বিষয়:উম্মতের উপর রসূলের ছয়টি বড় অনুগ্রহ


শ্রদ্ধেয় উপস্থিতি
ঈসায়ী সষ্ঠ শতক ছিলো খৃস্টধর্মের শেষ সময়। এ সময় মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ সা, জন্মগ্রহণ করেন। এ-যুগটা ছিলো জুলুম অত্যাচারে এতো বেশি জর্জরিত যে, মনে হবে গোটা মানবতাই যেন আত্মহত্যা করতে উদ্যোত।
আমরা খবরের কাগজে প্রায়ই পড়ে থাকি যে, অমুক দেশে কোন ব্যক্তি জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে সমাজের প্রতি ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যা করেছে। কেউ বিষ খেয়েছে তো কেউ ফ্যানের সাথে দড়ি ঝুলিয়ে গলায় ফাস পড়েছে। কখনো তো এমনও শোনা যায় যে, আত্মহত্যা করতে গিয়ে নিজের শরীর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।

অথচ আত্মহত্যা সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা মারাত্মক একটি গুনাহ, তবুও কিছু মানুষ জীবনের বিষণœতায় নিঃশেষ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
তবে একটি বিষয় এই যে, আত্মহত্যা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির মাঝেই সীমাবদ্ধ। এটা আত্মহত্যাকারীর অপরাধ। এই পাপের প্রায়ঃশ্চিত্ত শুধু তাকেই করতে হবে। কিন্তু ছয়শ শতকে মানব সমাজের এতো করুণ ও মর্মান্তিক অবস্থা হয়েছিল যে, গোটা মানবজাতিই যেন আত্মহত্যার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিল।
ধনী বলুন কি গরিব, আরবীয় হোক বা অনারবী, কৃষ্ণ হোক বা শুভ্র মানব গোষ্ঠীর এমন কোন সদস্য ছিল না যে, আত্মহত্যার জন্য প্রস্তুতি নেয়নি। মানবসম্প্রদায় তখন জীবন ও সমাজ থেকে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার দিকে ছুটে চলছিল। ঐতিহাসিকরা জাহেলি যুগের অবস্থা ও চিত্র তুলে ধরবার প্রয়াস চালিয়েছেন। মূর্তীপূজা ও পাথরপূজার কথা লিখেছেন। লিখেছেন মদের প্রতি তখনকার মানুষের সীমাহীন নেশা ও নারী সম্ভোগের এবং যিনা-ব্যভিচারের অশ্রাব্য কাহিনী। তাদের স্বভাব-চরিত্র যে কত নিচে পড়ে গিয়েছিল তাও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন।
যামানায়ে জাহেলিয়্যাতের মানুষরা আপন কন্যাসন্তানকে নির্দয়ভাবে দাফন করে দিত, নিজের মাকে সেবাদাসী বানাতেও লজ্জিত হতো না। কিন্তু এতসব ইতিহাস লেখার পরও পরবর্তীদের সামনে সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের পুরা চিত্র ঐতিহাসিকরা তুলে ধরতে পারেননি।
সমস্যা শুধু এতটুকু ছিল না যে, এক নির্দয় পিতা লোকলজ্জার ভয়ে আপন কন্যাকে দাফন করতো। প্রকৃত সমস্যা এই ছিল যে, গোটা মনুষ্যজাতি আপন আপন সন্তানদেরকে জীবিত দাফন করছিল। আর এ সমস্যা শুধু আরবের মাঝেই সীমিত ছিল না, বরং পুরা মানবজাতিকে বেষ্টন করে ফেলেছিল।
সে অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের যথাযথ চিত্র যদি কেউ অঙ্কন করে থাকেন তাহলে তিনি হলেন মহান আল্লাহ তাআলা। কোরআন বলছে, হে মানব সম্প্রদায়, তোমরা আগুনের সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্যোত হয়েছিলে। এবং আশংকা দেখা দিয়েছিল যে, সে আগুনের সাগর তোমাদের সবাইকে গ্রাস করে নিবে। মহান আরহামুর রাহিমিনের তোমাদের প্রতি করুণা হলো। তাই তিনি রাসূল সা,এর মত মহান ব্যক্তিত্বকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করে তোমাদেরকে নতুন জীবন দান করলেন। যে মহান ব্যক্তির দীল মানব দরদে কানায় কানায় পূর্ণ। যিনি প্রত্যেক মানুষের প্রতি তার নিজের থেকেও বেশি কল্যাণকামী। যিনি আগুনে ঝাপিয়ে পড়া পোকাগুলোকে কোমর ধরে ধরে বাচানোর চেষ্টা করেছেন। যিনি উম্মতের মুক্তির জন্য রাতের পর রাত কেদে কেদে কাটিয়েছেন। যিনি কাটার জবাবে ফুল দিয়েছেন। যিনি সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে সম্পর্ক জুড়েছেন।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করছেন,
স্মরণ করো যখন তোমরা ছিলে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের দ্বারপ্রান্তে। এরপর তিনিই তোমাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করেছেন।
এই মহান ব্যক্তিটা কে যিনি মানুষকে ও মানবতাকে মুক্তির সৌভাগ্য দান করলেন।
ইনিই হলেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা,। যিনি মানব সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে একান্ত দরদের সাথে বলছেন, হো মানব সকল! আল্লাহ তাআলা আমাকে যে দাওয়াত ও হেদায়েত দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার দৃষ্টান্ত হলো এমন ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন জ্বালিয়েছে। আর অসংখ্য পোকা-মাকড় সেই আগুনে চারদিক থেকে ঝাপ দিতে উদ্যোত হচ্ছে। আর লোকটি সেগুলোকে বাচানোর জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছে। তোমরাও অনুরূপ অগ্নিগর্তে ঝাপ দিতে চাইছ আর আমি তোমাদের কোমর ধরে ধরে বাচানোর চেষ্ট করছি। অথচ তোমরা সেই রক্ষাকারীকে গালমন্দ কর, তাকে কষ্ট দাও, তাকে বয়কট কর, তাকে ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত কর।
আমাদের প্রিয় নবী এমন সময় ধরার বুকে এসেছিলেন যখন মানবজাতি নিজ অস্তিত্বের অসারতা ও অনুপোকারিতার ঘোষণা নিজ যবানেই প্রদান করছিল। সে মানুষগুলোর বুকে মনুষ্য-হৃদয় ছিল না, ছিল পশুর হিং¯্র মন। অপরকে নির্যাতন করতে ও কষ্ট দিতে তারা এত মজা পেত যত মজা দুনিয়ার সবচেয়ে সুস্বাদু খাবারে পাওয়া যায়।
আরবদের কথা বাদ দিন। তারা তো ছিল যুদ্ধবাজ, হিং¯্র। বর্বর আর অজ্ঞ। লড়াই-ঝগড়া ছিল তাদের পেশা। প্রতিশোধ ও হত্যা-লুণ্ঠন ছিল তাদের নেশা। ছিন্তাই ডাকাতি ছিল তাদের উপার্জনের অন্যতম উপায়।
আপনি বরং তৎকালিন রোমের ইতিহাস পাঠ করুন। যাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রশংসায় ইতিহাসের পাতা ভরপুর। যাদের আইন-বিজ্ঞানকে আজো উল্লেখ করা হয়। আপনারা লেকি রচিত ইউরোপের ইতিহাস পাঠ করুন। দেখতে পাবেন। শুধু লেকি নয়, সকল ইউরোপের ইতিহাস রচয়িতার ইতিহাস দেখুন। তারা সবাই লিখেছেন, রোমীয়দের নিকট সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিল সাইয়াফী। সাইয়াফী হলো এমন একটি খেলা যাতে একজন যোদ্ধাকে হিং¯্র পশুর সাথে লড়াই করতে বাধ্য করা হয়। একটি বিরাট স্টেডিয়ামে হাজারে হাজারে দর্শক একত্রিত হতো। রাজা-রাজরাদের বিশেষ আসন থাকত। এরপর দুজন মানুষের মাঝে মরণপণ লড়াই শুরু হতো। এরপর বিজয়ীকে কোন হিং¯্র ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে ছেড়ে দেয়া হতো। আর দর্শক সাড়িতে বসে সবাই তামাশা দেখতো। আর তাদের নিকট সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হতো যখন কোন যোদ্ধা আহত রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে তড়পাতে থাকত। সে সময় দর্শকরা সোল্লাসে ফেটে পড়তো। তাদের উল্লাস-ধ্বনি স্টেডিয়াম ছাড়িয়ে সারা শহরময় প্রতিধ্বনিত হতো।
