নফস, রুহ, কলব......পরিচয়, ব্যাধি, প্রতিকার
হামদুলিল্লাহ। ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু আলা রসুলিল্লাহ। ওয়ালা আলীহি ওয়া আসহাবিহী আজামাইন।
.
একজন মানুষ তার নিজেকে চেনা অতীব যরুরি। কিভাবে অপরাধ সংগঠিত হয়? কে কমাণ্ড করে? বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী? এগুলো জানলে নিজেকে গুণাহ থেকে বাচানো সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। আস্তে আস্তে কন্ট্রোল পাওযারও বেড়ে যাবে।
.
নফস এর বিভিন্ন অর্থ রয়েছে। কুরআনুল কারীমে দেখি.......
________________________________________
'জীবন' অর্থে-
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ }آل عمران185 الآية
মানুষ অর্থে-
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي ۚ إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ (53)
প্রাণ অর্থে-
"والَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بالْمعرُوفِ ولَتَنْهَوُنَّ عَنِ المُنْكَرِ.أخرجه الترمذي(4/468رقم(2169)
প্রবৃত্তি অর্থে-
(وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى * فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى))[النازعات:40-41
নফসের খুলাসা বক্তব্যঃ
নফসকে এক কথায় জীবন বা শরীর বলা যায়। এই নফস বা শরীর সব সময় সুখ স্বাচ্ছন্দ চায়, আরাম আয়েশ চায়। ভালো থাকা, খাওয়া চায়। চোখ সুন্দর নারী দেখতে চায়। এমনি করে চায় চায় আর চায়। কিন্তু সে সুখটা হালাল না হারাম এটা শরীর বুঝে না বুঝার ক্ষমতাও নাই।
যেমন- চুরি করা মিষ্টি মুখে দিলেও মিষ্টিই লাগবে।
কারো সাথে যেনার মাধ্যমে শারীরীক সম্পর্ক করলেও দেহে তৃপ্তি পাবে।
.
শরীর বাধা দেবে না। কিন্তু ভেতর থেকে একটা বাধা আসবে। আর সে বাধা দেবে রুহ। শরীরের চাওয়া পূরণ করতে যেয়ে রুহ'র সাথে টক্কর বা ঝগড়া লাগবে। এই ঝগড়াটার তিনটি অবস্থা হবে। প্রথম অবস্থায় শরীর জিতে যায়। আর রুহের এই দ্বন্দ্বের প্রথম অবস্থাকে বলা হয় 'আম্মারা' । ফেরআউন, নমরুদসহ সকল কাফিরদের এই নফস ছিল। এরা সবাই জাহান্নামী। সুরা ইউসুফ, ১৩পারার প্রথম আয়াত। .
.
২য় অবস্থায় এসে শরীর আর জিতে যেতে পারে না, হেরে যায়। শরীর যা চায় তাই আর বাস্তবায়ন করতে পারে না। বিবেক বা রুহ' জিতে যায়। এটাকে কুরআনুল কারীমে 'লাওয়ামা' বলেছে। এই পর্যায়ে রুহ কখনো জিতে যায় কখনো শরীর জিতে যায়। শরীর বা নফস জিতে গেলে সেটা গোনাহ। কিন্তু এই এক্ষেত্রে রুহ সব সময় ন্যুনতম ৫০ পার্সেন্টের উপর বিজয়ী থাকে। যে যত উচুতে যেতে পারবে সে তত উচ্চ মাকামের বান্দা হিসেবে আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই দন্দ্বের মধ্যও যে গোণাহ হয় তাদেরকেই আল্লাহ ক্ষমা ঘোষনা করেছেন। এনারা মুমীন,সিদ্দিক সালেহীন নেক্কার এবং ওলী আল্লাহ। 'লাওয়ামা' কিয়ামাহ ২৯ পারা, ২য় আয়াত দেখুন। নোটঃ নিজেরা তাফসীর পড়ে আরো যোগ করুন।
.
৩য় অবস্থাঃ নফসে মুতমাইন্না। এটা শুধু নবী রাসুলগণকে আল্লাহ তাআলা বিশেষকরে দান করেছেন। এটা অর্জন করা সম্ভব নয়। আরো দেখুন- সুরা ফজর ৩০পারা,শেষ তিন আয়াত পড়ুন।
.
_____________________روح
«وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَآ اُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً» (الاسراء/85).
«فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ» (الحجر/29).
«وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ» (البقرة/253)
*রুহ এর নির্দিষ্ট কোন পরিচয় আল্লাহ তাআলাই দেন নি। তবে, রুহের আলামাতের মাধ্যমে আমরা তাকে কয়েকটি পরিচয়ে পরিচিত করতে পারি।
.
১. বিবেক ২. নৈতিক চেতনা ৩. ভালো-মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা।
মুটামুটি নফস আর রুহের আলোচনা উপরে হয়ে গেছে। এখন আমরা কলবের বিষয়ে জানবো।
----________________________________
1. قَالَتِ الْاَعْرَابُ اٰمَنَّاﺚ قُلْ لَّمْ تُؤْمِنُوْا وَلٰکِنْ قُوْلُوْٓا اَسْلَمْنَا وَلَمَّا یَدْخُلِ الْاِیْمَانُ فِیْ قُلُوْبِکُمْﺚ
وَاِنْ تُطِیْعُوا اللہَ وَرَسُوْلَھ۫ لَا یَلِتْکُمْ مِّنْ اَعْمَالِکُمْ شَیْئًاﺚ اِنَّ اللہَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ
﴿ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَذِكْرَى لِمَنْ كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ ﴾ قّ:37
﴿ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضاً ﴾ البقرة: من الآية10
.
وقال تعالى: ﴿ وَقَالُوا قُلُوبُنَا غُلْفٌ بَلْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلاً مَا يُؤْمِنُونَ ﴾ البقرة:88.
وقال سبحانه: ﴿ أَفَلا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا ﴾ محمد:24. وقال عنهم
﴿ وَقَالُوا قُلُوبُنَا فِي أَكِنَّةٍ مِمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ وَفِي آذَانِنَا وَقْرٌ ﴾ فصلت: من الآية5.
لنُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ـ يَقُولُ الَا َإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلا وَهِيَ الْقَلْبُ
নোটঃ কুরআন আর হাদীসের তরজমাগুলো আমরা নিজেরা বাংলা তরজামায় দেখে নেব। আয়াত নাম্বার দিয়েছি প্রয়োজন হলে বাংলা তরজমা কুরআনে দেখে নেব।
'কলব' এর খুলাসা আলোচনাঃ
_____________________
কলব এর অাভিধানিক অর্থঃ- এ শব্দের অর্থ হলো 'পরিবর্তনশীল' যেমন রাসুল সা.এর দুআ- يا مقلب القلوب ثبت قلبي علي دينك
হে অন্তুর সমূহের পরিবর্তনকরী তুমি আমার অন্তরকে দ্বিনের উপর মযবুত করে দাও
এখানে মুকাল্লিব শব্দটির قلب থেকে এসেছে।
আর অন্তুর যেহেতু এক অবস্থার উপর স্থিতি থাকে না, পরিবর্তন হয় তাই তাকে قلب বা অন্তর বলা হয়।
.
রাস্ট্র পরিচালিত হওয়ার জন্য তিনটি বিভাগ বা অরগান থাকে।
.
১. Lagislative বা আইন প্রণয়ন বিভাগ ২.Administrative বা প্রশাসন বিভাগ ৩.Federative বা বাস্তবায়ন বিভাগ। ঠিক তেমনি দেহ রাজ্য পরিচালনা করা জন্য একটি গভর্ণমেন্ট আছে এবং তার আওতায় তিনটি বিভাগ আছে-
..১..নফস হলো দেহ রাজ্যে Lagislativeবা আইন প্রণয়ন বিভাগ সে শুধু চায় আর চায়। গাড়ি চাই , বারি চাই, আরাম চাই ইত্যাদি।
২.রুহ হলো Administrative বা প্রশাসন বিভাগের মত। এটা ঠিক জুডিশায়ালি বিভাগের মতই। এই রুহ রায় দেয় নফসের চাওয়াটা ন্যায় সঙ্গত হয়েছে কি না। এই রায়ের ভিত্তিতে নফ আর রুহের মধ্যে দন্দ্ব চলতে থাকে। নফস চায়, ন্যায় সঙ্গত হলে রুহ পক্ষে রায় দেয় আর ন্যায় সঙ্গত না হলে রুহ উচিত নয় বলে রায় দেয়। এরপর নফস বিজয়ী হোক বা রুহ বিজয়ী হোক এটা চলে যায় তৃতীয় বিভাগ 'কলব' এর নিকটে--
৩. কলব হলো Federative বা বাস্তবায়ন বিভাগের মত। সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে যায়। এই কলবের শক্তির দ্বারা নফসকে পরাজিত করতে হয়। শতকরা ৫০ভাগ ক্ষেত্রে অবশ্যই নফসকে পরাজিত করতে হবে এবং বাকিটুকুর জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
.
______________________আত্মার ব্যাধি বা উপসর্গ_______________
মানুষের আত্মা যখন ব্যাধিগ্রস্ত হয় তখন নিম্মোক্ত উপসর্গগুলো প্রতিভাত হয়।
1.লোভ লালসা করা
2 অতি লোভ, বেশি আশা করা
3.গোসা, রাগ ও ক্রোধ করা
4.কিজ্ব, মিথ্যা বলা
5.গীবত, পরনিন্দা করা
6.হাসাদ, হিংসা-বিদ্বেষ করা
7.বুখ্ল, কৃপণতা করা আট.
8.রিয়া, লোক দেখানো
9.ওজব, নিজ পছন্দ করা
10.কিবর, অহংকার করা
11.হিকদ, পরশ্রীকাতরতা
12.হুব্বে মাল, সম্পদের ভালোবাসা
13. হুব্বে জাহ, সম্মানের লোভ
14. হুব্বে দুনিয়া, দুনিয়ার ভালোবাসা।
আত্মশুদ্ধি বা আত্মার চিকিতসা।
.
আত্মশুদ্বিকে আরবী ভাষায় তাযকিয়াতুন নফস বলা হয়। এখানে তাযকিয়াতুন কথাটি ঝায়িয়ুন হতে নির্গত হয়েছে যার অর্থ হল পবিত্র,নিষ্পাপ।আর তাযকিয়াতুন অর্থ হল পরিশুদ্ব করা,পাক করা, উদ্বুদ্ব করা এবং উন্নত করা। আর নফস এর অর্থ হল আত্মা।
.
আত্মশুদ্বির উপায়সমূহঃ
আত্মাকে বেশ কয়েকটি অবস্থায় বিশুদ্বতা অর্জন করা যায়। যেভাগে আত্মিক পরিশুদ্বতা অর্জন করা যায় তা নিম্নরুপঃ
১. ঈমান পরিশুদ্বকরনঃ
তাযকিয়াতুন নফসের চাবি হল ঈমান।আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনলে আত্মশুদ্বি হবে না।ঈমানদারদের জন্যেই আত্মশুদ্বি।কাফিরদের জন্য আত্মশুদ্বি নয়।সত্যিকারের আত্মশুদ্বি অর্জন করতে হলে ঈমানকে তাজা এবং শক্তিশালী করতে হবে।আর এই ঈমানকে তাজা করার জন্য ইলেম অর্জন করতে হবে।ইলম ছাড়া ঈমান কখনও তাজা হবে না।আল্লাহ বলেন,
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। আলাকঃ১-৫] এবং সঠিকভাবে তাউহিদের পরিচয় লাভ করা। তাউহিদ না জানলে ঈমানদারের দাবী করেও মুশরিক হয়ে থাকতে পারে।
.
