۡتَنِى ٱتَّخَذۡتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلاً۬ (٢٧)
অর্থঃ জালেমরা সেদিন নিজেদের হাত কামড়াতে থাকবে এবং বলতে থাকবে, “হায় ! যদি আমি রসুলের সহযোগী হতাম৷  (সুরা ফুরকান ২৫:২৭)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
يَوۡمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمۡ فِى ٱلنَّارِ يَقُولُونَ يَـٰلَيۡتَنَآ أَطَعۡنَا ٱللَّهَ وَأَطَعۡنَا ٱلرَّسُولَا۟ (٦٦)
অর্থঃ যেদিন তাদের চেহারা আগুনে ওলট পালট করা হবে তখন তারা বলবে “হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করতাম”৷  (সুরা আহজাব ৩৩:৬৬)।

০৬। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নতমত আমল না করলে আমল ধ্বংস হয়ে যাবে।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَـٰلَكُمۡ (٣٣)
অর্থঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমল ধ্বংস করো না৷ (সুরা মুহম্মাদ ৪৭:৩৩)।

০৭। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফায়সালার সামনে মুমিনের আর কোন স্বাধীনতা থাকে না।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
﴿ وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ﴾ [الاحزاب : ٣٦]
যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন তখ কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই৷ আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়৷ ( সূরা আহযাব ৩৩:৩৬)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
وَإِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَہُمۡ إِذَا فَرِيقٌ۬ مِّنۡہُم مُّعۡرِضُونَ (٤٨) وَإِن يَكُن لَّهُمُ ٱلۡحَقُّ يَأۡتُوٓاْ إِلَيۡهِ مُذۡعِنِينَ (٤٩) أَفِى قُلُوبِہِم مَّرَضٌ أَمِ ٱرۡتَابُوٓاْ أَمۡ يَخَافُونَ أَن يَحِيفَ ٱللَّهُ عَلَيۡہِمۡ وَرَسُولُهُ ۥ‌ۚ بَلۡ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ (٥٠)
অর্থঃ যখন তাদেরকে ডাকা হয় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে, যাতে রসূল তাদের পরস্পররে মোকদ্দমার ফায়সালা করে দেন তখন তাদের মধ্যকার একটি দল পাশ কাটিয়ে যায়। তবে যদি সত্য তাদের অনুকূল থাকে, তাহলে বড়ই বিনীত হয়ে রসূলের কাছে আসে। তাদের মনে কি (মুনাফিকীর ) রোগ আছে? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে? না তারা ভয় করছে আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন? আসলে তারা নিজেরাই যালেম। (সূরা নুর ২৪:৪৮-৫০)।

০৮। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফায়সালার ব্যাপারে মনে কোন প্রকার সন্দেহ থাকলে সে মুমিন হতে পারবে না।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء : ٦٥]
“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ তারা মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের বিবাদের বিষয় মীমাংসার ভার তোমার উপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর, তোমার ফয়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে, আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে। (সূরা নিসা, ৪:৬৫)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
﴿ إِنَّمَا كَانَ قَوۡلَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ أَن يَقُولُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥١ ﴾ [النور : ٥١]
“মু’মিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মু’মিনদের জওয়াব তো এই হয় যে, তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, আর তারাই সফলকাম”। (সূরা নূর ২৪:৫১)।

০৯। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনুগত্যের করবেনা তারা কাফির।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ‌ۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡكَـٰفِرِينَ (٣٢)
অর্থঃ বলুন, আল্লাহ আনুগত্য প্রকাশ কর এবং তাঁর রসূলদের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তত, তারা যদি বিমুখতা অবলম্ভন করে, তা হলে আল্লাহ কাফিরদের ভালোবাসবেন না। (সূরা আল ইমরান ৩:৩২)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
وَيَقُولُونَ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلرَّسُولِ وَأَطَعۡنَا ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌ۬ مِّنۡہُم مِّنۢ بَعۡدِ ذَٲلِكَ‌ۚ وَمَآ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ (٤٧)
অর্থঃ তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একটি দল (আনুগত্য থেকে ) মুখ ফিরিয়ে নেয় ৷ এ ধরনের লোকেরা কখনোই মু’মিন নয়  (সূরা নুর ২৪:৪৭)।

১০। হাদিসের অনুসরণই একমাত্র নাজাতের অসীলা বা  মুক্তির পথ।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,
قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْۚ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٥٤
অর্থঃ বল, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া (সূরা নূর ২৪:৫৪)।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٣٢
“আল্লাহর ও রাসূলের হুকুম মান্য কর, যাতে তোমরা কৃপা প্রাপ্ত হতে পার”। ( আলে ইমরান, ৩:১৩২)।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ٥٢
অর্থঃ যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তার অবাধ্যতা পরিহার করে চলে তারাই কৃত কার্য। (সুরা নূর ২৪:৫২)।


১১। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধীতাকারি জাহান্নামি।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَ‌ۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا (١١٥)
অর্থঃ কিন্তু ব্যক্তি রসূলের বিরোধীতায় কোমর বাঁধে এবং ঈমানদারদের পথ পরিহার করে অন্য পথে চলে, অথচ তার সামনে সত্য সঠিক পথ সুস্পষ্ট হয়ে গেছে, তাকে আমি সেদিকেই চালাবো যেদিকে সে চলে গেছে এবং তাকে জাহান্নামে ঠেলে দেবো, যা নিকৃষ্টতম আবাস৷  (সূরা নিসা ৪:১১৫)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
وَمَآ ءَاتَٮٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَہَٮٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْ‌ۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ‌ۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ (٧)
অর্থঃ রসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা৷  (সুরা হাসর ৫৯:৭)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
ذَٲلِكَ بِأَنَّہُمۡ شَآقُّواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ‌ۖ وَمَن يُشَآقِّ ٱللَّهَ فَإِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ (٤
অর্থঃ এ হওয়ার কারণ হলো, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের চরম বিরোধিত করেছে৷ যে ব্যক্তিই আল্লাহর বিরোধিতা করে, তাকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ অত্যন্ত কঠোর৷  (সুরা হাসর ৫৯:৪)।


১২।  রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য করলে সঠিক পথ পাওয়া যাবে।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ‌ۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡڪُم مَّا حُمِّلۡتُمۡ‌ۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْ‌ۚ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَـٰغُ ٱلۡمُبِينُ (٥٤)
অর্থঃ বলো, ‘‘ আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের হুকুম মেনে চলো ৷ কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও ৷ তাহলো ভালোভাবে জেনে রাখো, রসূলের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য রাসূল দায়ী এবং তোমাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য তোমরাই দায়ী৷ তাঁর আনুগত্য করলে তোমরা নিজেরাই সৎ পথ পেয়ে যাবে, অন্যথায় পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন হুকুম শুনিয়ে দেয়া ছাড়া রসূলের আর কোন দায়িত্ব নেই ৷’’ (সূরা নুর ২৪:৫৪)।

১৩। মতভেদ দেখাদিলে আল্লাহ ও তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে ফিরে যেতে হবে।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِى ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡ‌ۖ فَإِن تَنَـٰزَعۡتُمۡ فِى شَىۡءٍ۬ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأَخِرِ‌ۚ ذَٲلِكَ خَيۡرٌ۬ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلاً (٥٩)
অর্থঃ হে ঈমানগারগণ ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রসূলের আর সেই সব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী৷ এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও৷ যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান এনে থাকো ৷ এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়েও এটিই উৎকৃষ্ট৷ (সূরা নিসা ৪:৫৯)