মানবতা যখন এমন মূমুর্ষ অবস্থায় পৌছে গিয়েছিল তখনই মানুষকে আলো ও সুন্দর জীবনের পথ দেখাতে ধরায় আগমন হয় প্রিয়নবী [সা] এর। তার আগমনে মৃতপ্রায় মানবতা ফিরে পায় নতুন জীবন । মানবজাতি লাভ করে নতুন উদ্যম, নতুন অনুভূতি, সুন্দর-সঠিক উপলব্ধি। ফিরে পায় মর্যাদা ও শান্তিময় এক নতুন পৃথিবী।
মানব জাতির উপর রাসূলে কারিম সা,এর ইহসান ও অনুগ্রহের কোন শেষ নেই। সেসব অনুগ্রহ থেকে আমি আজ মাত্র ছয়টি বড় অনুগ্রহ নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করবো।
১.রাসূলে কারিম [সা]এর সবচেয়ে বড় ইহসান
রাসূল [সা]এর সবচেয়ে বড় ইহসান হলো তার মাধ্যমে দুনিয়ার তাবত মানুষ তাওহিদের মহা নেয়ামত লাভ করেছে। তাওহীদ হলো এমন এক বিশ্বাস যা মৃতকে জীবন দান করে। রোগাক্রান্তকে সুস্থতা দান করে। দুর্বলকে সবল ও দাসকে বাদশাহ বানায়। সমাজের হীন অসহায় মানুষগুলোকে অহংকারী দাম্ভীকদের সামনে শীর উচু করে চলার শক্তি দান করে।
এ হল ঐ বিশ্বাস যা মানুষের সকল আশা-ভরসাকে এক একক সত্ত্বার সাথে মিলিত করে। তাওহীদের বিশ্বাসী বান্দা মাত্র একজন সত্ত্বার সাথেই নিজের সম্পর্ক জুড়ে নেয়। সেই মহান সত্ত্বা ছাড়া সে কাউকে ভয় পায় না। তাওহীদে পরিপূর্ণ কোন মানুষ নিজের আচলকে সেই এক অদ্বিতীয় সত্ত্বা ব্যতীত দ্বিতীয় কারো সামনে বিছায় না। সেই সত্ত্বা ব্যতীত অন্য কারো সামনে সে মাথা নোয়ায় না। সে সত্ত্বা ব্যতীত অন্য কাউকে সে প্রয়োজন পূরণকারী ও সাহায্যকারী ভাবে না।
একটি আশ্চর্য কথা
বড় আশ্চর্য লাগে যে, মানুষ নিজের মেধা ও শক্তির গর্ব করে। যে কাব্য-দর্শন-সাহিত্য আর রাজনৈতিক কুশলতা প্রদর্শন করে অহংকার করে। যে মানুষ কওমের পর কওম ও দেশের পর দেশকে নিজের গোলামি ও দাসত্বের জিঞ্জিরে আবদ্ধ করতে পারে। যে মানুষ পাথরের পাহাড় কেটে পথ তৈরী করে আর সমুদ্রের জলরাশিকে করে নিজের অনুগত। সেই মানুষই যখন মনুষত্ববোধ হারিয়ে ফেলে তখন সেই আবার নিজের চেয়ে দুর্বল ও নির্জীব বস্তুর উপাসনা করতে থাকে। জড় পদার্থের সামনে মাথা নোয়ায়। এমনকি সামান্য কীট-পতঙ্গ ও জন্তু-জানোয়ারকে খোদা ভাবতে থাকে। মানুষ তখন জিন ও শয়তানকে প্রয়োজন পূরণকারী জ্ঞান করতে থাকে।
রাসূলের শিক্ষা
বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত মহানবী [সা] বিভ্রান্ত পথভ্রষ্ট মানব জাতিকে সোজ সঠিক পথ দেখিয়েছেন। তিনিই ঘোষণা দিয়েছেন যে, আল্লাহ ব্যতীত দ্বিতীয় কেউই এবাদতের উপযুক্ত নয়। কোরআনের ভাষায়-আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কেউ এবাদতের হকদার নয়। তিনি চিরঞ্জীব ও সংরক্ষণকারী। না তন্দ্রা তাকে স্পর্শ করতে পারে, না নিদ্রা।সুরা বাকারা:২৫৫
অপর আয়াতে এরশাদ হচ্ছে-তিনি তোমাদের সকলের রব এবং তোমাদের পূর্ববর্তী বাপ দাদাদেরও রব।
তার কোন সন্তান নেই, নেই কোন শরিক ও সাহায্যকারী। কোরআনের ভাষায়-আপনি বলুন, সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। এবং তার রাজত্বে নেই কোন শরিক। এবং তার নেই কোন ওলী।সুরা ইসরা:১১১
আসমান ও তাতে স্থিত গ্রহ-নক্ষত্র তিনিই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলছেন,‘সুমহান সেই সত্ত্বা যিনি আকাশের বুকে সৃষ্টি করেছেন অনেক গ্রহ ও সেখানে বানিয়েছেন দীপ্তিময় সূর্য ও আলোকময় চাদ।সুরা ফুরকান:৬১
তিনিই যমীনকে স্থির করে বানিয়েছেন আর আকাশকে ছাদ হিসেবে তুলে রেখেছেন। এবং মানুষের চেহারা ও গঠনকে করেছেন সবচেয়ে সুন্দর। কোরআনে বলা হচ্ছে-
আল্লাহ তাআলা ঐ সত্ত্বা যিনি তোমাদের জন্য যমিনকে স্থীর বানিয়েছেন আর আসমানকে বানিয়েছেন সুউচ্চ করে। এবং তোমাদের আকৃতি দান করেছেন ও আকৃতিকে অত্যন্ত নিপুণ ও সুন্দর করে সৃজন করেছেন। আর তোমাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছেন। সুরা শুআরা:২৬
রাত ও দিন এবং চাদ ও সূর্য একমাত্র আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। এজন্য চাদ-সূর্যকে নয় তাদের সৃষ্টিকর্তাকে সিজদা করো হে মানব জাতি! এরশাদ হচ্ছে- তার কুদরতের নিদর্শনগুলোর মাঝে রয়েছে রাত ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকেও সিজদা করো না, চাদকেও না। সিজদা করো ঐ আল্লাহকে যিনি চাদ ও সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন।সুরা ফুসসিলাত:৩৭
বীজ থেকে শস্য, তৃণ থেকে বৃক্ষ ও মৃত থেকে জীবিত, জীবিত থেকে মৃতকে তিনিই পয়দা করেন। এজন্য এবাদতের একমাত্র হকদার তিনিই। ঘোষণা হচ্ছে-নিশ্চয় আল্লাহ বীজ ও আটি থেকে অংকুর সৃষ্টিকারী। তিনি জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন। এবং মৃতকে জীবিত থেকে বের করেন। তিনিই আল্লাহ। অতএব তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে কোথায় ঘুরছো? সুরা আনআম: ৯৫
তিনিই সর্বশ্রোতা। সর্বজ্ঞানী। গায়েবের ইলম একমাত্র তারই রয়েছে। তিনি জল ও স্থলের সমস্ত মাখলুকের অবস্থা জানেন। গাছ থেকে যে পাতা পড়ে যায় তার সম্পর্কেও জানেন। যমীনের অন্ধকারে যে শুষ্ক ও আর্দ্র বস্তু আছে সব সম্পর্কে তার জ্ঞান রয়েছে। তার কাছেই আছে অদৃশ্যের চাবিকাঠি, তিনি ছাড়া কেউ তা জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন। আর কোন বীজ জমীনের অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন ভেজা ও শুকনো বস্তু পতিত হয় না, কিন্তু তিনি তা জানেন।
সকল মাখলুককে রিযিক তিনিই দান করেন। এরশাদ হচ্ছে- যমীনে যত প্রাণী বিচরণ করে তাদের সবার রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর।সুরা হুদ:৬
ইজ্জত ও যিল্লত, সম্মান ও অপমান সবই তার ক্ষমতাধীন। ঘোষণা হচ্ছে- আপনি যাকে চান তাকে ইজ্জত দান করেন। এবং যাকে চান তাকে অপদস্থ করেন।সুরা আলে ইমরান:২৬
সকল সৃষ্টিজগত তারই হুকুমের অধীন। আল্লাহ বলেন, ‘সমস্ত হুকুম আল্লাহ তাআলার কুদরতের অধীন। সুরা ইউসুফ:৪০
পূর্ব ও পশ্চিমের মালিকও তিনি। সুরা বাকারা:১১৫
যাকে ইচ্ছা তাকে রিযিকের প্রশস্ততা দান করেন। যাকে ইচ্ছা তাকে রিযিকের সংকীর্ণতায় রাখেন। তিনিই হাসান। তিনিই কাদান। জীবনও তিনি দান করেন। মৃত্যুও তিনি দান করেন। সুরা নাজম:৪৩