২. তাকওয়াঃ তাকওয়া শব্দের অর্থ হল আল্লাহকে ভয় করা,সাবধান থাকে,সতর্ক থাকা,বিরত থাকা ইত্যাদি।শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ পাকের ভয়ে যাবতীয় পাপাকার্য থেকে বিরত থাকের নাম হল তাকওয়া।তাকওয়ার দ্বারা যেকেউ নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ব করতে পারে।।আল্লাহ বলেন,
“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ্ তাদের সাথে রয়েছেন”। [বাকারাঃ১৯৪]
“পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে,তার ঠিকানা হবে জান্নাত”। [নাযিয়াতঃ৪০-৪১]
৩.তওবাঃ
তওবা অর্থ হল অনুতপ্ত হওয়া,লজ্জিত হওয়া, ফিরে আসা,প্রত্যাবর্তন করা ইত্যাদি।অর্থাৎ,আল্লাহের হুকুম অমান্য করে বা সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তি কর্তৃক চরম অনুশোচিত হয়ে আল্লাহর কাছে অপরাধ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বিনয়ের সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করার নাম হল তওবা। অর্থাৎ,গুনাহ করার পর সেখান তা থেকে যদি কেউ পরিত্রান পেতে চায় এরজন্য তাকে আল্লাহের কাছে সর্বপ্রথম একনিষ্ঠভাবে তওবা করতে হবে যে আরধনার মাধ্যমে যেকেউ আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য লাভ এবং আত্মপরিশুদ্বতা অর্জন করতে পারে।তওবার মানে শুধু এই না যে সে পাপের জন্য কেবল ক্ষমা চাবে না বরং সে পাপ কাজটি না করার জন্য সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে।অন্যথায় তা তওবা হবে। আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন”[বাকারাঃ২২২]
রাসূলে করীম (সাঃ) বলেন, “তওবাকারীদের কোন গুনাহ থাকে না।।”
অর্থাৎ, তওবার দ্বারা অতি সহজে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়।
৪.তাওয়াক্কুলঃ
সর্বাবস্থায় এক আল্লাহের উপর কেবল নির্ভর হওয়াকে তাওয়াক্কুল বলা হয়।তাওয়াক্কুলের ধারনা তাওহীদ হতে এসেছে।এক সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর নির্ভর করা ছাড়া আর অন্য কোন শক্তি উপর নির্ভর করা ইসলামবিরোধী।ইমাম গাযযালি(র.) বলেন,”তাওয়াক্কুলের অবস্থা তিন ধরনের হয়।প্রথম অবস্থা হল এমন যে সে সাধারণভাবে আল্লাহের উপর নির্ভর করবে।দ্বিতীয়ত,তাওয়াক্কুল্কারী ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে যে একজন শিশু তার প্রতি ঠিক যেমন নির্ভর করে অর্থাৎ তার মাতা ছাড়া আর কারও আশ্রয় লাভ করে না ঠিক তদ্রুপ ঐ ব্যক্তি আল্লাহের প্রতি এমন নির্ভর করে থাকবেন। আর সবশেষ স্তর হল এমন যে সে পৃথিবীর কোন কিছুর প্রতি মুখাপেক্ষী নয় এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর প্রতি।আত্মশুদ্বির জন্য এটি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। রাসূল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা এমনভাবে তাওয়াক্কুল যেমনিভাবে একটি পাখি আল্লাহের প্রতি তাওয়াক্কুল করে।অর্থাৎ সে সকালে বের হয় অনাহারে আর বিকালে ঘরে ফিরবার পূর্বে পেটপূর্ণ হয়ে ফিরে আসে”। [তিরমিযী]
আল্লাহ বলেন,
“এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।” [তওবাঃ১২৯]
.
৫. ইখলাসঃ
মুমীনগণ হৃদ্বের পবিত্রতা ও সরলতা রক্ষা করে চলে।তারা সর্বদা আল্লাহের ধ্যানে মশগুল থাকে।তারা তাদের চিন্তা-ধারার সময় আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে আনেন না।যাবতীয় সন্দেহযুক্ত কাজ বর্জন,বিবেকবিরোধী কাজ বর্জন করা এবং যা আল্লাহ থেকে দূরে নিয়ে যায় এমন কাজ বর্জন করা পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম সহায়ক।আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন ও পার্থিব মোহ এড়ানোর মাধ্যমে মূমীনগণ অন্তরে পবিত্রতা অর্জন করেন।আল্লাহ বলেন,
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্যে।” [আনআমঃ১৯২]
রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন,“ইখলাসওয়ালাদের জন্য সুসংবাদ হোক।তারা অন্ধকারে চেরাগস্বরুপ।তাদের দ্বারা কঠিন হতে কঠিন ফিৎনা দূর হয়”।[বায়হাকি]
৬. যিকিরঃ
যিকির মানেই আল্লাহকে স্মরণ করা। সকল কাজ সুন্নাত তরীকায় সম্পাদিত হলেই তা যিকিরে পরিণত হবে। নামায, রোজা,হজ্ব সব কিছুর মধ্যই যিকির আছে। তবে লিসানি বা যবানের সর্বত্তোম যিকির হলো কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত।
যে সকল জায়গায় যে মাসনুন দুআগুলি আছে তা আদায় করাও যিকির।
যিকিরের অনেক ফযিলত আছে।
আল্লাহ বলেন,
“সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো” [বাকারাঃ১৫২]
“ মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর এবং সকাল বিকাল আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা কর”।[আহযাবঃ৪১-৪২]
কুরআন তিলাওয়াতের আরো গুরুত্ব-
কুরআন তিলওয়াত হল নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত।কুরআন তিলওয়াতের মাধ্যমে একজন বান্দার সাথে আল্লাহ পাকের কথোপকন হয় এবং যিকিরের মর্যাদা লাভ করতে পারে।তার মানবিক গুণাবলী বৃদ্বি পায়।রাসূল(সাঃ) বলেন, “লোহার উপর যেমন মরীচা পড়ে তেমনিভাবে মানুষের অন্তরের উপর মরীচা পড়ে।আর এই মরীচা দূর করার উপায় হল বেশি বেশি করে কুরআন তিলওয়াত এবং মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা।”
৭. সুন্নাতকে অনুসরণঃ সুন্নাত অর্থ হল পথ।রাসূল(সাঃ)এর পথকে অনুসরণ করাকে সুন্নাত বলা হয়।সুন্নাতকে অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর একজন প্রিয়বান্দা আত্মশুদ্বি অর্জন করতে পারে।মুসলমান হিসেবে সুন্নাতকে অনুসরণ করা সকলের জন্য জরুরি।আল্লাহ বলেন,
“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ্ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন।” [ইমরানঃ১৩১]
“যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহ্রই হুকুম মান্য করল।”[নিসাঃ৮০]
৮. নেক আমল করাঃ আত্মশুদ্বি করার আরেকটি বিশেষ রাস্তা হল নেক আমল করা।শুধুমাত্র ঈমান থাকলে হবে না।ঈমানের দাবী অনুযায়ী কাজ করতে হবে।আর মানব সৃষ্টির অন্যতম লক্ষ্য হল আল্লাহ পাকের জন্য ইবাদত তথা নেক আমল করবে।এই ইবাদত –বন্দেগীর দ্বারা একজন বান্দা আত্মশুদ্বি অর্জন করতে পারে।আল্লাহ বলেন,
“আমি জীন এবং ইনসানকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য।” [যারিয়াতঃ৫৫]
.