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেন,
﴿ وَلَا يَأۡتُونَكَ بِمَثَلٍ إِلَّا جِئۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ وَأَحۡسَنَ تَفۡسِيرًا ٣٣ ﴾ [الفرقان: ٣٣]
“তোমার কাছে তারা এমন কোন সমস্যাই নিয়ে আসে না, যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি। (সূরা ফরকান ২৫:৩৩)
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
﴿ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡۖ وَٱصۡبِرُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ٤٦ ﴾ [الانفال: ٤٦]
আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না, তাহলে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা দেখা দেবে এবং তোমাদের প্রতিপত্তির দিন শেষ হয়ে যাবে৷ সবরের পথ অবলম্বন করো, অবশ্যি আল্লাহ সবরকারীদের সাথে রয়েছেন৷ (সূরা আনফাল ৮:৪৬)।

১৪। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য করলে সম্মানজনক রিযিকের ব্যবস্থা করেদিবেন।  
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
۞ وَمَن يَقۡنُتۡ مِنكُنَّ لِلَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتَعۡمَلۡ صَـٰلِحً۬ا نُّؤۡتِهَآ أَجۡرَهَا مَرَّتَيۡنِ وَأَعۡتَدۡنَا لَهَا رِزۡقً۬ا ڪَرِيمً۬ا (٣١)
অর্থঃ আর তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে এবং সৎকাজ করবে তাকে আমি দুবার প্রতিদান দেবো এবং আমি তার জন্য সম্মানজনক রিযিকের ব্যবস্থা করে রেখেছি৷  (সুরা আহজাব ৩৩:৩১)।

 ১৫। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই মুমিন জীবনের একমাত্র আদর্শ
একজন মুমিনের জন্য রাসূল সা. এর জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আল্লাহর রাসূলই হল একজন মুমীনের অনুকরনীয় আদর্শ।
لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [الاحزاب : ٢١]
অর্থঃ তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”। (সূরা আনফাল ৮:২৪)।
﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [القلم: ٤]
অর্থঃ  তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা কলম ৬৮:৪)।

১৬। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্যের জন্য আল্লাহর নিকট আবেদন করা।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
رَبَّنَآ ءَامَنَّا بِمَآ أَنزَلۡتَ وَٱتَّبَعۡنَا ٱلرَّسُولَ فَٱڪۡتُبۡنَا مَعَ ٱلشَّـٰهِدِينَ (٥٣)
অর্থঃ হে আমাদের মালিক! তুমি যে ফরমান নাযিল করেছ, আমরা তা মেনে নিয়েছি এবং রসূলের আনুগত্য কবুল করে নিয়েছি৷ সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে আমাদের নাম লিখে নিয়ো৷’’  ( সূরা আল ইমরান ৩:৫৩)।
১৭। আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ।
আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে, রাসূলের ইত্তেবার কোন বিকল্প নাই। রাসূলের ইত্তেবার মাধ্যমেই আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]
“বলে দাও,‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমার অনুসরণ কর আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাসমূহ ক্ষমা করবেন,বস্তুত, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল ইমরান ৩:৩১)।


১৮। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনা ফরজ, তাই  আনুগত্যের সাথে তার হাদিস (কথা, কাজ ও সম্মতি) মান্য করাও ফরজ।  
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
(٢٧) يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَءَامِنُواْ بِرَسُولِهِۦ يُؤۡتِكُمۡ كِفۡلَيۡنِ مِن رَّحۡمَتِهِۦ وَيَجۡعَل لَّڪُمۡ نُورً۬ا تَمۡشُونَ بِهِۦ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ‌ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌ۬ رَّحِيمٌ۬ (٢٨)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রসুল (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওপর ঈমান আনো৷ তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে দ্বিগুণ রহমত দান করবেন, তোমাদেরকে সেই জ্যোতি দান করবেন যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে এবং তোমাদের ত্রুটি -বিচ্যুতি মাফ করে দেবেন৷ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷ (সুরা হাদিদ ৫৭:২৮)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেনঃ
وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۤ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ هُمُ ٱلصِّدِّيقُونَ‌ۖ وَٱلشُّہَدَآءُ عِندَ رَبِّہِمۡ لَهُمۡ أَجۡرُهُمۡ وَنُورُهُمۡ‌ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَڪَذَّبُواْ بِـَٔايَـٰتِنَآ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡجَحِيمِ (١٩)
অর্থঃ যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাই তাদের রবের কাছে ‘সিদ্দীক’  ও ‘শহীদ’  বলে গণ্য৷ তাদের জন্য তাদের পুরস্কার ও ‘নূর’ রয়েছে৷ আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতকে অস্বীকার করেছে তারাই দোযখের বাসিন্দা৷ (সুরা হাদিদ ৫৭:১৯)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
(٦) ءَامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَأَنفِقُواْ مِمَّا جَعَلَكُم مُّسۡتَخۡلَفِينَ فِيهِ‌ۖ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَأَنفَقُواْ لَهُمۡ أَجۡرٌ۬ كَبِيرٌ۬ (٧)
অর্থঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং ব্যয় কর সে জিনিস যার প্রতিনিধিত্বমূলক মালিকানা তিনি তোমাদের দিয়েছেন৷  তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে ও অর্থ -সম্পদ খরচ করবে তাদের জন্য বড় প্রতিদান রয়েছে৷  (সুরা হাদিদ ৫৭:৭)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
‌ۚ ذَٲلِكَ لِتُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ‌ۚ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِ‌ۗ وَلِلۡكَـٰفِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ (٤)
অর্থঃ তোমাদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এ জন্য যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান আনো৷ এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত ‘হদ’৷ কাফেরদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি৷  (সুরা মুজাদিলা ৫৮:৩-৪)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَـٰهِدُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٲلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ‌ۚ ذَٲلِكُمۡ خَيۡرٌ۬ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ (١١)
অর্থঃ তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো এটাই তোমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জান৷ (সুরা সফ ৬১:১১)

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ ءَامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَٱلۡكِتَـٰبِ ٱلَّذِى نَزَّلَ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ وَٱلۡڪِتَـٰبِ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ مِن قَبۡلُ‌ۚ وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱللَّهِ وَمَلَـٰٓٮِٕكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأَخِرِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَـٰلاَۢ بَعِيدًا (١٣٦)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! ঈমান আনো  আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলের প্রতি, আল্লাহ তাঁর রসূলের ওপর যে কিতাব নাযিল করেছেন তার প্রতি এবং পূর্বে তিনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার প্রতি ৷ যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাবর্গ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রসূলগণ ও পরকালের প্রতি কুফরী করলো সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহুদূর চলে গেলো৷  (সূরা নিসা ৪:১৩৬)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
إِنَّآ أَرۡسَلۡنَـٰكَ شَـٰهِدً۬ا وَمُبَشِّرً۬ا وَنَذِيرً۬ا (٨) لِّتُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُڪۡرَةً۬ وَأَصِيلاً (٩)
অর্থঃ হে নবী, আমি তোমাকে সাক্ষ্যদানকারী, সুসংবাদদানকারী এবং সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি,যাতে হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আন, তাঁকে সাহায্য কর, তাঁর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দেখাও এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর৷ (সুরা ফাতহা ৪৮:৯)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَـٰهَدُواْ بِأَمۡوَٲلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ‌ۚ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ هُمُ ٱلصَّـٰدِقُونَ (١٥)
অর্থঃ প্রকৃত ঈমানদার তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং এ ব্যাপারে পরে আর কোন সন্দেহ পোষণ করেনি৷ তারপর প্রাণ ও অর্থ-সম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে৷ তারাই সত্যবাদী৷  (সুরা হুজুরাত ৪৯:১৫)

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
قَالَتِ ٱلۡأَعۡرَابُ ءَامَنَّا‌ۖ قُل لَّمۡ تُؤۡمِنُواْ وَلَـٰكِن قُولُوٓاْ أَسۡلَمۡنَا وَلَمَّا يَدۡخُلِ ٱلۡإِيمَـٰنُ فِى قُلُوبِكُمۡ‌ۖ وَإِن تُطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ لَا يَلِتۡكُم مِّنۡ أَعۡمَـٰلِكُمۡ شَيۡـًٔا‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ۬ رَّحِيمٌ (١٤)
অর্থঃ এ বেদুইনরা বলে, “আমরা ঈমান এনেছি” তাদের বলে দাও তোমরা ঈমান আন নাই৷ বরং বল, আমরা অনুগত হয়েছি৷ ঈমান এখনো তোমাদের মনে প্রবেশ করেনি৷ তোমরা যদি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের পথ অনুসরণ করো তাহলে তিনি তোমাদের কার্যাবলীর পরস্পর দানে কোন কার্পণ্য করবেন না৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুরা হুজুরাত ৪৯:১৪)।।