আরো এরশাদ হচ্ছে- তিনি যদি আপনাকে কোন কষ্ট দেন তিনি ব্যতীত কেউ তা অপসারণ করতে পারবে না। আর তিনি যদি আপনাকে কোন কল্যাণ দান করেন তিনি ব্যতীত কেউ তা প্রতিহত করতে পারবে না।সুরা ইউনূস:১০৭
এক কথায় সকল বস্তু ও প্রাণীই তার কর্তৃত্বাধীন।
মানুষ কী বনে গিয়েছে
এ হলো এমন এক বিশ্বাস যার মাধ্যমে শিরকের রোগ দূর করে আল্লাহর রাসূল অন্তরকে সুস্থ করেছেন। আকীদার এ পরিবর্তনে মানুষের দীল সম্পূর্ণই বদলে গিয়েছে। যে মানুষটি নফসের গোলামী করছিল সে এখন নফসের উপর কর্তৃত্ব করছে।
তাওহীদের এই আকীদা-বিশ্বাস মানুষের দুনিয়াই পরিবর্তন করে দিল। বিরান অন্তর আবাদ হয়ে গেল। মৃত জযবা ও অনুভূতিগুলো জেগে উঠল। শত শত বছর পর মানুষ বুঝতে পারল যে, সে মানুষ। তাওহীদের বিশ্বাসের কারণে সকল প্রকার গোলামী থেকে মানুষ মুক্ত-স্বাধীন হয়ে গেল। সব রকম ভয়-ভিতি দূরিভূত হয়ে গেল। মানুষ নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক ও পুরা দুনিয়ার সুব্যবস্থাপক ভাবতে শিখল। রাসূলে খোদা [সা] তাওহীদের বার্তা এতোটা মজবুত ও আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থাপন করলেন যে, কাফের মুশরিকরা নিজেদের ভ্রান্ত কুফুরি আকীদার কারণে লজ্জিত হতে লাগল। মুশরিকরা তাদের আকীদা-বিশ্বাসকে বিভিন্নভাবে ধামাচাপা দিতে লাগল।
যে সমাজে এক সময় একত্ববাদী হওয়া বড় অপরাধের বিষয় ছিল সে সমাজে মুশরিক ও বহু-ইশ্বরবাদী হওয়া মুশকিল হয়ে গেল। পবিত্র কোরআন কারিম দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করল যে, মুশরিকদের শরীর ও সত্ত্বা নাপাক-অপবিত্র। তাদেরকে বাইতুল্লাহর কাছেও ঘেষতে দেয়া যাবে না। {সুরা তওবা:২৮}
আজ যেসব বিজ্ঞানীরা চাদ সূর্যের উপর গবেষণা করছে। এবং বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করছে তাদের অবশ্য কর্তব্য হল আল্লাহর রাসূলের শোকরিয়া আদায় করা। কারণ তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, চাদ-সূর্য ও গ্রহ-নক্ষত্রকে মানুষের জন্য অনুগত করে দেয়া হয়েছে। {সুরা যুমার:৫}
রাসূল যদি উপরোক্ত ঘোষণা না দিতেন তাহলে সমগ্র মানবজাতি আধারের মাঝেই পড়ে থাকত। রাসূলের যবানে কোরআনের অমোঘ ঘোষণা বর্ণিত হয়েছে-তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়োজিত করে দিয়েছেন। প্রত্যেকটিই আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।’ {সুরা যুমার:৫}
এ ঘোষণার পূর্বে মানুষ মনে করত সূর্য ও চন্দ্র মহা ঐশরিক দেবতা। চন্দ্র ও সূর্যকে গবেষণার বস্তু বানিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সামান্যতম কল্পনাও সে যুগের মানুষের মাঝে ছিল না।
তো মানব জাতির উপর রাসূলে কারিম সা,এর সবচেয়ে বড় ও মহান অনুগ্রহ হলো তিনি মানবজাতিকে আকীদায়ে তাওহীদ তথা এক আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাস শিখিয়েছেন। আর এর মাধ্যমে মানুষকে পরিণত করেছেন মুক্ত স্বাধীন মর্যাদাপূর্ণ প্রকৃত মানুষে।
২.রাসূলের দ্বিতীয় বড় ইহসান
মানবজাতির উপর রাসূলে কারিম [সা]এর দ্বিতীয় বড় অনুগ্রহ হল তিনি মানবজাতিকে এক ও অভিন্ন মর্যাদার অধিকারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। মানুষ ছিলো জাতি ও গোত্র পরিচয়ে শতধা বিভক্ত। কেউ ছিল উচ্চ মর্যাদার কেউবা নি¤œ শ্রেণীর। একদল ছিল ক্ষমতাধর শাসক, একদল দুর্বল শাসিত। ইহুদী ও খৃস্টানদের দাবী ছিল তারা মানবজাতির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ। যে কথা কোরআনেও উল্লিখিত হয়েছে-আর ইহুদী-খৃস্টানরা বলে আমরা আল্লাহর সন্তান ও তার প্রিয়দের অন্তর্ভূক্ত।’ {সুরা মায়েদা:১৮}
মিশরের বাদশাহরা বলত আমরা সূর্য দেবতার অবতার। সেসময় প্রাচীন হিন্দুস্তানে এমন মানুষও ছিল যারা নিজেদেরকে সূর্যের আত্মীয় বলে দাবী করতো। কেউ কেউ বলতো আমি সূর্যের সন্তান। কেউ বা বলত আমি চন্দ্রের সন্তান।
ইরানের রাজন্যরা বলতো আমাদের দেহে খোদার রক্ত প্রবাহমান। শুধু রাজা-বাদশাহরাই নয় ইরানের সাধারণ জনগণও বিশ্বাস করতো যে, তাদের রাজাদের জন্মপ্রক্রিয়ায় কোন খোদায়ী পবিত্র শক্তির প্রভাব আছে।
চীনের শাসকরা নিজেদেরকে আকাশের পুত্র বলে দাবী করতো। চীনের জনগণের বিশ্বাস ছিল আকাশ হলো নর আর যমীন হলো মাদী। এদুয়ের মিলনে প্রথম যে সন্তান হয়েছে সেই তাদের প্রথম বাদশাহ।
আরবরা সারা দুনিয়ার মানুষকে ঘৃণার স্বরে আজম বলতো। অর্থাৎ জাতিগতভাবে তারাই শ্রেষ্ঠ। সমগ্র দুনিয়ার মানুষ তাদের থেকে অধম। আরবের মধ্যে আবার কোরাইশরা নিজেদেরকে অন্যান্য আরবদের চেয়েও অধিক মর্যাদাশীল বলে গর্ব করতো।
এই যখন ছিল দুনিয়ার হালত। সকল মানুষ দুর্বল ও সবল, অশুর ও দাস, জালেম ও মজলুম, উত্তম ও নিকৃষ্ট বিভিন্ন প্রকারে বিভক্ত ছিল তখন মানবতার মুক্তির দূত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা করলেন- হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে একজন অপরজনের সাথে সুপরিচিত হতে পার। তোমাদের মাঝে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মর্যাদাধিকারী ও সম্মানিত সেই যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করে।’ {সুরা হুজুরাত:১৩}
যে মর্যাদাপূর্ণ সুরাকে কোরআনের ভূমিকা বলা হয় এবং কোরআনের যে অংশকে সবচেয়ে বেশি পাঠ করা হয় সেই সুরা ফাতেহার প্রথম আয়াত দেখি। তাতে বলা হচ্ছে- আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন অর্থাৎ সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর। যিনি জগতসমূহের রব ও প্রতিপালক।
চীন ও হিন্দুস্তান, ইরান ও আরব, রোম ও পারস্য, শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ, শক্তিমান ও দুর্বল সবার প্রতিপালক তিনিই। এজন্য গোত্র-বর্ণ-দেশ বা অন্য কোন ভিত্তিতে মানুষের মাঝে কোন তফাৎ নেই। যদি মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য করাই হয় তাহলে তা হবে তাকওয়া ও শিষ্টাচারের ভিত্তিতে। অর্থাৎ তাকওয়াওয়ালা শিষ্টাচার ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় ও সম্মানীয়।
এক ঐতিহাসিক ঘোষণা
শুনুন সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা যা রাসূলে খোদা [সা] বিদায় হজ্জের সময় প্রদান করেছিলেন। সে সময় রাসূলের চারপাশে ছিল সাহাবায়ে কেরাম [রা]এর এক বিরাট কাফেলা। প্রায় সোয়া লক্ষ্য অনুসারীর এক অনন্য জামাত। হুজুর বয়ানের জন্য দাড়ালেন। সকল সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
হে আমার উম্মত!