১০. সালাত আদায়,যাকাত প্রদান,সিয়াম সাধনা এবং হজ্জ পালনঃ সালাত,সিয়াম,হজ্জ এবং যাকাত হল ইসলামের পঞ্চসম্ভের ভিতর অন্যতম।পারতপক্ষে এসকল আমল ছাড়া কেউ কখনও মুসলিম থাকতে পারে না।এসকল আমলসমূহের দ্বারা আত্মশুদ্বি অর্জন করা যায়। এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসে অসংখ্য উদ্বৃতি পাওয়া যায়।তা হলঃ
“নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে।”[আনকাবূতঃ৪৫]
“তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহকর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে”।[তওবাঃ১০৩]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।” [বাকারাঃ১৮৩]
.
১১. সবর করাঃ সবর অর্থ হল ধৈর্য।আর ধৈর্য হল ঐ বিষয়টি যার সাহায্যে একজন মানষ তার বিপদ-আপদ,সুখে-দুখে,ক্ষুধা-তৃষ্ণায়,অত্যাচার-অবিচার ইত্যাদি সর্বাবস্থায় এক আল্লাহের ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকবে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের পথ অনুসরণ করে।ধৈর্যের তিনটি স্তর রয়েছে।এক ধরনের ধৈর্য আছে যাতে মানুষের ভিতর কখন সবর থাকে আবার কখন থাকে না।আবার আরেকটি স্তর হল কখনো মন্দ অবস্থায় সে দিশেহারা হবে না।আর সর্বশেষ স্তরটি হল এমন যে সে কখনো দুঃখ-কষ্টের জন্য কখনও বিচলিত হবে না।এ সর্বশেষ স্তরের দ্বারা যে কেউ তার এই সবরের গুণে সূফিবাদের চরম লক্ষে পৌছে যায়।ইমাম গাযযালী (র.) বলেন, “ধৈর্য হল শয়তানের প্ররোচনা অ আত্মার নিম্নতর প্রবৃত্তি সম্পর্কে হুশিয়ারীতে পূর্ণ বিশ্বাস”। সবরের দ্বারা যে আল্লাহ পাকের ভালবাসা একান্তভাবে অর্জন করা যায় তা নিমোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমানিত হয়। আল্লাহ বলেন,
“হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ্ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।”[বাকারা]
.
১২. শোকর আদায় করাঃ শোকর শব্দের অর্থ হল কৃতজ্ঞতা।আল্লাহ পাক একজন মানষকে যে হাত,পা।চোখ,নাক,কান,মুখ,বাতাস,রিযিক,পানি দিয়েছে তার জন্য আল্লাহের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নাম হল সাধারণভাবে শোকর।শোকর আদায়ের মধ্য দিয়ে একজন বান্দা আত্মশুদ্বিতা অর্জন করতে পারে।আল্লাহ বলেন,
“যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব” [ইব্রাহীমঃ৭]
.
১৩. আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণঃ একজন শিক্ষকের প্রতি তার ছাত্র পুরোপুরিভাবে আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত পূর্ণ শিক্ষা অর্জন করতে পারে না তেমনিভাবে আল্লাহের প্রতি সকল ক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য না করা পর্যন্ত সে পরিপূর্ণ মারিফত অর্জন করতে পারবে না।তাই তাই আত্মশুদ্বির অন্যতম উপায় হল অন্যতম লক্ষ্য হল এক আল্লাহের প্রতি আত্মসমর্পণ করা।
.
১৪. পশুত্ব চরিত্র পরিবর্জনঃ শয়তান হল মানুষের চির শত্রু।শয়তান সর্বদা মানুষকে বিভিন্ন ধরনের পাপাচারে লিপ্ত হতে উদ্বুদ্ব করে।এর দ্বারা কখনও আত্মশুদ্বি সম্ভভপর নয়।তাই আত্মশুদ্বি অর্জনের জন্য গীবত করা,মিথ্যা বলা,অপবাদ দেওয়া,উপহাস খাওয়া,সুদ খাওয়া,ঘুষ খাওয়া,ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদির মত জঘন্য অপরাধ হতে নিজেকে সার্বক্ষণিক মুক্ত রাখতে হবে।আল্লাহ বলেন,
“যে নিজেকে (আত্মাকে) শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনে রেথ হয়”। [শামসঃ৯-১০]
.
১৫. আত্মাকে স্বাভাবিক রাখাঃ আত্মাকে পাপমুক্ত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা অন্তরে বিশুদ্বতা অর্জন করতে পারে।রাসূল(সাঃ) বলেছেন,
“শরীরের দেহে একটি মাংস আছে যদই তা পরিশুদ্ব হয় তবে গোটা শরীর পরিশুদ্ব হয়।আর যদি তা খারাপ হয়,তবে সমস্ত শরীরই খারাপ হয়।মনে রেখো তা হল কাল্ব বা দিল”।[বুখারী ও মুসলিম]
অর্থাৎ, মানুষকে চারিত্রিক দিক হতে পবিত্র রাখার জন্য অন্তরের পরিশুদ্বতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
.
১৬ . পাপ হতে মুক্ত রাখাঃ নিজেকে কেউ যাবতীয় পাপকার্য থকে বিরত থাকার মাধ্যমে আত্মশুদ্বি অর্জন করতে পারে।রাসূল (সাঃ) বলেন,“মু’মিন যখন কোন পাপ করে তখন তার অন্তরে কালো দাগ পড়ে।সে যদি ক্ষমা চায় তাহলে তা দূর হয়ে যায়।”
.
১৭. আল্লাহের গুণে গুণান্বিতঃ আল্লাহ পাকের কতিপয় গুণাবলী যার গুণে গুণ্বানিত হয়ে আত্মশুদ্বি অর্জন করা যায়।আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর গুণে গুণ্বানিত হও।”
.
১৮. দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সম্পাদনঃ দাওয়াত এবং তাবলীগী কাজের দ্বারা আত্মশুদ্বি অর্জন করা যায়।আল্লাহ বলেন,
“ঐ ব্যক্তির চেয়ে আর উত্তম কথা কার হতে পারে যে কথা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে আর নিজে নেক আমল করে আর বলে আমি মুসলমানদের একজন।”[হামীম-সিজদাহঃ৩১]
.