১৯। যারা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আহবানে সাড়া দিবে তাদের জন্য রয়েছে বিরাটপুরস্কার।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ هُمُ ٱلۡفَآٮِٕزُونَ (٥٢) ۞
অর্থঃ আর সফলকাম তারাই যারা আল্লাহ ও রসূলের হুকুম মেনে চলে এবং আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকে ৷  (সূরা নুর ২৪:৫২)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
ٱلَّذِينَ ٱسۡتَجَابُواْ لِلَّهِ وَٱلرَّسُولِ مِنۢ بَعۡدِ مَآ أَصَابَہُمُ ٱلۡقَرۡحُ‌ۚ لِلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ مِنۡہُمۡ وَٱتَّقَوۡاْ أَجۡرٌ عَظِيمٌ (١٧٢)
অর্থঃ আহত হবার পরও যারা আল্লাহ ও রসূলের আহবানে সাড়া দিয়েছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ-নেককার ও মুত্তাকী তাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান৷ আর যাদেরকে। ( সূরা আল ইমরান ৩:১৭২)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَلَمۡ يُفَرِّقُواْ بَيۡنَ أَحَدٍ۬ مِّنۡہُمۡ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ سَوۡفَ يُؤۡتِيهِمۡ أُجُورَهُمۡ‌ۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورً۬ا رَّحِيمً۬ا (١٥٢)
অর্থঃ বিপরীত পক্ষে যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদেরকে মেনে নেয় এবং তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না, তাদেরকে আমি অবশ্যি তা পুরস্কার দান করবো৷  আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷ (সূরা নিসা ৪:১৫২)

আল্লাহ তা’আলা বলেন,
تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣
অর্থঃ এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার  রাসূলের হুকুম অনুযায়ী চলবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে এবং এটা বিরাট সাফল্য”। ( নিসা, আয়াত ৪:১৩)।

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩
অর্থঃ  যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, সিদ্দিক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন, তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! (নিসা ৪:৬৯)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
لَّيۡسَ عَلَى ٱلۡأَعۡمَىٰ حَرَجٌ۬ وَلَا عَلَى ٱلۡأَعۡرَجِ حَرَجٌ۬ وَلَا عَلَى ٱلۡمَرِيضِ حَرَجٌ۬‌ۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّـٰتٍ۬ تَجۡرِى مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡہَـٰرُ‌ۖ وَمَن يَتَوَلَّ يُعَذِّبۡهُ عَذَابًا أَلِيمً۬ا (١٧)
অর্থঃ যদি অন্ধ, পংগু ও রোগাক্রান্ত লোক জিহাদে না আসে তাহলে কোন দোষ নেই৷  যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে সেসব জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যেসবের নিম্নদেশে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহমান থাকবে৷ আর যে মুখ ফিরিয়ে থাকবে আল্লাহ তাকে মর্মান্তিক আযাব দেবেন৷ (সুরা ফাতহা ৪৮:১৭)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِ‌ۚ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّـٰتٍ۬ تَجۡرِى مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَا‌ۚ وَذَٲلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ (١٣)
অর্থঃ এগুলো আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা ৷ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত্য করবে, তাকে আল্লাহ এমন বাগীচায় প্রবেশ করাবেন, যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল৷ এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য ৷   (সূরা নিসা ৪:১৩)

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ لَعَلَّڪُمۡ تُرۡحَمُونَ (٥٦) لَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مُعۡجِزِينَ فِى ٱلۡأَرۡضِ‌ۚ وَمَأۡوَٮٰهُمُ ٱلنَّارُ‌ۖ وَلَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ (٥٧)
অর্থঃ নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রসূলের আনুগত্য করো, আশা করা যায়, তোমাদের প্রতি করুণা করা হবে ৷ (সূরা নুর ২৪:৫৬)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَـٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا (٧١)
অর্থঃ আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ ঠিকঠাক করে দেবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ মাফ করে দেবেন৷ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে সে বড় সাফল্য অর্জন করে৷  আহজাব ৩৩:৭১


উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, হিদায়াত ও রহমত একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার মধ্যেই নিহিত। কুরআন ষ্পষ্ট ঘোষণা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য কর। এখন যদি কেউ রাসূলের আনুগত্য না করে, তবে সে কি কুরআনের হুকুম স্বীকার করল, না অস্বীকার করল। রাসূলের আনুগত্য বা হাদিস অস্বীকার করার অর্থই হল কুরআন অস্বীকার করা। তাহলে শুধু কুরআন মানা ধোকা ছাড়া কিছুই নয়।
সুতরাং, তার
হাদিসের অনুসরণ ও তদানুযায়ী আমল করা ছাড়া হিদায়াত লাভ করা কি ভাবে সম্ভব? অথবা এ কথা বলা যে, তার সুন্নতের কোনো বিশুদ্ধতা নাই অথবা তার সুন্নতের উপর ভরসা করা যাবে না, তার হিদায়াত কিভাবে অর্জিত হবে?

হাদিসের আলোকেঃ
হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামী শরীয়তের অকাট্য দলীল কুরআনের আলোকে প্রমাণিত হওয়ার পর এ বিষয়ে হাদিসের অবতারণার প্রয়োজন হয় না বরং ইসলামের কোন বিধান প্রমাণের জন্য একটি বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট দলীলই যথেষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু পাঠক সমাজের কাছে বিষয়টি আরও স্পষ্ট ও আলোকিত হওয়ার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামী শরীয়তের অকাট্য দলীলের” এর হাদিস থেকে প্রমাণের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নিম্নে উপস্থাপন করা হল:
০১। উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি‘ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অচিরেই তোমাদের মধ্যকার কোনো ব্যক্তি তার গদি আঁটা আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকাবস্থায় তার নিকট আমার নির্দেশিত কোনো কর্তব্য বা নিষেধাজ্ঞা পৌঁছবে, তখন সে বলবে, আমি অবহিত নই। আমরা যা আল্লাহর কিতাবে পাবো শুধু তারই অনুসরণ করবো।(আবু দাউদ ৪৫০৫, তিরমিযী, হাকিম। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান সহীহ। ইমাম হাকিম ও যাহাবী একে শাখইনের শর্তে সহীহ বলেছেন)।

০২। আবূ নাজীহ ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত ক’রে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।’’ (আবু দাঊদ ৪৬০৯, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪২)
আর নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে (নিয়ে যায়)।’’
০৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাত যেতে স্বীকার করবে।’’ (বুখারী ৭২৮০)
০৪। আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ। ‘হওয’ (কাওসারে) আমার নিকট অবতরণ না করা পর্যন্ত তা বিচ্ছিন্ন হবে না।’’ (হাকেম ৩১৯)

০৫।  ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, বিদায়ী হজ্জে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের মাঝে খোতবা (ভাষণ) দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘‘শয়তান এ বিষয়ে নিরাশ হয়ে গেছে যে, তোমাদের এই মাটিতে তার উপাসনা হবে। কিন্তু এতদ্ব্যতীত তোমরা যে সমস্ত কর্মসমূহকে অবজ্ঞা কর, তাতে তার আনুগত্য করা  হবে—এ নিয়ে সে সন্তুষ্ট। সুতরাং তোমরা সতর্ক থেকো! অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি; যদি তা দৃঢ়তার সাথে  ধারণ করে থাকো তবে কখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না; আর তা হল আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ (কুরআন ও হাদীস)’’ (হাকেম ৩১৮, সহীহ তারগীব ৩৬)