তোমাদের রব ও প্রতিপালক একজন। তোমাদের পিতাও একজন। তোমরা সবাই আদমের সন্তান। বাবা আদমের সৃষ্টি মাটি থেকে। [সুতরাং তোমাদের মূলও মাটি] তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট সম্মানিত যে তাকওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী। কোন আজমের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই একমাত্র তাকওয়ার বিবেচনা ছাড়া।
যারা নিজেদেরকে খোদার সন্তান দাবী করতো তাদের জন্য এ-ঘোষণা ছিল চরম চপেটাঘাত। এ-ঐতিহাসিক সমতার ঘোষণা বাতিল করে দিয়েছিল তাদের দাবী যারা নিজেদেরকে সূর্যের সন্তান পরিচয় দিত। সমাজে যারা দুষ্ট, অসৎ, অন্যায়কারী হয়েও নিজেদেরকে নেতা বানিয়ে বসে ছিল এ ঘোষণা তাদের অপচেষ্টাকে ধুলিস্যাৎ করে দেয়। এ ঘোষণা এ প্রথাকেও বাতিল করে দেয় যে, বাদশাহর ছেলেই বাদশাহ হবে আর নেতার ছেলেই হবে নেতা।
হযরতের ঘোষণার মর্ম হলো, ‘হে মানব জাতি! তোমাদের রব ও প্রতিপালক একজন তোমাদের আব্ব ও পিতাও একজন। সুতরাং তোমাদের মাঝে এত বিভেদ ও তারতম্য হবে কোন যুক্তিতে? আরবী উত্তম অনারবী নিকৃষ্ট, ইরানীরা মর্যাদাশীল আর রোমীয়রা লাঞ্ছিত, রাজা-বাদশাহরা উচ্চ শ্রেণীর আর প্রজারা নি¤œ-দলিত এ ধারণার কোনই ভিত্তি নেই। এটা সম্পূর্ণ ভ্রষ্টতা।
ভাই ভাই হয়ে যাও
এ ঘোষণার দ্বারা বংশে ও এলাকায় ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও সকল সাহাবায়ে কেরাম পরস্পরে আপন ভাইয়ের মতো হয়ে গিয়েছিলেন।
আপনারা জানেন, হযরত সালমান রা, ছিল পারস্যের। বিলাল রা,ছিলেন হাবশার। সোহাইব রা, ছিলেন রোমের। আদ্দাস রা, ছিলেন নিনেওয়ার। আবু যর রা, ছিলেন গিফার গোত্রের। হযরত তোফায়েল ছিলেন দাওস গোত্রের। আদি রা, ছিলেন তাঈ গোত্রের। যাম্মাদ রা, ছিলেন আযদী। তারা যে যে দেশের বা গোত্রেরও ছিলেন না কেন সবাই ছিলেন পরস্পরে ভাইয়ের মতো। এজন্য কোরআনে ঘোষণা হচ্ছে-ইন্নামাল মুমিনু-না ইখওয়াহ। অর্থাৎ সকল মুমিন পরস্পরে ভাইতুল্য।
সাহাবায়ে কেরামের আমল দেখেই বোঝা যেত যে তাদের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক কেমন গভীর ও অকৃত্রিম ছিল। স্বয়ং নিজে ক্ষুধার্থ থাকতেন কিন্তু অপরকে খাওয়াতেন। উচ্চ বংশের ও নি¤œ বংশের মাঝে কোন তফাৎ ছিল না। উভয় গোত্রের মানুষ একই সাথে একই কাতারে পাশাপাশি নামাজে দাড়াতেন। একই দোস্তরখানে বসে খাবার খেতেন। একই বর্তনে পানি পান করতেন।
উপরোক্ত আলোচনার সারকথা হলো মানব জাতির উপর আল্লাহর রাসূলের দ্বিতীয় অনুগ্রহ হলো তিনি সকল মানুষকে সমান মর্যাদায় আসীন করেছেন। সবার মাঝে সমতা প্রতিষ্ঠা করেছেন। জাতিগত ও দেশগত সকল পরিচয়কে মুছে দিয়ে একই পরিচয়ে সবাইকে পরিচিত করেছিলেন-সবাই এক আদমের সন্তান, সবাই এক আল্লাহর বান্দা।
৩.রাসূলের তৃতীয় অনুগ্রহ
মানবজাতির উপর আল্লাহর রাসূলের তৃতীয় অনুগ্রহ হলো তিনি এ-ধরাতে মানুষের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সকল লাঞ্ছনা গঞ্জনা থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছেন। রাসূলের আগমনের পূর্বে কিছু জন্তু-জানোয়ারকে সম্মান প্রদান করা হতো। কিছু বৃক্ষকে মর্যাদা প্রদান করা আবশ্যক মনে করা হতো। মাটি ও পাথরের তৈরী মূর্তীকে তাজীম করা হতো। কিন্তু মানুষকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা করা হতো না। সেসব বৃক্ষ-জানোয়ার আর পাথরের প্রতীমার পদতলে মানুষের রক্ত উৎসর্গ করা হতো। মানুষকে জবাই করা হতো দেবতার উদ্দেশ্যে।
মানবতার এমন করুণ দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে একমাত্র মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ [সা] মানুষের দীল ও দেমাগে এবং মন ও মননে একথার বীজ রোপন করেছিলেন যে, মানুষই সবচেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদার উপযুক্ত। ধরার বুকে যত মাখলুক রয়েছে সকলকে সৃজন করা হয়েছে মানুষের খেদমতের জন্য।
কোরআনের ভাষায় তিনি ঘোষণা করছেন-
তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি পৃথিবীর সকল বস্তু তোমাদের কল্যাণার্থে সৃষ্টি করেছেন।’ {সুরা বাকারা:২৯}
আর ঘোষণা দিলেন, মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে আল্লাহর খলীফা হিসেবে। বর্ণনা করা হচ্ছে- স্মরণ করুন, যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি যমিনে খলীফা বানাতে চাই।’ {সুরা বাকারা:২০}
মানুষকে সৃষ্টি করে তার সম্মানার্থে ফেরেশতাদেরকে সিজদা করতে হুকুম করেছেন আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ বলছেন-স্মরণ করুন, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো। তখন তারা সকলই সিজদা করল। ইবলীস ব্যতীত।’ {সুরা বাকারা:৩৪}
এছাড়াও মহান সৃষ্টিকর্তা আপন যবানেই মানব জাতিকে সম্মানিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তার পবিত্র কালামে বলেন, আমি মানবজাতিকে সম্মানিত বানিয়েছি। এবং তাকে পরিচালিত করেছি জলে ও স্থলে। তাদেরকে সকল উত্তম বস্তু রিযিক হিসেবে প্রদান করেছি। আর তাদেরকে অনেকের উপর বিশেষ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। {সুরা বনি ইসরাইল:৭০}
আল্লাহর পরিবার কারা
মানুষের সম্মান ও মর্যাদা উচ্চ হওয়ার জন্য এর চেয়ে উত্তম বিষয় আর কী হতে পারে যে, আল্লাহর রাসূল সা, মানুষকে আল্লাহর পরিবার বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আল্লাহর প্রিয় রাসূল বলেন- মানব জাতি আল্লাহর পরিবারের সদস্য। সুতরাং আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর পরিবারের প্রতি ইহসান করে।
অপর একটি হাদিসে আরো সুস্পষ্ট ও অনুপম বর্ণনায় মানুষের সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সা, বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে বনী আদম! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম। অথচ তুমি আমার সেবা করনি। বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তো একজন সাধারণ বান্দা। আমি কীভাবে আপনার সেবা করতে পারতাম! তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। অথচ তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, সে অসুস্থ বান্দার সেবা করলে আমাকে তার পাশে পেতে? এরপর আল্লাহ বলবেন, হে আমার বান্দা! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। অথচ তুমি আমাকে খাবার দাওনি। বান্দা অবাক নেত্রে তাকিয়ে বলবে, আপনি তো জগতের পালনকর্তা। আমি আপনাকে কীভাবে খাবার দিতাম! তখন পরওয়ারদিগার বলবেন, তুমি কি শোন নাই ঐ ভুখা গরিব লোকটির ক্ষুধার আর্তনাদ। তাকে যদি তুমি খাওয়াতে তাহলে তা আমাকেই খাওয়ানো হতো। এরপর আবারো এরশাদ করবেন, হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমায় পান করাও নাই। বান্দা বলবে! আয় আল্লাহ! আমি আপনাকে কীভাবে পানি পান করাবো? আপনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা? আল্লাহ বলবেন, তোমার কাছে আমার এক তৃষ্ণার্ত বান্দা পানি চেয়েছিল অথচ তুমি তাকে পানি দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তাকে পানি দিলে আমাকেই পানি পান করানো হতো। {সহী মুসলিম}