উল্লেখিত খুলাসা আলোচনা আমরা জানলাম আল্লাহ আমাদের আমল করার তাউফিক দান করুন। আমীন।
.
একজন মানুষ তার নিজেকে চেনা অতীব যরুরি। কিভাবে অপরাধ সংগঠিত হয়? কে কমাণ্ড করে? বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী? এগুলো জানলে নিজেকে গুণাহ থেকে বাচানো সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। আস্তে আস্তে কন্ট্রোল পাওযারও বেড়ে যাবে।
.
নফস এর বিভিন্ন অর্থ রয়েছে। কুরআনুল কারীমে দেখি.......
________________________________________
'জীবন' অর্থে-
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ }آل عمران185 الآية
মানুষ অর্থে-
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي ۚ إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ (53)
প্রাণ অর্থে-
"والَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بالْمعرُوفِ ولَتَنْهَوُنَّ عَنِ المُنْكَرِ.أخرجه الترمذي(4/468رقم(2169)
প্রবৃত্তি অর্থে-
(وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى * فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى))[النازعات:40-41
নফসের খুলাসা বক্তব্যঃ
নফসকে এক কথায় জীবন বা শরীর বলা যায়। এই নফস বা শরীর সব সময় সুখ স্বাচ্ছন্দ চায়, আরাম আয়েশ চায়। ভালো থাকা, খাওয়া চায়। চোখ সুন্দর নারী দেখতে চায়। এমনি করে চায় চায় আর চায়। কিন্তু সে সুখটা হালাল না হারাম এটা শরীর বুঝে না বুঝার ক্ষমতাও নাই।
যেমন- চুরি করা মিষ্টি মুখে দিলেও মিষ্টিই লাগবে।
কারো সাথে যেনার মাধ্যমে শারীরীক সম্পর্ক করলেও দেহে তৃপ্তি পাবে।
.
শরীর বাধা দেবে না। কিন্তু ভেতর থেকে একটা বাধা আসবে। আর সে বাধা দেবে রুহ। শরীরের চাওয়া পূরণ করতে যেয়ে রুহ'র সাথে টক্কর বা ঝগড়া লাগবে। এই ঝগড়াটার তিনটি অবস্থা হবে। প্রথম অবস্থায় শরীর জিতে যায়। আর রুহের এই দ্বন্দ্বের প্রথম অবস্থাকে বলা হয় 'আম্মারা' । ফেরআউন, নমরুদসহ সকল কাফিরদের এই নফস ছিল। এরা সবাই জাহান্নামী। সুরা ইউসুফ, ১৩পারার প্রথম আয়াত। .
.
২য় অবস্থায় এসে শরীর আর জিতে যেতে পারে না, হেরে যায়। শরীর যা চায় তাই আর বাস্তবায়ন করতে পারে না। বিবেক বা রুহ' জিতে যায়। এটাকে কুরআনুল কারীমে 'লাওয়ামা' বলেছে। এই পর্যায়ে রুহ কখনো জিতে যায় কখনো শরীর জিতে যায়। শরীর বা নফস জিতে গেলে সেটা গোনাহ। কিন্তু এই এক্ষেত্রে রুহ সব সময় ন্যুনতম ৫০ পার্সেন্টের উপর বিজয়ী থাকে। যে যত উচুতে যেতে পারবে সে তত উচ্চ মাকামের বান্দা হিসেবে আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই দন্দ্বের মধ্যও যে গোণাহ হয় তাদেরকেই আল্লাহ ক্ষমা ঘোষনা করেছেন। এনারা মুমীন,সিদ্দিক সালেহীন নেক্কার এবং ওলী আল্লাহ। 'লাওয়ামা' কিয়ামাহ ২৯ পারা, ২য় আয়াত দেখুন। নোটঃ নিজেরা তাফসীর পড়ে আরো যোগ করুন।
.
৩য় অবস্থাঃ নফসে মুতমাইন্না। এটা শুধু নবী রাসুলগণকে আল্লাহ তাআলা বিশেষকরে দান করেছেন। এটা অর্জন করা সম্ভব নয়। আরো দেখুন- সুরা ফজর ৩০পারা,শেষ তিন আয়াত পড়ুন।
.
_____________________روح
«وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَآ اُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً» (الاسراء/85).
«فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ» (الحجر/29).
«وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ» (البقرة/253)
*রুহ এর নির্দিষ্ট কোন পরিচয় আল্লাহ তাআলাই দেন নি। তবে, রুহের আলামাতের মাধ্যমে আমরা তাকে কয়েকটি পরিচয়ে পরিচিত করতে পারি।
.
১. বিবেক ২. নৈতিক চেতনা ৩. ভালো-মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা।
মুটামুটি নফস আর রুহের আলোচনা উপরে হয়ে গেছে। এখন আমরা কলবের বিষয়ে জানবো।
----________________________________
1. قَالَتِ الْاَعْرَابُ اٰمَنَّاﺚ قُلْ لَّمْ تُؤْمِنُوْا وَلٰکِنْ قُوْلُوْٓا اَسْلَمْنَا وَلَمَّا یَدْخُلِ الْاِیْمَانُ فِیْ قُلُوْبِکُمْﺚ
وَاِنْ تُطِیْعُوا اللہَ وَرَسُوْلَھ۫ لَا یَلِتْکُمْ مِّنْ اَعْمَالِکُمْ شَیْئًاﺚ اِنَّ اللہَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ
﴿ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَذِكْرَى لِمَنْ كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ ﴾ قّ:37
﴿ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضاً ﴾ البقرة: من الآية10
.
وقال تعالى: ﴿ وَقَالُوا قُلُوبُنَا غُلْفٌ بَلْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلاً مَا يُؤْمِنُونَ ﴾ البقرة:88.
وقال سبحانه: ﴿ أَفَلا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا ﴾ محمد:24. وقال عنهم
﴿ وَقَالُوا قُلُوبُنَا فِي أَكِنَّةٍ مِمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ وَفِي آذَانِنَا وَقْرٌ ﴾ فصلت: من الآية5.
لنُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ـ يَقُولُ الَا َإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلا وَهِيَ الْقَلْبُ
নোটঃ কুরআন আর হাদীসের তরজমাগুলো আমরা নিজেরা বাংলা তরজামায় দেখে নেব। আয়াত নাম্বার দিয়েছি প্রয়োজন হলে বাংলা তরজমা কুরআনে দেখে নেব।
'কলব' এর খুলাসা আলোচনাঃ
_____________________
কলব এর অাভিধানিক অর্থঃ- এ শব্দের অর্থ হলো 'পরিবর্তনশীল' যেমন রাসুল সা.এর দুআ- يا مقلب القلوب ثبت قلبي علي دينك
হে অন্তুর সমূহের পরিবর্তনকরী তুমি আমার অন্তরকে দ্বিনের উপর মযবুত করে দাও
এখানে মুকাল্লিব শব্দটির قلب থেকে এসেছে।
আর অন্তুর যেহেতু এক অবস্থার উপর স্থিতি থাকে না, পরিবর্তন হয় তাই তাকে قلب বা অন্তর বলা হয়।
.
রাস্ট্র পরিচালিত হওয়ার জন্য তিনটি বিভাগ বা অরগান থাকে।
.
১. Lagislative বা আইন প্রণয়ন বিভাগ ২.Administrative বা প্রশাসন বিভাগ ৩.Federative বা বাস্তবায়ন বিভাগ। ঠিক তেমনি দেহ রাজ্য পরিচালনা করা জন্য একটি গভর্ণমেন্ট আছে এবং তার আওতায় তিনটি বিভাগ আছে-
..১..নফস হলো দেহ রাজ্যে Lagislativeবা আইন প্রণয়ন বিভাগ সে শুধু চায় আর চায়। গাড়ি চাই , বারি চাই, আরাম চাই ইত্যাদি।
২.রুহ হলো Administrative বা প্রশাসন বিভাগের মত। এটা ঠিক জুডিশায়ালি বিভাগের মতই। এই রুহ রায় দেয় নফসের চাওয়াটা ন্যায় সঙ্গত হয়েছে কি না। এই রায়ের ভিত্তিতে নফ আর রুহের মধ্যে দন্দ্ব চলতে থাকে। নফস চায়, ন্যায় সঙ্গত হলে রুহ পক্ষে রায় দেয় আর ন্যায় সঙ্গত না হলে রুহ উচিত নয় বলে রায় দেয়। এরপর নফস বিজয়ী হোক বা রুহ বিজয়ী হোক এটা চলে যায় তৃতীয় বিভাগ 'কলব' এর নিকটে--
৩. কলব হলো Federative বা বাস্তবায়ন বিভাগের মত। সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে যায়। এই কলবের শক্তির দ্বারা নফসকে পরাজিত করতে হয়। শতকরা ৫০ভাগ ক্ষেত্রে অবশ্যই নফসকে পরাজিত করতে হবে এবং বাকিটুকুর জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
.
______________________আত্মার ব্যাধি বা উপসর্গ_______________
মানুষের আত্মা যখন ব্যাধিগ্রস্ত হয় তখন নিম্মোক্ত উপসর্গগুলো প্রতিভাত হয়।
1.লোভ লালসা করা
2 অতি লোভ, বেশি আশা করা
3.গোসা, রাগ ও ক্রোধ করা
4.কিজ্ব, মিথ্যা বলা
5.গীবত, পরনিন্দা করা
6.হাসাদ, হিংসা-বিদ্বেষ করা
7.বুখ্ল, কৃপণতা করা আট.
8.রিয়া, লোক দেখানো
9.ওজব, নিজ পছন্দ করা
10.কিবর, অহংকার করা
11.হিকদ, পরশ্রীকাতরতা
12.হুব্বে মাল, সম্পদের ভালোবাসা
13. হুব্বে জাহ, সম্মানের লোভ
14. হুব্বে দুনিয়া, দুনিয়ার ভালোবাসা।
আত্মশুদ্ধি বা আত্মার চিকিতসা।
.
আত্মশুদ্বিকে আরবী ভাষায় তাযকিয়াতুন নফস বলা হয়। এখানে তাযকিয়াতুন কথাটি ঝায়িয়ুন হতে নির্গত হয়েছে যার অর্থ হল পবিত্র,নিষ্পাপ।আর তাযকিয়াতুন অর্থ হল পরিশুদ্ব করা,পাক করা, উদ্বুদ্ব করা এবং উন্নত করা। আর নফস এর অর্থ হল আত্মা।
.
আত্মশুদ্বির উপায়সমূহঃ
আত্মাকে বেশ কয়েকটি অবস্থায় বিশুদ্বতা অর্জন করা যায়। যেভাগে আত্মিক পরিশুদ্বতা অর্জন করা যায় তা নিম্নরুপঃ
১. ঈমান পরিশুদ্বকরনঃ
তাযকিয়াতুন নফসের চাবি হল ঈমান।আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনলে আত্মশুদ্বি হবে না।ঈমানদারদের জন্যেই আত্মশুদ্বি।কাফিরদের জন্য আত্মশুদ্বি নয়।সত্যিকারের আত্মশুদ্বি অর্জন করতে হলে ঈমানকে তাজা এবং শক্তিশালী করতে হবে।আর এই ঈমানকে তাজা করার জন্য ইলেম অর্জন করতে হবে।ইলম ছাড়া ঈমান কখনও তাজা হবে না।আল্লাহ বলেন,
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। আলাকঃ১-৫] এবং সঠিকভাবে তাউহিদের পরিচয় লাভ করা। তাউহিদ না জানলে ঈমানদারের দাবী করেও মুশরিক হয়ে থাকতে পারে।
.