০৬। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রত্যেক কর্মের উদ্যম আছে এবং প্রত্যেক উদ্যমের আছে নিরুদ্যমতা। সুতরাং যার নিরুদ্যমতা আমার সুন্নাহর গণ্ডির ভিতরেই থাকে সে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় এবং যার নিরুদ্যমতা এ ছাড়া অন্য কিছুতে (সুন্নাত বর্জনে) অতিক্রম করে সে ধ্বংস হয়ে যায়।’’ (ইবনে আবী আসেম, ইবনে হিব্বান, আহমাদ ৬৯৫৮, ত্বাহাবী, সহীহ তারগীব ৫৬)
০৭। জাবের (রাঃ) বলেন, একদা উমার (রাঃ) এর হাতে একটি পাতা ছিল, যার মধ্যে তাওরাতের কিছু অংশ লিখা ছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে রাগাম্বিত হয়ে তাঁকে বললেন, ‘‘আমার ব্যাপারে কি কোন সন্দেহ আছে হে ইবনে খাত্ত্বাব? আমি কি শুভ্র ও নির্মল শরীয়ত নিয়ে আগমন করিনি? যদি আমার ভাই মূসা জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তাঁর অন্য কোন এখতিয়ার ছিল না।’’ অন্য বর্ণনামতে উমার (রাঃ) তাঁর নিকট এসে বললেন, আমরা ইয়াহুদীদের নিকট কিছু এমন কথা শুনি যা আমাদেরকে ভালো লাগে। আপনার কী রায়, তার কিছু লিখে নেব কি? তা শুনে তিনি বললেন, ‘‘তোমরাও কি নির্বিচারে সব কিছু মেনে নিতে চাও, যেমন ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা মেনে নিয়েছে? যদি মূসা জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তাঁর অন্য কোন এখতিয়ার ছিল না।’’ (আহমাদ ১৫১৫৬, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৬)

০৮। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতঃপর নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো দীনে (মনগড়াভাবে) নতুন জিনিস সৃষ্টি করা এবং (এ রকম) সব নতুন সৃষ্টিই গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)।(সহীহ : মুসলিম ৮৬৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ১০, সহীহ আত্ তারগীব ৫০, বুলূগুল মারাম ৪৪৮, দারেমী ২০৬, ইবনু মাজাহ্ ৪৫, নাসায়ী ১৫৭৮, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ১৭৮৫,মিসকাত-১৪১)।

০৯। জাবের (রাঃ) বলেন, একদিন একদল ফিরিশতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ফিরিশতাগণ একে অপরকে বলতে লাগলেন, ‘তোমাদের এই বন্ধুর একটি উপমা আছে, অতএব তোমরা সেটি বর্ণনা কর।’ তখন তাঁদের কেউ বললেন, ‘তিনি তো ঘুমিয়ে আছেন।’ তাঁদের কেউ বললেন, ‘তাঁর চোখে ঘুম থাকলেও তাঁর অন্তর জাগ্রত।’ তখন তাঁরা বললেন, ‘তাঁর উপমা হল; এক ব্যক্তি একটি গৃহ নির্মাণ করে খাবারের দস্তরখানা প্রস্তুত করে লোকদেরকে দাওয়াত দিয়ে আনার জন্য একজন আহবায়ককে প্রেরণ করল। অতঃপর যে ঐ আহবায়কের আহবানে সাড়া দিল, সে ঐ গৃহে প্রবেশ করে সেখানে রাখা খাবার খেতে পেল। আর যে আহবায়কের আহবানে সাড়া দিল না, সে ঐ গৃহে প্রবেশ করে সেখানে রাখা খাবার খেতে পেল না।’ অতঃপর তাঁরা আপোসে বললেন, ‘তোমরা এই উপমার তাৎপর্য বলে দাও, যাতে তিনি বুঝতে পারেন।’ এবারও তাঁদের কেউ বললেন, ‘তিনি তো ঘুমিয়ে আছেন।’ তাঁদের কেউ বললেন, ‘তাঁর চোখে ঘুম থাকলেও তাঁর অন্তর জাগ্রত।’ তখন তাঁরা বললেন, ‘ঐ গৃহ হল জান্নাত। ঐ আহবায়ক হলেন মুহাম্মাদ। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের আনুগত্য করবে, সে আসলে আল্লাহর আনুগত্য করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের নাফরমানি করবে, সে আসলে আল্লাহরই নাফরমানি করবে। আর মুহাম্মদ হলেন মানুষের (মুমিন ও কাফেরের) মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী (মানদণ্ড)। (বুখারী ৭২৮১, মিশকাত ১৪৪)

১০। আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার এবং যে জিনিস দিয়ে আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল এই যে, এক ব্যক্তি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট এসে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার এই দু’ চোখে একদল শত্রুসৈন্য দেখে আসছি এবং আমি হচ্ছি তোমাদের জন্য একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। সুতরাং তোমরা (বাঁচার জন্য) তাড়াতাড়ি কর, তাড়াতাড়ি কর।’ এ কথা শুনে তার সম্প্রদায়ের কিছু লোক তার কথা মেনে নিয়ে রাতারাতি পলায়ন করল এবং এতে তারা ধীরে-সুস্থে যেতে পারল, আর (শত্রুর কবল থেকে) মুক্তিও পেল। পক্ষান্তরে অন্য একদল লোক তার সেই কথাকে মিথ্যা মনে করল। ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে রাত্রিবাস করল। কিন্তু ভোর হতেই শত্রুসৈন্য তাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিল। এই হল সেই ব্যক্তির উদাহরণ, যে আমার আনুগত্য করে আমি যা আনয়ন করেছি তার অনুসরণ করে এবং সেই ব্যক্তির উদাহরণ, যে আমার অবাধ্য হয় এবং আমার আনীত সত্য বিষয়কে মিথ্যায়ন করে।’’ (বুখারী ৬৪৮২, মুসলিম ৬০৯৪, মিশকাত ১৪৮)

১১।  ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে।  (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৪)
জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমি বলব, ‘হে প্রভু! এরা তো আমার সঙ্গী।’ কিন্তু আমাকে বলা হবে, ‘এরা আপনার (মৃত্যুর) পর (দ্বীনে) কী কী নতুন নতুন রীতি আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না।’ (এ কথা শুনে) আমি বলব–যেমন নেক বানদা (ঈসা (আঃ)) বলেছিলেন, ‘‘যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেÿক। আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা মায়েদা ১১৭) অতঃপর আমাকে বলা হবে যে, ‘নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল।’ (বুখারী ৩৩৪৯)
১২। আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পড়লেনঃ ‘‘তিনিই আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, যার কিছু সংখ্যক আয়াত মুহকাম … থেকে কিন্তু ‘‘জ্ঞানী ছাড়া কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না।’’ (৩ঃ ৭ পর্যন্ত)। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘যখন তোমরা দেখবে সেসব লোককে যারা মুতাশাবিহ আয়াতের অনুসরণ করছে, তখন মনে করবে, এরাই সেসব লোক আল্লাহ যাদের নাম নিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাকবে। (বুখারী, মুসলিম)।
১৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, সেই সত্তার কসম! এই উম্মতের যে কেউ—ইয়াহুদী হোক বা খ্রিস্টান আমার কথা শুনবে, অতঃপর যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান আনবে না, সেই জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মুসলিম ৪০৩)