যে ধর্মে শিরকের মূল ছিন্ন করে তাওহিদের বীজ বপন করা হয়েছে সে ধর্মের মাঝে এভাবে মানুষের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলা দ্বারাই বুঝে আসে ইসলাম কত মহান ধর্ম, এবং ইসলামের নবী মানবতাকে কত উচ্চ মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। মানবজাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আল্লাহর রাসূল সা, এরশাদ করেন, তোমরা যদি আল্লাহর রহমত পেতে চাও তাহলে অপরের উপর দয়া করো।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা, থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা, এরশাদ করেন, যারা অপরের উপর দয়া করে পরম দয়ালু আল্লাহ তাআলাও তাদের উপর দয়া করেন। তোমরা যমীনবাসীর উপর দয়া করো তাহলে আসমানের মালিক তোমাদের উপর দয়া করবেন।
মাওলানা আলতাফ হোসাইন হালি একটি শেরে বলেছেন,
মেহেরবানি করো যমীনে যে আছে, তাহলে তোমার উপর খোদা মেহেরবান হবেন আরশ হতে।
আমাদের ফকীররা ভিক্ষার সময় এই শেরটা খুউব আওড়ায়। এবং ভিক্ষা বিষয়ক কোন আলোচনার সময় উপরোক্ত হাদিসদ্বয় উল্লেখ করে। অথচ ভিক্ষা চাওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক একটি অপরাধ। এসব হাদিস ভিক্ষা করার প্রতি উৎসাহিত করে না। বরং ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে আমরা যেন পরস্পরের সহিত মর্যাদাপূর্ণ দয়ার আচরণ করতে পারি সে বিষয়ে তাকীদ করে।
সমাজের চিত্র কেমন হবে
যে সমাজে আল্লাহর রাসূল [সা]এর উক্ত হাদিসের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হবে না, যে সমাজে মানুষকে যথাযথ কদর ও মূল্যায়ন করা হবে না সে সমাজে অর্থ-সম্পদ আর ক্ষমতা-প্রতিপত্তির কদর হবে মানুষের কদর হবে না।
ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখুন জালেম রাজা-বাদশাহদের আচরণ কেমন ছিল? রাজা বের হতো তো দেশের পর দেশ, জনপদের পর জনপদ বরবাদ করে, ধ্বংস করে ক্ষান্ত হতো।
আলেকজেন্ডার বের হয়েছে তো হত্যা করতে করতে হিন্দুস্তান পর্যন্ত চলে এসেছে। কত শত জাতির ধ্বংস সাধন করে যে সে এসেছে তার ইয়ত্তা নেই। বাদশাহ জুলিয়স সিজার এমনভাবে রাজ্য দখলের জন্য বের হয়েছিল যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। সে মানুষকে হিং¯্র জানোয়ারের মতো শিকার করতো।
সভ্যতা সংস্কৃতির উন্নতির এই সময়ে দুইটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে তাকান। এমন এমন লোমহর্ষক ঘটনা দেখা যাবে যাতে আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়। কিন্তু ইউরোপওয়ালাদের মাথা নত হয় না। যারা যুদ্ধ করেছে তাদের মাঝে অনুতপ্ততা জাগে না। উল্টো তারাই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা,কে খুনী রক্তপিয়াসী বলে বেড়ায়। আর নিজেদেরকে খুউব মানবদরদী ও মানবতাবাদী বলে গলাবাজি করে। অথচ আমাদের প্রিয় নবী সা,এর মোবারক জীবনে সাতাশটি গযওয়া ও ষাটটি সারিয়্যা সংঘটিত হয়েছিল। এতগুলো যুদ্ধে নিহত হয়েছিল মাত্র হাজারখানিক। এর বেশি নয়। এর মাঝে আবার মুসলমানরাও আছে। কিন্তু এসব যুদ্ধের ফলে আরব দ্বীপে এমন শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যে, একজন নারী সুদূর কাদিসিয়া থেকে বাইতুল্লাহ শরিফে হজ্জ করতে আসতো। সম্পূর্ণ একা একা। তবুও তার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি হতো না। চলার পথে তার ভয়ের বস্তু আল্লাহ ব্যতীত কেউ ছিল না।
অথচ ইউরোপে যে বিশ্বযুদ্ধগুলো সংঘটিত হয়েছিল সে ব্যাপারে ইনসাইক্লোপিডিয়ার লেখক লিখেছেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল চৌষট্টি লাখ। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা সারে তিন কোটি। কিন্তু এর চেয়েও দুঃখের বিষয় হলো এতো মানুষ মরেও সে দেশ ও সমাজে না মানবতা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, না শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এতো ভয়াবহ মারাত্মক যুদ্ধদ্বয়ের পরও সমাজ থেকে জালেম ও জুলুম দূর হয়নি। এবং সমাজে মাজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তির আহাজারি বাকিই ছিল।
যে আলোচনা করছিলাম। মানবজাতির উপর রাসূলুল্লাহ সা,এর তৃতীয় বিরাট অনুগ্রহ হলো তিনি ধরার বুকে মানুষের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মানুষকে শিখিয়েছেন অপর মানুষকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
৪.চতুর্থ ইহসান
মানবজাতির উপর রাসূলে কারিম সা,এর চতুর্থ অনুগ্রহ হলো তিনি হতাশার আধারে নিমজ্জিত মানবজাতিকে আশার আলো দান করেছেন। মানুষকে তার অন্তর্নিহিত শক্তি ও যোগ্যতার ব্যাপারে সচেতন করেছেন। বিভিন্ন উদভ্রান্ত ধর্মীয় কুসংস্কারে নিরাশ ও আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ জীবনের আশা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল।
হিন্দুস্তানে মানুষের মাঝে ছিল তানাসুখের বিশ্বাস। তানাসুখের বিশ্বাস বলতে বোঝায় প্রত্যেক মানুষ তার পূর্বজন্মের কারো প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবে। যদিও এই অপরাধ বা পাপ সে করেনি। এই বিশ্বাস মানুষকে মজবুর মানসিকভাবে দুর্বল করে রেখেছিল।
খৃস্টানদের বিশ্বাস এই ছিল যে, প্রত্যেক মানুষ জন্মগ্রহণ করে পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে। হযরত ঈসা মাসিহ সকল খৃস্টানের পাপের কাফফারা প্রদান করেছেন।
সমাজে কিছু মানুষ ছিল যারা ধর্মের কারণে পাপীকে চরম ঘৃণা করতো। এবং পাপীদেরকে এ-বলে নিরাশ করে দিতো যে, তোমাদের ক্ষমার কোন সুযোগই নেই। আল্লাহ তোমাদের উপর সবসময়ের জন্যই নারাজ ও অসন্তুষ্ট।
এসবের বিপরীতে মানবতার নবী মুহাম্মাদ সা, ঘোষণা দিলেন যে, জন্মগতভাবে প্রত্যেক মানবসন্তানই নিষ্পাপ নিরপরাধ। কোন মানব সন্তানই জন্মের সময় গুনাহগার থাকে না। এবং একজন অপরজনের পাপের বোঝা বহন করে না। সে যে ভালো বা মন্দ কাজ করবে শুধু তার বদলাই তাকে দেয়া হবে।
পবিত্র কোরআন কারিমে ঘোষণা করা হচ্ছে-
কোন ব্যক্তি অপরের পাপের বোঝা বহন করবে না। আর মানুষ তাই পাবে যা সে চেষ্টা করে অর্জন করবে। তার চেষ্টার ফল অচিরেই দেখানো হবে। এরপর তাকে যথাযথ প্রতিদান দান করা হবে। সুরা নাজম:৪১
রাসূলে কারিম সা, একথাও এরশাদ করেছেন যে, কেউ যদি গুনাহ করে তাহলে তার হতাশ হবার কোন কারণ নেই। গুনাহ যত বড়ই হোক না কেন। মওতের পূর্ব পর্যন্ত বান্দার জন্য তওবার দরজা খোলা রয়েছে। আল্লাহর রাসূল তওবার বিষয়টাকে এমনভাবে ঘোষণা দিয়েছেন ও প্রচার করেছেন যে, বলা হয় দুনিয়াতে তওবার প্রতিষ্ঠাকারী একমাত্র তিনিই। এজন্য নবী কারিম সা,এর একটি নাম হলো নাবিউত্তাওবাহ। অর্থাৎ তওবার নবী।
রাসূলে খোদা সা, তওবা ইস্তিগফারের এত ফাজায়েল বর্ণনা করেছেন যে, বড় বড় পীর-বুযুর্গ ও এবাদগুজার বান্দারও সাচ্চা দিলে তওবাকারী গুনাহগারের প্রতি ঈর্ষা জাগে।
দেখুন কোরআনের বর্ণনা। যা দেখলে তওবাকারী গুনাহগারের প্রতি ঘৃণার পরিবর্তে নিজের প্রতি আফসোস পয়দা হবে।
পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হচ্ছে-
হে আমার বান্দাগণ যারা পাপাচার করে নিজেদের উপর জুলুম করেছো তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি নিরতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। সুরা যুমার:৫৩
সুরা আলে ইমরানে গুনাহগার বান্দাকে হিম্মদ ও সাহস প্রদান করার জন্য জান্নাত ও মাগফেরাতের দিকে ছুটতে বলা হচ্ছে-
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ছুটে চলো যার প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও যমীনের সমান। যা তৈরী করা হয়েছে মুমিনদের জন্য। যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা অভয় অবস্থায়ই সদকা করে। এবং ক্রোধ সংবরণ করে। এবং মানুষকে মাফ করে দেয়। আল্লাহ অনুগ্রহশীলদেরকে ভালোবাসেন। যারা কোন পাপ করে ফেললে বা নিজেদের উপর জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ব্যতীত কে আছে ক্ষমা করার। আর তারা জেনে শুনে তাদের পাপের পুনরাবৃত্তি করে না। এমন লোকদের প্রতিদান হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও এমন সব জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। তারা চিরকাল সেথায় থাকবে। নেক ব্যক্তিদের প্রতিদান কতই না উত্তম। সুরা আলে ইমরান:১৩৩-১৩৬
সুপ্রিয় উপস্থিতি!
পবিত্র কোরআন মাজিদের একটি সুরার নাম আছে সুরা তওবা। উক্ত সুরার আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার সেসব বান্দাদের কথা আলোচনা করেছেন যাদের সাথে আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। সেই জামাতের মাঝে এবাদতগুজার বান্দা আছে। রুকু-সিজদাকারী বান্দা আছে। কিন্তু সেই মোবারক জামাতে সবার পূর্বে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলো তওবাকারী। এরশাদ হচ্ছে-
যারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগুজার, রোজাপালনকারী, এবং মন্দকাজে বাধা প্রদানকারী ও আল্লাহর নির্ধারিত সীমা সংরক্ষণকারী। আপনি এই সকল মুমিনদেরকে সুসংবাদ দান করুন। সুরা তওবা:১১২
আমাদের মাঝেও বর্তমানে কিছু মানুষ আছে যারা তওবা করার পরও গুনাহগার ব্যক্তিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। তাদের দিকে অঙ্গুলি তুলে তারা বলে বেড়ায়, উহ্ খুউব বুযুর্গ হয়ে গেছে! আমরা জানি না তোমরা কেমন ছিলে! কিন্তু মহান দয়ালু আল্লাহ তাআলা কারো দীলে কষ্ট দেননা। আল্লাহ তাআলা বান্দার দীলে প্রশস্ততা ও প্রফুল্লতা দান করেন। আল্লাহ তাআলার দীলদারির একটি উদাহরণ আপনাদেরকে দেখাই। এই ঘটনা হাদিসের কিতাবসমূহে আছে।
তিনজন সাহাবী কোন ওযর ছাড়াই তাবুকের যুদ্ধে শরিক হলেন না। হযরত কাব বিন মালেক, মুরারাহ বিন রবি ও হিলাল ইবনে উমাইয়া। তিনোজনই ছিলেন অত্যন্ত মুখলিস ও নিষ্ঠাবান। এ যুদ্ধে শরিক না হওয়াদের মাঝে আরো অনেকেই ছিল। কিন্তু তারা সবাই ছিল মুনাফেক। রাসূলের নিকট মিথ্যা ওযর পেশ করে তারা গা বাচিয়ে নিল।
কিন্তু পাক্কা মুমিন এই তিন সাহাবী কোন মিথ্যার আশ্রয় নিলেন না। এরা সত্য সত্যই রাসূলকে বললেন, আমাদের না-যাওয়ার কোন ওযর ছিল না। নফসের ধোকায় পড়ে আমরা যুদ্ধে শরিক হইনি।
আল্লাহর রাসূল এই তিনজনকে বয়কট করার নির্দেশ দিলেন। সাহাবা রা, ছিলেন নবী সা,এর হুকুমের গোলাম। যখনই আল্লাহর রাসূল এই তিন সাহাবীর সাথে কথাবার্তা বন্ধ করে দিলেন তখন সাধারণ সাহাবীরা তো বটেই বরং এঁদের একান্ত নিকটের বন্ধুরাও একেবারে অপরিচিত হয়ে গেল।
এভাবে পঞ্চাশ রাত অতিবাহিত হলো। এরপর আসমান থেকে মহান প্রভুর ক্ষমার ঘোষণা এল। কিন্তু তাদের মন যেন ভেঙ্গে না পড়ে এজন্য শুধু তাদের তিনজনের তওবা কবুলের কথা বলা হল না। বরং এঁদের তওবার পূর্বে সাইয়্যিদুল মুরসালিন সা,এর তওবা এবং সকল আনসার ও মুহাজিরদের মাফ করার ঘোষণা বর্ণিত হল। এসব সাহাবায়ে কেরাম রা, তাবুকের যুদ্ধে শরিক ছিলেন।
ওলামায়ে কেরামগণ বলেছেন, এই তিন সাহাবীর তওবার কথা বলতে গিয়ে সাধারণ সকল সাহাবীর নাম উল্লেখ করার কারণ হলো তিনজন যেন মন খারাপ না করে। এই আয়াতের মূল উদ্দেশ্যই ছিল সেই তিন সাহাবীর তওবার কারণে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করা। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-
আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহের দৃষ্টি দান করলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা এমন সংকটের সময় নবীর অনুগামী হয়েছিল যে, তাদের মধ্যকার একদলের অন্তর বিচলিত হবার উপক্রম হয়েছিল। অতপর আল্লাহ তাআলা তাহাদের অবস্থার প্রতি অনুগ্রহ-দৃষ্টি করলেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি অতিশয় ¯œহশীল ও করুণাময়। আর সেই তিন ব্যক্তির উপরও অনুগ্রহের দৃষ্টি দান করলেন, যাদের বিষয়টা মুলতবি রাখা হয়েছিল। এ পর্যন্ত যে, যখন ভূ-পৃষ্ঠ আপন প্রশস্ততা সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। এবং তারা নিজেরাও নিজেদের জীবনের উপর বিতৃষ্ণ হয়ে পড়েছিল। এবং তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহর পাকড়াও হতে মুক্তির কোন পথ নেই তার দিকে প্রত্যাবর্তন করা ব্যতীত। অতপর তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন যাতে তারা ভবিষ্যতেও আল্লাহর প্রতি রুজু থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। সুরা তাওবা:১১৭-১১৮
আর নয় হতাশা
আপনারা যদি বিভিন্ন ধর্মদর্শন লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন হয়তো সেগুলোর কোন কোনটি পাপীকে সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত ও গাফেল করে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের পাপের বোঝা তাদেরকে বহন করতে হবে না অন্য কেউ সেই পাপের বোঝা বহন করে কাফফরা দিয়ে দিবে। এবং খোদার কাছে শুপারিস করে তাকে বাচিয়ে দিবে।
নয়তো সেই ধর্ম পাপীকে এমন ঘৃণা করে যে, তাকে রহমত ও মাগফেরাত থেকে পুরাই নিরাশ করে দেয়। তারা পাপীকে বলে তোমাদের নাজাতের মুক্তির কোনই পথ নেই। যে যামানায় ইসলামের প্রকাশ হয়েছিল সে যামানায় সারা দুনিয়ার এমনই অবস্থা ছিল যে, মানুষ তার নিজের প্রতি, তার মুক্তির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার অসীম রহমতের প্রতি নিরাশ হয়ে গিয়েছিল। ইসলাম এসে নৈরাশ্যের কালো মেঘ দূর করে দিয়েছে। আর সবাইকে দান করেছে নতুন সঞ্জীবনী শক্তি। ইসলাম এসে চোর-ডাকাত, যিনাকার-ব্যভিচার, জালেম-অত্যাচারী, মদখোর ও নেশাখোর সবার সামনে তওবা ও ক্ষমার দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ফলে কতশত ডাকাত বুযুর্গ হয়ে গিয়েছে। কতশত ব্যভীচারী মুত্তাকী-পরহেজগার হয়ে গিয়েছে। কত সহ¯্র নেশাগ্রস্ত আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা হয়েছে। কত সহ¯্র জঘন্য পাপী যামানার শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ হয়েছে।
এমনকি যেই লোকটি সারা জীবন মহান আল্লাহর সাথে পাথর গাছপালাকে শরিক করে চরম অন্যায় করেছে তাদের পর্যন্ত ক্ষমা করে দিয়ে জীবনের আশা ও আত্মবিশ্বাস দান করেছে। চরম হতাশার সাগরে নিমজ্জমান মানবতার প্রতি মহান আল্লাহ কত উদার ও আশা-জাগানিয়া ঘোষণা দান করেছেন-
তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় তার রহমত থেকে শুধুমাত্র কাফেররা নিরাশ হয়। সুরা ইউসুফ:৮৭
সুরা আরাফে আল্লাহ এরশাদ করছেন, ‘আমার রহমত সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে। সুরা আরাফ:১৫৬
নবীগণের একটি বিশেষ সুন্নাত
পবিত্র কালামুল্লাহ এই সংবাদও প্রদান করেছে যে, তওবা ইস্তিগফার করা নবীগণের সুন্নাত। এটা নবীগণের উত্তম চরিত্রের একটি অন্যতম গুণ। হযরত আদম আ, যখন ইজতিহাদী ভুল করলেন তখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন-
হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, আমাদের উপর রহম না করেন তাহলে আমরা চিরক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব। সুরা আরাফ:২৩
হযরত নূহ আ,এর ইস্তিযফারের পদ্ধতি কত সুন্দর ছিল-
হে আমার রব! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, এবং আমার গৃহে যারা মুমিন হয়ে প্রবেশ করবে এবং সকল মুমিন নারী ও পুরুষকে ক্ষমা করে দিন। আর গুনাহগারদের ধ্বংসকে বৃদ্ধি করে দিন। সুরা নূর:২৮
হযরত ইবরাহীম আ, এভাবে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেন-হে আমাদের প্রভু! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে ও সকল মুমিনকে কেয়ামতের দিবসে ক্ষমা করে দিন। সুরা ইবরাহীম:৪১
হযরত মূসা আ,এর ইস্তিগফারের ভাষা ছিল- হে রব! আমাকে ও আমার ভাইকে মাফ করে দিন। এবং আমাদেরকে আপনার রহমতের মাঝে প্রবেশ করিয়ে দিন। আপনিই তো সবার চেয়ে দয়ালু।
এ আলোচনার মূল বক্তব্য এই যে, রহমতুল লিলআলামীন সা,এর মানবজাতির উপর চতুর্থ ইহসান ও অনুগ্রহ হলো তিনি সমগ্র মানবকুলকে হতাশার সাগর থেকে তুলে এনেছেন। আশার চাদর দ্বারা সবাইকে আবৃত করেছেন। ফলে মানুষ আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। নিজের জীবনের প্রতি আশাবাদী হয়ে সকল পাপ ও অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে। এবং মানুষ মহান আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্ক কায়েম করে পরম সাফল্যমন্ডিত হয়েছে।
পঞ্চম অনুগ্রহ
ভাই দোস্ত বুযুর্গ!
আমাদের কথা তো এমনই। কোন কিস্সা কাহিনী জানা নেই। এদিক-সেদিক বেফায়দা আলাপও করতে পারি না। আর এ-ধরনের গালগপ্প করতে মনও সায় দেয় না।
৫.মানবজাতির উপর রাসূলুল্লাহ সা,এর পঞ্চম অনুগ্রহ ও ইহসান হলো তিনি মানবজাতির সামনে দীন ও দুনিয়াকে একই বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অতীতের ধর্মসমূহে দীন ও দুনিয়া দুটি আলাদা বস্তু ও বিষয় ছিল। দীন ছিল শুধু গীর্জায়, দুনিয়া ছিল রাজপ্রাসাদে, দীন ছিল শুধু মন্দিরে আর বাজারে ও ঘরে ছিল শুধুই দুনিয়া। সে সময় দীনদার হতে গেলে দুনিয়াকে বিদায় জানাতে হত। আর দুনিয়াদার হতে গেলে দীনকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হত। দীন ও দুনিয়া ছিল দুটি পৃথক নৌকা। একসাথে এ দুটিতেই পা রাখা অসম্ভব ছিল।
ধর্মগুরুরা সবাইকে বোঝাল যে, আল্লাহকে রাজি করতে হলে দুনিয়ার স্বাদ-আহ্লাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘর-সংসার সব তরক করতে হবে। এমনকি তৎকালিন সমাজে এমন মানুষও ছিল যারা বিবাহ-শাদী ত্যাগ করে, মা-বাবা ও আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, ব্যবসা ও সংসার ছেড়ে দিয়ে বৈরাগী হয়ে যেত। ধর্মগুরুদের ভাষ্যমতে তারা হয়ে যেত খোদার সবচেয়ে পেয়ারা। অথচ অধিকাংশ মানুষের পক্ষে এভাবে দুনিয়াত্যাগী হয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। এজন্য অধিকাংশ মানুষ দীন ও ধর্ম ছেড়ে দিয়ে দুনিয়াদার হয়ে গেল। এ নিয়েই তারা আত্মপ্রশস্ত হয়ে গেল। এ শ্রেণী ভাবতে লাগলো দুনিয়ার সাথে দীন নিয়ে চলা সম্ভব নয়। দীন ও ধর্ম মানতে গেলে দুনিয়ার কোন কাজ করা যাবে না। আর দুনিয়ার বিভিন্ন প্রয়োজন তো আর বাদ দেয়া যাবে না।
মানুষের দীন ও দুনিয়াকে আলাদা করে নেয়া কোন অতীত ইতিহাস নয়। বর্তমান ইউরোপ আমেরিকার দিকে তাকালে বিষয়টা এমনিতেই ক্লিয়ার হয়ে যাবে। ধর্ম ও দুনিয়ার মাঝে এই দ্বন্দের কারণে একসময় মানুষ ধর্মহীন হয়ে নাস্তিক মুরতাদ হয়ে যেতে থাকল।
রাসূলে কারিম সা,এর অপরিসীম অনুগ্রহরাজির মাঝে অন্যতম একটি হলো তিনি যুগযুগ ধরে চলে আসা দীন ও দুনিয়ার মাঝে এই যে, তফাৎ ও সংঘাত একে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করলেন। তিনি মানুষকে বোঝালেন সকল আমলের সওয়াব ও সুফল নির্ভর করে তার নিয়তের উপর। এভাবে তিনি মানুষের গোটা জীবনটাকে এক এবাদত বানিয়ে দিয়েছেন। এবং সারা ভূপৃষ্ঠকে বানিয়ে দিয়েছেন এবাদতখানা।
রাসূল সা, ঘোষণা দিলেন, সকল আমলের সুফল নির্ভর করে নিয়তের উপর। যত জায়েজ কাজই হোকনা কেন তা সত্তাগতভাবে দীনও নয় দুনিয়াও নয়। যে কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য করা হয় তাই হলো দীন, আর যে কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য করা হয় না তাই হলো দুনিয়া।
এজন্য যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য শাসনকার্য পরিচালনা করবে সেও দীনী কাজ করলো। এভাবে রাজনীতি করাও দীন। ব্যবসাও দীন। কাফের জালেমদের সাথে যুদ্ধ করাও দীন। বিবাহ-শাদী করাও দীন। সামাজিক দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়াও দীন। কষ্ট-পরিশ্রম করাও দীন। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কোন ভালো কাজ করাই দীন।
পক্ষান্তরে কাজ যদি একেবারে সবচেয়ে নেক ও উত্তম হয় অথচ নিয়তে শুদ্ধতা না থাকে তাহলে তা দীন হবে না। মানুষকে দেখানোর জন্য কোন নেক কাজ করলেও তা গুনাহ ও পাপের কারণ।
এভাবে নামাজ-রোজা-হজ্জ-যাকাতও দুনিয়াদারী। হিজরত ও জিহাদও দুনিয়াদারী। নিয়ত ভালো না হলে যিকির-তেলোয়াত ও ওয়াজ-নসীহতেরও কোন মূল্য নেই। এজন্যই নিয়তের উপরই সকল কাজের ভিত্তি।
রাসূলুল্লাহ সা, ভূপৃষ্ঠকে এবাদতের জায়গা বানিয়েছেন। শুধু মসজিদেই এবাদত হবে এমন নয়। রাজার শাহী প্রাসাদ আর গরিবের পর্ন কুটির উভয়টিই এবাদতের স্থান হতে পারে। বাজার-দোকান ও ফ্যাক্টরি সবই এবাদতখানা হতে পারে। অমুসলিমদের এবাদত করতে হয় একটি নির্দিষ্ট স্থানে। কিন্তু মুসলামন যেখানে যাবে, যেখানে ওঠা-বসা করবে, যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে তার সবই এবাদতখানা হতে পারে।
মুসলমানের এবাদত হবে আল্লাহর জন্য। মুসলমানের রাজনীতিও হবে আল্লাহর জন্য। তার বন্ধুত্ব-শত্রুতাও হবে আল্লাহর জন্য। তার জীবন ও মরণ সবই আল্লাহর রাজিখুশীর জন্য।
একটু চিন্তা করে দেখি, দীন ও দুনিয়াকে সমন্বয় করে রাসূলুল্লাহ সা, উম্মতের উপর কত বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। তিনি দুনিয়ার সকল শ্রেণীর মানুষকে একই কাতারে দাড় করিয়েছেন। ব্যবসায়ী ও দরবেশ, আমীর ও ফকীর, শাহ-সওয়ার ও প্রহরী কারো মাঝেই কোন তফাত নেই। কেমন ঐক্য সাধন করেছেন দীন ও দুনিয়ার মাঝে, এবাদত ও সিয়াসাতের মাঝে, তাসবী ও তরবারীর মাঝে! সুবহানাল্লাহ।
৬.ষষ্ঠ ইহসান
মানবজাতির উপর আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সা,এর ষষ্ঠ ইহসান ও অনুগ্রহ হলো তিনি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বিস্মৃত মানব জাতিকে তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে খবরদার করেছেন। রাসূলের আগমনের পূর্বে মানব সম্প্রদায় আপন লক্ষ উদ্দেশ্য ভুলে বসেছিল। তাদের স্মরণেই ছিল না যে, তারা কোত্থেকে এসেছে আবার কোথায় যেতে হবে।
সে সময় অতি ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ বস্তুকে মানুষ জীবনের পরম লক্ষ্য বানিয়ে বসেছিল। সেসব বস্তুর জন্যই মানুষ বাচত ও মরত। কিছু মানুষ মনে করতো কামিয়াবী ও সফলতা ধন দৌলতের মাঝেই কেবল রয়েছে। কেউ কেউ মনে করতো চূড়ান্ত সফলতা হলো মানুষের উপর কর্তৃত্ব করা, মানুষের শাসক হওয়া। শত সহ¯্র মানুষের লক্ষ্য ছিল শুধুই দুনিয়ার ভোগ বিলাস ও আনন্দ বিনোদন। অসংখ্য মানুষের গোটা জীবনটাই কাটতো শুধু ডাকাতি ও রাহাজানিতে।
এমন অবস্থায় রাসূলে খোদা সা, গোটা মানবজাতিকে তার প্রকৃত ঠিকানা ও দুনিয়াতে আগমনের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝিয়েছেন। তিনি মানুষের দীলে একথা বসিয়েছেন যে, মানুষের চরম ও পরম লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহ তাআলাকে রাজি খুশী করা, তার সন্তুষ্টি অর্জন করা। তিনি মানবতার সামনে এই দাওয়াত নিয়ে আবির্ভূত হলেন যে, মানুষের এবাদত ও ব্যবসা-বাণিজ্য সবই আল্লাহর জন্য। মানুষের শুধু বাহ্যিক উৎকর্ষ নিয়ে ভাবলে চলবে না, বরং আভ্যন্তরিণ সৌন্দর্য ও উন্নতি নিয়েও ভাবতে হবে। তার নযরে শুধু দুনিয়া থাকলেই চলবে না, তার নযরের সামনে আখেরাতও থাকতে হবে। প্রকাশের ভাষার বর্ণিলতা এনে বারে বারে অসংখ্য স্থানে রাসূলুল্লাহ সা, দুনিয়ার হীনতা ও আখেরাতের প্রশস্ততার বর্ণনা করেছেন। যাতে মানব-হৃদয়ে আখেরাতের ভালোবাসা বসে যায়।
কোরআন কারিম অধ্যয়ন করলে দেখা যায় তাওহীদের পর যে বিষয়টির আলোচনা সবচেয়ে বেশি এসেছে তা হলো আখেরাত। সুরা আনআমে এরশাদ হচ্ছে-
অর্থ: দুনিয়ার জীবন তো খেল-তামাশা ব্যতীত কিছুই নয়। আর আখেরাতের জীবন মুত্তাকিদের জন্য উত্তম ও কল্যাণকর। তারা কি উপলব্ধি করবে না।সুরা আনআম:৩২
সুরা তাওবায় এরশাদ হচ্ছে-
অর্থ:হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হল যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে বলা হয় তখন তোমরা যমিনে ভারী হয়ে বসে থাক। তোমরা কি আখেরাতে জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছ? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার ভোগ-সম্ভার একেবারেই সামান্য।সুরা তওবা:৩৮
অপর একটি স্থানে বর্ণিত হচ্ছে-
অর্থ:তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে আনন্দিত হয়। অথচ দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় অতি সামান্য ভোগ-উপকরণ।সুরা রাদ:২৬
সুরা কিয়ামাতে বর্ণিত হচ্ছে-
অর্থ: খবরদার! তোমরা দুনিয়াকে ভালোবাস। অথচ আখেরাতকে ছেড়ে দাও। যেদিন কিছু চেহারা হাস্যোজ্জ্বল থাকবে। তারা তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে। আর কিছু চেহারা থাকবে মলিন। তারা ভাববে, তাদের সাথে কোমর ভাঙার আচরণ করা হবে।সুরা কিয়ামাহ:২০ থেকে ২৫
এছাড়াও অসংখ্য সুরায় ও আয়াতে কসম খেয়ে খেয়ে আল্লাহ তাআলা আখেরাত ও কেয়ামাতের কথা বয়েছেন।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নফস, রুহ, কলব......পরিচয়, ব্যাধি, প্রতিকার

চৌদ্দশ বছরের আমরা এক কাফেলা

হাদিস ছাড়া শুধু কুরআন অনুসরণ কতটুকু যৌক্তিক