২. তাকওয়াঃ তাকওয়া শব্দের অর্থ হল আল্লাহকে ভয় করা,সাবধান থাকে,সতর্ক থাকা,বিরত থাকা ইত্যাদি।শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ পাকের ভয়ে যাবতীয় পাপাকার্য থেকে বিরত থাকের নাম হল তাকওয়া।তাকওয়ার দ্বারা যেকেউ নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ব করতে পারে।।আল্লাহ বলেন,
“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ্ তাদের সাথে রয়েছেন”। [বাকারাঃ১৯৪]
“পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে,তার ঠিকানা হবে জান্নাত”। [নাযিয়াতঃ৪০-৪১]
৩.তওবাঃ
তওবা অর্থ হল অনুতপ্ত হওয়া,লজ্জিত হওয়া, ফিরে আসা,প্রত্যাবর্তন করা ইত্যাদি।অর্থাৎ,আল্লাহের হুকুম অমান্য করে বা সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তি কর্তৃক চরম অনুশোচিত হয়ে আল্লাহর কাছে অপরাধ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বিনয়ের সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করার নাম হল তওবা। অর্থাৎ,গুনাহ করার পর সেখান তা থেকে যদি কেউ পরিত্রান পেতে চায় এরজন্য তাকে আল্লাহের কাছে সর্বপ্রথম একনিষ্ঠভাবে তওবা করতে হবে যে আরধনার মাধ্যমে যেকেউ আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য লাভ এবং আত্মপরিশুদ্বতা অর্জন করতে পারে।তওবার মানে শুধু এই না যে সে পাপের জন্য কেবল ক্ষমা চাবে না বরং সে পাপ কাজটি না করার জন্য সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে।অন্যথায় তা তওবা হবে। আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন”[বাকারাঃ২২২]
রাসূলে করীম (সাঃ) বলেন, “তওবাকারীদের কোন গুনাহ থাকে না।।”
অর্থাৎ, তওবার দ্বারা অতি সহজে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়।
৪.তাওয়াক্কুলঃ
সর্বাবস্থায় এক আল্লাহের উপর কেবল নির্ভর হওয়াকে তাওয়াক্কুল বলা হয়।তাওয়াক্কুলের ধারনা তাওহীদ হতে এসেছে।এক সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর নির্ভর করা ছাড়া আর অন্য কোন শক্তি উপর নির্ভর করা ইসলামবিরোধী।ইমাম গাযযালি(র.) বলেন,”তাওয়াক্কুলের অবস্থা তিন ধরনের হয়।প্রথম অবস্থা হল এমন যে সে সাধারণভাবে আল্লাহের উপর নির্ভর করবে।দ্বিতীয়ত,তাওয়াক্কুল্কারী ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে যে একজন শিশু তার প্রতি ঠিক যেমন নির্ভর করে অর্থাৎ তার মাতা ছাড়া আর কারও আশ্রয় লাভ করে না ঠিক তদ্রুপ ঐ ব্যক্তি আল্লাহের প্রতি এমন নির্ভর করে থাকবেন। আর সবশেষ স্তর হল এমন যে সে পৃথিবীর কোন কিছুর প্রতি মুখাপেক্ষী নয় এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর প্রতি।আত্মশুদ্বির জন্য এটি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। রাসূল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা এমনভাবে তাওয়াক্কুল যেমনিভাবে একটি পাখি আল্লাহের প্রতি তাওয়াক্কুল করে।অর্থাৎ সে সকালে বের হয় অনাহারে আর বিকালে ঘরে ফিরবার পূর্বে পেটপূর্ণ হয়ে ফিরে আসে”। [তিরমিযী]
আল্লাহ বলেন,
“এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।” [তওবাঃ১২৯]
.
৫. ইখলাসঃ
মুমীনগণ হৃদ্বের পবিত্রতা ও সরলতা রক্ষা করে চলে।তারা সর্বদা আল্লাহের ধ্যানে মশগুল থাকে।তারা তাদের চিন্তা-ধারার সময় আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে আনেন না।যাবতীয় সন্দেহযুক্ত কাজ বর্জন,বিবেকবিরোধী কাজ বর্জন করা এবং যা আল্লাহ থেকে দূরে নিয়ে যায় এমন কাজ বর্জন করা পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম সহায়ক।আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন ও পার্থিব মোহ এড়ানোর মাধ্যমে মূমীনগণ অন্তরে পবিত্রতা অর্জন করেন।আল্লাহ বলেন,
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্যে।” [আনআমঃ১৯২]
রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন,“ইখলাসওয়ালাদের জন্য সুসংবাদ হোক।তারা অন্ধকারে চেরাগস্বরুপ।তাদের দ্বারা কঠিন হতে কঠিন ফিৎনা দূর হয়”।[বায়হাকি]
৬. যিকিরঃ
যিকির মানেই আল্লাহকে স্মরণ করা। সকল কাজ সুন্নাত তরীকায় সম্পাদিত হলেই তা যিকিরে পরিণত হবে। নামায, রোজা,হজ্ব সব কিছুর মধ্যই যিকির আছে। তবে লিসানি বা যবানের সর্বত্তোম যিকির হলো কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত।
যে সকল জায়গায় যে মাসনুন দুআগুলি আছে তা আদায় করাও যিকির।
যিকিরের অনেক ফযিলত আছে।
আল্লাহ বলেন,
“সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো” [বাকারাঃ১৫২]
“ মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর এবং সকাল বিকাল আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা কর”।[আহযাবঃ৪১-৪২]
কুরআন তিলাওয়াতের আরো গুরুত্ব-
কুরআন তিলওয়াত হল নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত।কুরআন তিলওয়াতের মাধ্যমে একজন বান্দার সাথে আল্লাহ পাকের কথোপকন হয় এবং যিকিরের মর্যাদা লাভ করতে পারে।তার মানবিক গুণাবলী বৃদ্বি পায়।রাসূল(সাঃ) বলেন, “লোহার উপর যেমন মরীচা পড়ে তেমনিভাবে মানুষের অন্তরের উপর মরীচা পড়ে।আর এই মরীচা দূর করার উপায় হল বেশি বেশি করে কুরআন তিলওয়াত এবং মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা।”
৭. সুন্নাতকে অনুসরণঃ সুন্নাত অর্থ হল পথ।রাসূল(সাঃ)এর পথকে অনুসরণ করাকে সুন্নাত বলা হয়।সুন্নাতকে অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর একজন প্রিয়বান্দা আত্মশুদ্বি অর্জন করতে পারে।মুসলমান হিসেবে সুন্নাতকে অনুসরণ করা সকলের জন্য জরুরি।আল্লাহ বলেন,
“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ্ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন।” [ইমরানঃ১৩১]
“যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহ্রই হুকুম মান্য করল।”[নিসাঃ৮০]
৮. নেক আমল করাঃ আত্মশুদ্বি করার আরেকটি বিশেষ রাস্তা হল নেক আমল করা।শুধুমাত্র ঈমান থাকলে হবে না।ঈমানের দাবী অনুযায়ী কাজ করতে হবে।আর মানব সৃষ্টির অন্যতম লক্ষ্য হল আল্লাহ পাকের জন্য ইবাদত তথা নেক আমল করবে।এই ইবাদত –বন্দেগীর দ্বারা একজন বান্দা আত্মশুদ্বি অর্জন করতে পারে।আল্লাহ বলেন,
“আমি জীন এবং ইনসানকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য।” [যারিয়াতঃ৫৫]
.