১৪। জনৈক মহিলা ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বলল, আপনারা নাকি বলেন, “যে নারীরা (হাত বা মুখমন্ডলে) খোদাই করে নকশা করে এবং যারা নকশা করিয়ে নেয়, যে নারীরা ভ্রুর চুল উঠিয়ে নেয় এবং যে নারীরা দাঁত সুন্দর করার জন্যে তাতে ফাঁক সৃষ্টি করে এদের সবাইকে আল্লাহ্‌ লানত করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, সত্য কথা। মহিলাটি বলল, আমি আল্লাহর কিতাব প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করেছি, কিন্তু কোথাও তো একথা পাই নি? ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, তুমি যদি কুরআন পড়তে তবে তা পেতে। তুমি কি পড়নি আল্লাহর বাণী:
ومَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا
“রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।” (হাশর ৫৯:৭)। সে বলল, একথা তো কুরআনে আছে। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে উক্ত কথা বলতে শুনেছি। (বুখারী ও মুসলিম)।
অতএব যারা কুরআন মানার দাবী করবে, তাদের হাদীছ না মেনে উপায় নেই। হাদীছ মানলেই কুরআন মানা হবে এবং সত্যিকার অর্থে তারা কুরআনের অনুসারী হবে এবং প্রকৃত মুসলমান হবে।

কুরআন নির্দেশ যথাযথভাবে মানতে হলে হাদিসের বিকল্প নেই।
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি হল পাঁচটি যথাঃ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বুদ বা উপাস্য নেই এবং সাক্ষ্য প্রদান করা যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার রাসূল।  সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং সামর্থ্য বান ব্যক্তির বাইতুল্লায় হজ্জ সম্পদান করা। (সহিহ বুখারি: ৮; সহিহ মুসলিম: ১৬)।
ইসলামের এই পাঁচটি হল ইবাদতের মুল ভিত্তি, যার উপর ইসলাম দাড়িয়ে আছে। এর কোন একটি আমল সঠিকভাবে পালন করতে হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহর বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানা ছাড়া আমল করা কখনও সম্ভব নয়।

ক। সালাতঃ সালাত মুসলমানের উপর সবচেয়ে বড় ফরয ইবাদত। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
وَقَرۡنَ فِى بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَـٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّڪَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۚ ۥۤ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنڪُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرً۬ا (٣٣)
অর্থঃ নিজেদের গৃহ মধ্যে অবস্থান করো। এবং পূর্বের জাহেলী যুগের মতো সাজসজ্জা দেখিয়ে বেড়িও না৷  নামাযকায়েম করযাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো৷ আল্লাহ তো চান, তোমাদের নবী পরিবার থেকে ময়লা দূর করতে এবং তোমাদের পুরোপুরি পাক-পবিত্র করে দিতে৷ (সূরা আহযাব ৩৩:৩৩)।
স্বজ্ঞানে সালাত ত্যাগ কারি ফাসিক ইহাতে কারো দ্বিমত নেই। তবে অনেক বিদ্বান সালাত ত্যাগ কারি কে কাফির বলেছেন। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হাদিস বা সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ ছাড়া আদায় করা সম্ভব নয়। কুরআনে শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত (মুজমাল) ভাবে সালাত কায়েমের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপর পক্ষে হাদিস বিস্তারিত (মুফাস্সাল) ভাবে বর্ণনা দিয়েছে।
হাদিস অস্বীকার করলে নামজ সম্পর্কে নিচের প্রশ্নেন কোন উত্তর আপনার কাছে নেই। যেমনঃ সালাত কার উপর ফরজ? কোন কোন সময় আদায় করতে হবে?  ফরয সালাতের সময় কখন? যোহরের সময় কখন, আসর, মাগরিব ও এশার সময় কখন?  দিনে-রাতে কত বার, কত রাকাত, কি পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে? কি কারনে সালাত বাতিল হয়। সুন্নাত সালাত কি নিয়মে? রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ কি নিয়মে এবং কখন কোন কিরাত ও দু’আ পাঠ করতে হবে ইত্যাদি কোন কিছুই কুরআনে উল্লেখ হয়নি।

সালাতের জন্যে কি পদ্ধতিতে কি শব্দ উচ্চারণ করে আহ্বান করতে হবে? মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার জানাযা সালাত কি পড়তে হবে? জুমার সালাত কত রাকাত? খুদবা কে কখন দিবে? দু’ঈদের সালাত বলতে কি কিছু আছে? তাতে অতিরিক্ত তাকদির কখন দিতে হয়? কত রাকাত?  এগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীছ থেকেই জানতে হবে। এমন কি সালাত আদায়ের ব্যাপারে তাকে সরাসরি অনুসরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলেছেন, “তোমরা ঠিক সেই নিয়ম পদ্ধতিতে সালাত সম্পাদন কর, যেভাবে আমাকে সম্পাদন করতে দেখেছ।” (বুখারী)। সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানি তিনি জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এর নিকট থেকে সালাত ও সালাতের সময় সম্পর্কে জ্ঞান নিয়েছেন হাতে কলমে, যার কোন কিছুই কুরআনে উল্লেখ নেই।
অতএব সুন্নাহ ব্যতীত কুরআন মেনে চলা অসম্ভব, এ জন্যই অনেক ইসলামী মনীষীগণ ইসলাম জানা ও মানার ক্ষেত্রে কুরআনের আগে সুন্নাহকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যার বাস্তব দৃষ্টান্ত হল সাহাবায়ে কিরামের উপদেশাবলি, ইমাম আল খতীব আল বাগদাদী স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন, একদা সাহাবী ঈমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু কিছু ব্যক্তিসহ (শিক্ষার আসরে) বসে ছিলেন। শ্রোতাদের মধ্য হতে একজন বলে ফেললেন, আপনি আমাদেরকে কুরআন ছাড়া অন্য কিছু শোনাবেন না। তিনি (সাহাবী) বললেন, নিকটে আস, অতঃপর বললেন, তুমি কি মনে কর, যদি তোমাদেরকে শুধু কুরআনের উপরই ছেড়ে দেয়া হয়? তুমি কি যোহরের সালাত চার রাকা’আত, আসর চার রাকাত, মাগরিব তিন রাক’আত, প্রথম দুই রাক’আতে কিরাত পাঠ করতে হয় ইত্যাদি সব কিছু কুরআনে খুঁজে পাবে? অনুরূপভাবে কাবার তাওয়াফ সাত চক্কর এবং সাফা মারওয়ার তাওয়াফ ইত্যাদি কি কুরআনে খুঁজে পাবে? অতঃপর বললেন: হে মানব সকল! তোমরা আমাদে ([সাহাবীদের) নিকট হতে সুন্নাহর আলোকে এ সব বিস্তারিত বিধি-বিধান জেনে নাও। আল্লাহর কসম করে বলছি! তোমরা যদি সুন্নাহ মেনে না চল, তাহলে অবশ্যই ভ্রষ্ট হয়ে যাবে।”


খ।  যাকাত: যাকাত ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, (وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ ) তোমরা যাকাত আদায় কর। ( সূরা বাকারা ২:৮৩)।
আল্লাহ তা‘আলা এখানে শুধু যাকাত আদায় এর মূল বিধান সংক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণনা করেছেন। এর বিস্তারিতভাবে বিবরণ এসেছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে। হাদিস অস্বীকারগন কোন ক্রমেই যাকাতের বিধানের কোন বিবরণ হাদিসের সাহায্য ছাড়া পেশ করতে পারবেনা। যেমনঃ কোন ধরণের সম্পদ যাকাত দিতে হবে?  কি পরিমাণ সম্পদ হল কি পরিমা যাকাত দিতে হবে? বছরে কত বার যাকাত দিতে হবে? নিজের উত্পাদিত ফসলের যাতাত হবে  কি? হলে কি ফসলের পরিমাণ যাকাত বের করতে হবে? গৃহ পালিত পশু যেমনঃ উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির যাকাত আছে কি? স্বর্ণ-রৌপ্য বা অন্য কোন অলংকারের যাকাতের  বিধান কি? হিসাব না করে মোটা অংকের টাকা দান করলেই যাকাত আদায় হবে? রমাযান শেষে যাকাতুল ফিতর দিতে হবে কি না? তার পরিমান কত? যাকে দিবে? ইত্যাদি শত শত প্রশ্নের উত্তর আছে হাদিসে। উদাহরণের জন্য একটা হাদিস উল্লখ করছি যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতের বিভিন্ন সম্পদের নিসাবের পরিমান সম্পর্কে বলেছেন,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ مِنْ التَّمْرِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنْ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ ذَوْدٍ مِنْ الْإِبِلِ صَدَقَةٌ  صحيح البخاري
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াসাকের কম খেজুরে জাকাত নেই। পাঁচ উকিয়া এর কম রূপাতে জাকাত নেই। পাঁচ যাউদ এর কম উটে জাকাত নেই। (বুখারী ও মুসলিম)।
এই একটি হাদিসে যাকাতের নিসাব সম্পর্কে কয়েকটি ধারণা পাওয়া গেল। এভাবে কুরআনের হুকুমকে হাদিস ব্যাখ্যা করে উম্মতের আমল কে যথাযথ পালনের ব্যাবস্তা করছে।
গ। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡڪُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِڪُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ (١٨٣)
অর্থঃ হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল ৷ এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে। (সুরা বাকারা ২:১৮৩)।
আমরা জানি প্রতিটি হাদিস গ্রন্থে সিয়ামের উপর আলাদ আলাদা অধ্যায় রচনা করা হইয়াছে। সেখানে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, আর কুরআনে শুধু সংক্ষিপ্ত বিধানাবলী বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু রমাযান মাস কিভাবে শুরু হবে? সাওম অবস্থায় কি কি নিষিদ্ধ? ফরয সাওমের নিয়ম কি? নফল সাওমের নিয়ম কি? ইত্যাদি বিষয়গুলি বিস্তারিত আলোচনা  কুরআনে নেই। পক্ষান্তরে সাওম সম্পর্কীয় যাবতীয় বিধি-বিধান যেমন- চাঁদ দেখেই সাওম শুরু করতে হবে আবার চাঁদ দেখেই সাওম শেষ হবে, এবং কি করলে সাওম সুন্দর হয়, কি করলে নষ্ট হয় ইত্যাদি বিষয়গুলি সবিস্তারে সুন্নায় আলোচনা করা হয়েছে।

ঘ। হজ্জ্ব পালন  করা একটি ফরজ আমল্ আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلاً۬‌ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ عَنِ ٱلۡعَـٰلَمِينَ (٩٧)
অর্থঃ মানুষের মধ্য থেকে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ রাখে, তারা যেন এই গৃহের হজ্জ সম্পন্ন করে, এটি তাদের ওপর আল্লাহর অধিকার ৷ আর যে ব্যক্তি এ নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন৷ (সুরা আল ইমরান ৩:৯৭)।
হজ্জের বিধান কুরআন মাজিদে সংক্ষিপ্ত ভাবে এসেছে, এর বিস্তারিত বর্ণনা যেমনঃ জীবনে কয়বার হজ্জ ফরয? ইহরাম কখন, কোথায় কিভাবে বাধতে হবে? কাবা ঘরের তওয়াফ কিভাবে, কয়বার করতে হবে? কিভাবে কতবার সাফা মারোওয়া সাঈ করতে হবে। আরাফাতের ময়দানে কখন ও কতক্ষন অবস্থান করবে, সেখানের কি আমল করতে হবে? মুজদালিফায় কি দিনের বেলায় না রাতের বেলায় অবস্থান করবে? মিনার আমল কি? সেখানে কত দির থাকতে হবে? হজ্জের সাথে কুরবানী ও মাথার চুল কাটার সম্পর্ক কি? ইত্যাদি ইত্যাদি শত শত প্রশ্নের একমাত্র সমাধান হাদিস আর হাদিস। কুরআন মাজিদে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়নি বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে সকল ক্ষেত্রের সকল সুন্নাত, ওয়াজিব ও ফরযসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের সকল কর্মক্ষেত্রে সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন: لتأخُذُوْا عَنِّى مَنَاسِكَكُم “তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হজ্জের বিধি বিধান শিখে নাও।
ইসলামের মৌলিক ইবাদাত ছাড়াও এমন অনেক ইবাদত আছে যা কুরআনের নির্দোশ কিন্তু হাদিসের সাহায্য ছাড়া জানা যায় না বা পালন করা যায় না।
যেমনঃ
চুরির শাস্তিঃ  চুরির শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقۡطَعُوٓاْ أَيۡدِيَهُمَا جَزَآءَۢ بِمَا كَسَبَا نَكَـٰلاً۬ مِّنَ ٱللَّهِ‌ۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ۬ (٣٨)
অর্থঃ চোর-পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন, উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কর্মফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ৷ আল্লাহর শক্তি সবার ওপর বিজয়ী এবং তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ৷ ( সূরা আল-মায়িদাহ ৫:৩৮)।
চোরের হাত করতে হবে কুরআনে আছে। কিন্তু কি পরিমাণ সম্পদ চুরি করলে হাত কাটা যাবে। আর কি পরিমাণে হাত কাটা যাবে না, তার বিবরণ হাদীছ থেকে নিতে হবে। কেননা ১ টাকা চুরি করা আর ১ লক্ষ টাকা চুরি করার অপরাধ কিন্তু একই। উভয় ক্ষেত্রে ব্যক্তি চোর সাব্যস্ত হবে। কিন্তু শাস্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই এক সমান হবে না। তাছাড়া হাত কাটলে কি পরিমাণ কাটতে হবে? কব্জি থেকে, না কনুই থেকে, না সম্পূর্ণ হাত কাটতে হবে? না কি কুরআনে বর্ণিত দুহাত কাটতে হবে। দু’হাত নয় বরং এক হাত। আর সমগ্র উম্মত এ ব্যাপারেও একমত যে, প্রথমবার চুরি করলে ডান হাত কাটতে হবে । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “খেয়ানতকারীর হাত কাটা হবে না,” এ থেকে জানা যায়, খেয়ানত বা আত্মসাৎ ইত্যাদি চুরির পর্যায়ভুক্ত নয় । বরং চুরি বলতে এমন কাজ বুঝায় যার মাধ্যমে মানুষ একজনের ধন সম্পদ তার নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ থেকে বের করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে ।
তাই এ আয়াতে চুরি করা বা চোর শব্দটি আম বা ব্যাপক অর্থে এসেছে, অর্থাৎ চুরি করলেই তার হাত কাটতে হবে। চাই নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ চুরি করুক বা তার চেয়ে কম করুক, অনুরূপভাবে সংরক্ষিত সম্পদ হতে চুরি করুক বা অসংরক্ষিত সম্পদ হতে চুরি করুক,  মোট কথা কুরআনের আয়াতে এমন আম বা ব্যাপকভাবে নির্দেশ এসেছে যাতে প্রমাণিত হয় যে, যে কোন চোর যে ভাবেই চুরি করুক না কেন সকল ক্ষেত্রে সকল চোরের হাত কাটতে হবে।
অথচ বিধানটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করেছেন। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক চতুর্থাংশ দিনার সমপরিমাণ বা ততোধিক সম্পদ চুরি করা ছাড়া কোন চোরের হাত কাটা যাবে না। ( মুসলিম, হাদিস ১৩২২, নাসায়ী, হাদিস: ৪৯৪৬)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সাথে এরূপ নির্দেশও দিয়েছেন যে, একটি ঢালের মূল্যের চেয়ে কম পরিমাণ চুরি করলে হাত কাটা যাবে না। (আবু দাউদ: ১৭১০)।
তাহলে এই বিধানটি কার্যকর করতে হলে অবশ্যই হাদিসের আলোকে সুদ্ধান্ত নিতে হবে। সরাসরি কুরআন থেকে নেয়া যাবে না।

বিহহের ক্ষেতেঃ
সূরা নিসার ২৩ আয়াতে মহান আল্লাহ ১৪ প্রকারের নারীদের সাথে বিবাহ হারাম বলে উল্লেখ করেছেন। এর পরের আয়াতে তিনি বলেন,
۞ وَٱلۡمُحۡصَنَـٰتُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ إِلَّا مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَـٰنُڪُمۡ‌ۖ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ‌ۚ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَآءَ ذَٲلِڪُمۡ أَن تَبۡتَغُواْ بِأَمۡوَٲلِكُم مُّحۡصِنِينَ غَيۡرَ مُسَـٰفِحِينَ‌ۚ
আর (যুদ্ধের মাধ্যমে) তোমাদের অধিকারভুক্ত হয়েছে এমন সব মেয়ে ছাড়া বাকি সমস্ত সধবাই তোমাদের জন্য হারাম।  এ হচ্ছে আল্লাহর আইন৷ এ আইন মেনে চলা তোমাদের জন্য অপরিহার্য গণ্য করা হয়েছে ৷ এদের ছাড়া বাদ বাকি সমস্ত মহিলাকে অর্থসম্পদের মাধ্যমে লাভ করা তোমাদের জন্য হালাল গণ্য করা হয়েছে৷ তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে, অবাধ যৌন লালসা তৃপ্ত করতে পারবে না৷ (সূরা নিসা ৪:২৪)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আলুসী বলেন, “এ আয়াতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, পূর্ববর্তী আয়াতে যে সমস্ত নারীদের বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে তারা ব্যতীত অন্য সকল নারীকে পৃথক পৃথক অথবা একসাথে বিবাহ করা বৈধ”।
অতএব কুরআনুল করীমের এ হুকুমটি হল আম বা ব্যাপক যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উল্লেখিত ব্যক্তি ও নিয়ম ছাড়া অন্য সকল ব্যক্তি [নারী] ও নিয়মে বিবাহ করা বৈধ। মূলত, এ ব্যাপক হুকুমে বৈধ হলেও হাদিস দ্বারা একটি বিশেষ হুকুমকে নির্দিষ্ট করে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মহিলাকে তাঁর ফুপীসহ এবং কোন মহিলাকে তার খালা সহ একত্রে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন”। ( বুখারি, হাদিস: ৫১০৮, মুসলিম:১৪০৮)।
বিবিহিত স্ত্রীর ফুফু অথবা খালাকে বিবাহ করা কি বৈধ? বিধানটির বিবরণ কুরআনে নেই কিন্তু আছে হাদিসে। সুতরাং, এ হাদিস দ্বারা কুরআনের ব্যাপক বৈধতা হুকুমের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট হুকুমকে অবৈধ বলে খাস করা হল। এ হাদিস না হলে কুরআনের আম [ব্যাপক] হুকুমের দ্বারা কোন মহিলাকে তার ফুপীসহ এবং কোন মহিলাকে তার খালাসহ একত্রে বিবাহ করা বৈধ ছিল। কিন্তু হাদিস সে ব্যাপকতার মধ্য হতে এ খাস [নির্দিষ্ট] হুকুমটিকে অবৈধতার বিধান দিয়েছে। কারণ হাদিসও আল্লাহ তা’আলার ওহীর অন্তর্ভুক্ত। অতএব, প্রমাণিত হয় সুন্নাহ্ হল কুরআনের পরিপূরক, সুন্নাহ ছাড়া শুধু কুরআন দ্বারাই ইসলাম পূর্ণভাবে মানা সম্ভব নয়।

কসর সালাতঃ
কসর সালাত সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
وَإِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِى ٱلۡأَرۡضِ فَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَقۡصُرُواْ مِنَ ٱلصَّلَوٰةِ إِنۡ خِفۡتُمۡ أَن يَفۡتِنَكُمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ‌ۚ إِنَّ ٱلۡكَـٰفِرِينَ كَانُواْ لَكُمۡ عَدُوًّ۬ا مُّبِينً۬ا (١٠١)
অর্থঃ আর যখন তোমরা সফরে বের হও তখন নামায সংক্ষেপ করে নিলে কোন ক্ষতি নেই৷  (বিশেষ করে) যখন তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফেররা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে৷ কারণ তারা প্রকাশ্য তোমাদের শত্রুতা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে৷ (সুরা নিসার ৪:১০১)।
‘যাহেরী’ ও ‘খারেজী’ ফিকাহর অনুসারীরা এ বাক্যের যে অর্থ গ্রহণ করে থাকে তা হচ্ছে, কসর কেবল যুদ্ধাবস্থার জন্য আর শান্তির অবস্থায় যে সফর করা হয় তাতে কসর করা কুরআন বিরোধী। কিন্তু নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াতের মাধ্যমে হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত উমর (রা) এই একই সন্দেহটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে সামনে পেশ করলে তিনি এর জবাবে বলেন, অর্থাৎ ”এই নামাযে কসর করার অনুমতিটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পুরস্কার। আল্লাহ তোমাদের এই পুরস্কার দান করেছেন। কাজেই তোমরা এ পুরস্কারটি গ্রহণ করো”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শান্তি ও ভয় উভয় অবস্থায়ই সফরের নামযে কসর করেছেন। একথা প্রায় ‘মুতাওয়াতির’ বা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র পরম্পরায় বর্ণিত হাদীসের মধ্যমে প্রমাণিত সত্য। ইবনে আব্বাস (রা) সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন: ”নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা থেকে মক্কার দিকে বের হলেন। সে সময় একমাত্র রবুল আলামীন ছাড়া আর কারোর ভয় ছিল না। কিন্তু তিনি নামায দুই রাকআত পড়লেন”।(তাফহিমুল কুরআন সুরা নিসার টিকা নম্বর ১৩৩)।
সফর অবস্থায় শত্রুর ভয় থাকলে সালাতকে কসর করতে বলা হয়েছে। অথচ তার বাস্তর আমল হল তিনি শান্তি ও ভয় উভয় অবস্থায়ই সফরের নামযে কসর করেছেন। তাহলে বলুন এই আয়াতের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কৃত ব্যাখ্যা হাদিসের উপরই আমল করতে হবে।

উত্তারাধীকারি আইনঃ  আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
يُوصِيكُمُ ٱللَّهُ فِىٓ أَوۡلَـٰدِڪُمۡ‌ۖ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَيَيۡنِ‌ۚ
অর্থঃ তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেনঃ পুরুষদের অংশ দুজন মেয়ের সমান৷
(সূরা নিসা ৪:১১)।
মীরাসের ব্যাপারে এটি প্রথম ও প্রধান মৌলিক বিধান যে, পুরুষদের অংশ হবে মেয়েদের দ্বিগুণ। যেহেতু পারিবারিক জীবন ক্ষেত্রে শরীয়াত পুরুষদের ওপর অর্থনেতিক দায়িত্বের বোঝা বেশী করে চাপিয়ে এবং অনেকগুলো অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মেয়েদেরকে মুক্তি দিয়েছে,তাই মীরাসের ব্যাপারে মেয়েদের অংশ পুরুষদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম রাখা হবে, এটিই ছিল ইনসাফের দাবী। এ আয়াতের ব্যাপক ভাষা হতে বুঝা যায় যে, প্রতিটি পিতা-মাতা স্বীয় সন্তানদেরকে রেখে যাওয়া সম্পদের ওয়ারিশ বানাতে পারে। অনুরূপভাবে সকল প্রকার সন্তান পিতা-মাতার সম্পদের ওয়ারিশ হতে পারে। মূলত, হাদিস উক্ত ব্যাপক বিষয়টিকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, অর্থাৎ শুধু পিতা হলেই সন্তানকে ওয়ারিশ বানাতে পারবে না, অনুরূপ সন্তান হলেই পিতা-মাতার ওয়ারিশ হতে পারবে না, বরং কতগুলো বাধা রয়েছে, সে সব বাধামুক্ত পিতা-পুত্ররাই শুধু ওয়ারিশ বানাতে পারবে এবং ওয়ারিশ হতে পারবে। পবিত্র কুরআনে উক্ত বাধাসমূহ আলোকপাত করা হয়নি বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে উক্ত বাধাসমূহ আলোকপাত করা হয়েছে, বাধাসমূহ নিম্নরূপ:
১. রিসালাতঃ  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমরা (নবী-রাসূল) কাউকে কোন ওয়ারিশ বানাই না বরং যা রেখে যাই তা সাধারণ দান।( বুখারি – ৪০৩৫)।
অর্থাৎ নবী-রাসূলগণ কাউকে ওয়ারিছ বানান না এবং তাঁদের পরিত্যক্ত সম্পদের কেউ ওয়ারিশ হওয়ার দাবী করতে পারে না।
২. ধর্মের ভিন্নতাঃ  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন মুসলমান কাফির এর ওয়ারিশ হতে পারে না অনুরূপভাবে কোন কাফির মুসলমানের ওয়ারিশ হতে পারে না। ( বুখারি ৬৭৬৪)।
অর্থাৎ সন্তান যদি মুসলমান হয় তাহলে কাফির পিতার ওয়ারিশ হতে পারবে না, অথবা সন্তান যদি কাফির হয় তাহলে মুসলমান পিতার ওয়ারিশ হতে পারবে না ,অনুরূপভাবে পিতা-মাতাও সন্তানদের ওয়ারিশ বানাতে পারবে না।
৩. হত্যা ঘটিত কারণঃ  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির কোন সম্পদের ওয়ারিশ হতে পারবে না। (আহমদ: ৩৪৬, ইবনু মাযা: ২৬৪৫)।
অর্থাৎ হত্যাকারী যদি সন্তান হয় আর নিহত ব্যক্তি যদি পিতা-মাতা হয় তাহলে হত্যাকারী সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার পরিত্যক্ত সম্পদের ওয়ারিশ হতে পারবে না।
অতএব পবিত্র কুরআনে পিতা-মাতাকে স্বীয় সন্তানদের ওয়ারিশ বানানোর যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে বিধানটি ব্যাপক, যাহা হতে হাদিসে উল্লেখিত তিনটি বিষয় রিসালাত, ধর্মের ভিন্নতা ও হত্যা খাস, অর্থাৎ ইহা ওই আম হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এ তিনটি ক্ষেত্রে কোন পিতা-মাতার অঢেল সম্পদ থাকলেও স্বীয় সন্তানদের ওয়ারিশ বানাতে পারবে না।
পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশম ব্যাবহারঃ
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে যেসব সৌন্দর্য সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন তা পরিধানের ও নির্দেশ দিয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ ٱلۡفَوَٲحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡہَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡىَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ
অর্থঃ (হে মুহাম্মাদ) তাদেরকে বলে দাও, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে যেসব সৌন্দর্য সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো কে হারাম করেছে? আর আল্লাহর দেয়া পবিত্র জিনিসগুলো কে নিষিদ্ধ করেছে? (সূরা আরাফ ৭:৩২)।
অথচ সহিহ হাদিসে এসেছে পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশম ব্যাবহার করা হারাম করা হয়েছে। এধরণেরে আরও অসংখ্য অগণিত বিষয় আছে যা কুরআনকে সামনে রেখে, তার ব্যাখ্যা হাদীছ থেকেই জেনে নিতে হবে।

নেষা জাতীয় খাবারঃ মদ পান করা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
(٨٩) يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَـٰمُ رِجۡسٌ۬ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَـٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ (٩٠)
অর্থঃ ঈমানদারগণ ! এ মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকালাপ ৷ এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে৷ (সুরা মায়েদা ৫:৯০)।
কুরআনে মদ্যপান হারাম করা হয়েছে এতে কারো কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু হেরোইন, আফিম, গাঁজা  ইয়াবা ইত্যাদি মাদকদ্রব্য কুরআনের কোন আয়াতের মাধ্যমে হারাম করবেন? এ সম্পর্কে কুরআনে কিছু্‌ই বলা হয়নি। হাদীছের মূলনীতির মাধ্যমে তা হারাম হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আর আমি প্রত্যেকটি নেশা সৃষ্টিকারী জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করছি”। তিনি হাদীসে আর ও স্পষ্ট বলেছেন, “প্রত্যেকটি নেশা সৃষ্টিকারী জিনিস মদ ও এবং প্রত্যেকটি নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। তাঁর এ নির্দেশের মাধ্যমে  নেশা সৃষ্টিকারী প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর ব্যাপ্ত করে দিয়েছেন। হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জুমার খুতবায় মদের সংজ্ঞা এভাবে দেন,  “মদ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝায় যা বুদ্ধিকে বিকৃত করে ফেলে ।”
এ ছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ও মূলনীতি বর্ণনা করেছেনঃ “যে জিনিসের বেশী পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে তার সামান্য পরিণামও হারাম। ((আবু দাউদ)।
কাজেই হাদিসের মুলনীতি অনুসারে হেরোইন, আফিম, গাঁজা, ইয়াবা ইত্যাদি মাদকদ্রব্য হারাম করা হয়েছে।

মৃত প্রাণী খাওয়াঃ
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
حُرِّمَتۡ عَلَيۡكُمُ ٱلۡمَيۡتَةُ وَٱلدَّمُ وَلَحۡمُ ٱلۡخِنزِيرِ وَمَآ أُهِلَّ لِغَيۡرِ ٱللَّهِ بِهِۦ وَٱلۡمُنۡخَنِقَةُ وَٱلۡمَوۡقُوذَةُ وَٱلۡمُتَرَدِّيَةُ وَٱلنَّطِيحَةُ وَمَآ أَكَلَ ٱلسَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيۡتُمۡ
অর্থঃ তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়াছে মৃতজীব, রক্ত, শূকরের গোশ্‌ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব এবং কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আহত হয়ে, ওপর থেকে পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে মরা অথবা কোন হিংস্র প্রাণী চিরে ফেলেছে এমন জীব, তোমরা জীবিত পেয়ে যাকে যবেহ করে দিয়েছো সেটি ছাড়া৷(সুরা মায়েদা ৫:০৩)।
কুরআন বলছে মৃত প্রাণী খওয়া হারাম। কিন্তু হাদীছ বলছে পানির মাছ মৃত হলেও তা খাওয়া হালাল। কুরআনে পশুকুলের মধ্যে শুধু শুকরকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বাদর, বাঘ, সিংহ, বানর, ভাল্লুক, সাপ, পোকা মাকড়, কিট পতঙ্গ, ঈগল চিল, শকুন ইত্যাদি হারাম হওয়ার ব্যাপারে হাদীছে মূলনীতি বেঁধে দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে, “দাঁত দ্বারা শিকার করে এরকম সকল হিংস্র পশু হারাম। আর থাবা দিয়ে শিকার করে এমন প্রত্যেক পাখি হারাম।” (বুখারী মুসলিম)


যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসকে অপবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করবে, আর ধারণা করবে তার উপর আমল করা অবৈধ এবং শুধু এককভাবে আল-কুরআনের উপর আমল করবে বলে মনে করে, তবে সেই ব্যক্তি কাফির বলে গণ্য হবে। কারণ, সে শরী‘য়তের মূলনীতিমালার দ্বিতীয় উৎসকে অস্বীকার করেছে, আর তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস। তার অবস্থা এমন যেন সে বলে, তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করো না, বরং শুধু আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য কর। আর সেই ধারাবাহিকতায় ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করে নি, কেননা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং সে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যও করে নি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যও করে নিা কারণ মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧  [الحشر: ٧]
অর্থঃ রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। (সূরা হাশর ৫৯:৭)।
মন্তব্যঃ কাজেই হাদিস অস্বীকার করার মত দৃষ্টতা দেখান কোন মুমিনের জন্য ভাল পরিনাম বহন করবেনা। তার এ কাজ ও বিশ্বাস তাকে মুসলিম ও ইসলাম থেকে বের করে দিবে। আর আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তরভূক্ত হবে এতে কোন প্রকার সন্ধেহ বা সংশয় নেই।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নফস, রুহ, কলব......পরিচয়, ব্যাধি, প্রতিকার

চৌদ্দশ বছরের আমরা এক কাফেলা