১০. সালাত আদায়,যাকাত প্রদান,সিয়াম সাধনা এবং হজ্জ পালনঃ সালাত,সিয়াম,হজ্জ এবং যাকাত হল ইসলামের পঞ্চসম্ভের ভিতর অন্যতম।পারতপক্ষে এসকল আমল ছাড়া কেউ কখনও মুসলিম থাকতে পারে না।এসকল আমলসমূহের দ্বারা আত্মশুদ্বি অর্জন করা যায়। এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসে অসংখ্য উদ্বৃতি পাওয়া যায়।তা হলঃ
“নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে।”[আনকাবূতঃ৪৫]
“তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহকর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে”।[তওবাঃ১০৩]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।” [বাকারাঃ১৮৩]
.
১১. সবর করাঃ সবর অর্থ হল ধৈর্য।আর ধৈর্য হল ঐ বিষয়টি যার সাহায্যে একজন মানষ তার বিপদ-আপদ,সুখে-দুখে,ক্ষুধা-তৃষ্ণায়,অত্যাচার-অবিচার ইত্যাদি সর্বাবস্থায় এক আল্লাহের ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকবে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের পথ অনুসরণ করে।ধৈর্যের তিনটি স্তর রয়েছে।এক ধরনের ধৈর্য আছে যাতে মানুষের ভিতর কখন সবর থাকে আবার কখন থাকে না।আবার আরেকটি স্তর হল কখনো মন্দ অবস্থায় সে দিশেহারা হবে না।আর সর্বশেষ স্তরটি হল এমন যে সে কখনো দুঃখ-কষ্টের জন্য কখনও বিচলিত হবে না।এ সর্বশেষ স্তরের দ্বারা যে কেউ তার এই সবরের গুণে সূফিবাদের চরম লক্ষে পৌছে যায়।ইমাম গাযযালী (র.) বলেন, “ধৈর্য হল শয়তানের প্ররোচনা অ আত্মার নিম্নতর প্রবৃত্তি সম্পর্কে হুশিয়ারীতে পূর্ণ বিশ্বাস”। সবরের দ্বারা যে আল্লাহ পাকের ভালবাসা একান্তভাবে অর্জন করা যায় তা নিমোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমানিত হয়। আল্লাহ বলেন,
“হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ্ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।”[বাকারা]
.
১২. শোকর আদায় করাঃ শোকর শব্দের অর্থ হল কৃতজ্ঞতা।আল্লাহ পাক একজন মানষকে যে হাত,পা।চোখ,নাক,কান,মুখ,বাতাস,রিযিক,পানি দিয়েছে তার জন্য আল্লাহের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নাম হল সাধারণভাবে শোকর।শোকর আদায়ের মধ্য দিয়ে একজন বান্দা আত্মশুদ্বিতা অর্জন করতে পারে।আল্লাহ বলেন,
“যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব” [ইব্রাহীমঃ৭]
.
১৩. আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণঃ একজন শিক্ষকের প্রতি তার ছাত্র পুরোপুরিভাবে আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত পূর্ণ শিক্ষা অর্জন করতে পারে না তেমনিভাবে আল্লাহের প্রতি সকল ক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য না করা পর্যন্ত সে পরিপূর্ণ মারিফত অর্জন করতে পারবে না।তাই তাই আত্মশুদ্বির অন্যতম উপায় হল অন্যতম লক্ষ্য হল এক আল্লাহের প্রতি আত্মসমর্পণ করা।
.
১৪. পশুত্ব চরিত্র পরিবর্জনঃ শয়তান হল মানুষের চির শত্রু।শয়তান সর্বদা মানুষকে বিভিন্ন ধরনের পাপাচারে লিপ্ত হতে উদ্বুদ্ব করে।এর দ্বারা কখনও আত্মশুদ্বি সম্ভভপর নয়।তাই আত্মশুদ্বি অর্জনের জন্য গীবত করা,মিথ্যা বলা,অপবাদ দেওয়া,উপহাস খাওয়া,সুদ খাওয়া,ঘুষ খাওয়া,ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদির মত জঘন্য অপরাধ হতে নিজেকে সার্বক্ষণিক মুক্ত রাখতে হবে।আল্লাহ বলেন,
“যে নিজেকে (আত্মাকে) শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনে রেথ হয়”। [শামসঃ৯-১০]
.
১৫. আত্মাকে স্বাভাবিক রাখাঃ আত্মাকে পাপমুক্ত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা অন্তরে বিশুদ্বতা অর্জন করতে পারে।রাসূল(সাঃ) বলেছেন,
“শরীরের দেহে একটি মাংস আছে যদই তা পরিশুদ্ব হয় তবে গোটা শরীর পরিশুদ্ব হয়।আর যদি তা খারাপ হয়,তবে সমস্ত শরীরই খারাপ হয়।মনে রেখো তা হল কাল্ব বা দিল”।[বুখারী ও মুসলিম]
অর্থাৎ, মানুষকে চারিত্রিক দিক হতে পবিত্র রাখার জন্য অন্তরের পরিশুদ্বতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
.
১৬ . পাপ হতে মুক্ত রাখাঃ নিজেকে কেউ যাবতীয় পাপকার্য থকে বিরত থাকার মাধ্যমে আত্মশুদ্বি অর্জন করতে পারে।রাসূল (সাঃ) বলেন,“মু’মিন যখন কোন পাপ করে তখন তার অন্তরে কালো দাগ পড়ে।সে যদি ক্ষমা চায় তাহলে তা দূর হয়ে যায়।”
.
১৭. আল্লাহের গুণে গুণান্বিতঃ আল্লাহ পাকের কতিপয় গুণাবলী যার গুণে গুণ্বানিত হয়ে আত্মশুদ্বি অর্জন করা যায়।আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর গুণে গুণ্বানিত হও।”
.
১৮. দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সম্পাদনঃ দাওয়াত এবং তাবলীগী কাজের দ্বারা আত্মশুদ্বি অর্জন করা যায়।আল্লাহ বলেন,
“ঐ ব্যক্তির চেয়ে আর উত্তম কথা কার হতে পারে যে কথা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে আর নিজে নেক আমল করে আর বলে আমি মুসলমানদের একজন।”[হামীম-সিজদাহঃ৩১]
.
উল্লেখিত খুলাসা আলোচনা আমরা জানলাম আল্লাহ আমাদের আমল করার তাউফিক দান করুন। আমীন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন