অনুসরণ ও আনুগত্য : কার করবেন কার করবেন না..
কাকে মানবেন কাকে অনুস্বরণ করবেন এগুলো নিয়ে বিভ্রান্ত্রির শেষ নেই। মানতে হবে কুরআনি নির্দেশ। আল্লাহ তাআলা আপানাকে কী বলছেনে একটু দেখুন......
১। সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুসরণ :
সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুসরণই কি সঠিক ? না, সংখ্যাগরিষ্ঠতা সততা ও সঠিকতার মাপকাঠি নয়:
৬:১১৬, ১১৭,
(৬:১১৬) আর হে মুহাম্মাদ ! যদি তুমি দুনিয়ায় বসবাসকারী অধিকাংশ লোকের কথায় চলো তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে৷ তারা তো চলে নিছক আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে এবং তারা কেবল আন্দাজ-অনুমানই করে থাকে৷
২। বাপদাদার অনুসরণ : ( ট্যাগ : ব > বাপ দাদার অনুসরণ)
আমাদের বাপ-দাদারা যাদের ইবাদত করে এসেছে তাদেরকে পরিহার করবো?-৭:৭০,
(মু’মিনুন:৮৩) আমরা এ প্রতিশ্রুতি অনেক শুনেছি এবং আমাদের পূর্বে আমাদের বাপ-দাদারাও শুনে এসেছে৷ এগুলো নিছক পুরাতন কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়৷
(মু’মিনুন:৮৩) আমরা এ প্রতিশ্রুতি অনেক শুনেছি এবং আমাদের পূর্বে আমাদের বাপ-দাদারাও শুনে এসেছে৷ এগুলো নিছক পুরাতন কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়৷
(মু’মিনুন:২৪)..একথা তো আমরা আমাদের বাপদাদাদের আমলে কখনো শুনিনি।
(২১:৫৩) তারা জবাব দিলঃ “আমাদের বাপ-দাদাদেরকে আমরা এ মূর্তিগুলোর ইবাদাতরত অবস্থায় পেয়েছি৷” ৫৪) সে বললো, তোমরাও পথভ্রষ্ট এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যেই অবস্থান করছিল৷”
তারা জববে বললো, “তুমি কি যে পথে আমরা আমাদের বাপ -দাদাদের পেয়েছি সে পথ থেকে আমাদের ফিরিয়ে দিতে এবং যাতে যমীনে তোমাদের দুজনের প্রধান্য কায়েম হয়ে যায়, সে জন্য এসেছো? তোমাদের কথা তো আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত নই”৷-১০:৭৮,
(১১:৬২) আমাদের বাপ-দাদারা যেসব উপাস্যের পূজা করতো তুমি কি তাদের পূজা করা থেকে আমাদের বিরত রাখতে চাচ্ছো ?
বাপ-দাদাদের থেকে যাদের ইবাদাত চলে আসছে তোমরা তাদের ইবাদাত থেকে আমাদের ফেরাতে চাও? -১৪:১০,
বাপদাদার অনুসরণ : ৫:১০৪, ৬:১৪৮, ৭:২৮, ৭:৭০, ৭১, ৯৫, ১৭৩,
রাসুলের অস্বীকারকারীরা বলতো :
আমাদের বাপ-দাদারা যাদের ইবাদত করে এসেছে তাদেরকে পরিহার করবো?-৭:৭০-৭১,
তারপর তাদের দুরবস্থাকে সমৃদ্ধিতে ভরে দিয়েছি৷ ফলে তারা প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং বলতে শুরু করেছে আমাদের পূর্বপুরুষদের ওপরও দুর্দিন ও সুদিনের আনাগোনা চলতো৷ অবশেষে আমি তাদেরকে সহসাই পাকড়াও করেছি৷ অথচ তারা জানতেও পারেনি-৭:৯
(২৮-ক্বাছাছ : ৩৬) তারপর মূসা যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো নিয়ে পৌঁছুলো তখন তারা বললো, এসব বানোয়াট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়৷ আর এসব কথা তো আমরা আমাদের বাপ দাদার কালে কখনো শুনিনি৷৩৭)
(২৭.নামল:৬৭) এ অস্বীকারকারীরা বলে থাকে “ যখন আমরা ও আমাদের বাব দাদারা মাটি হয়ে যাব তখন তাদের সত্যিই কবর থেকে বের করা হবে নাকি?৬৮) এখবর আমাদেরও অনেক দেয়া হয়েছে এবং ইতিপূর্বে আমাদের বাব দাদাদেরকেও অনেক দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এসব নিছক কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়, যা আগের জামানা থেকে শুনে আসছি৷”
(৩১-লোকমান: ২১) আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার আনুগত্য করো তখন তারা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে যে রীতির ওপর পেয়েছি তার আনুগত্য করবো৷ শয়তান যদি তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের দিকেও আহ্বান করতে থাকে তবুও কি তারা তারই আনুগত্য করবে ?
বাপদাদার অন্ধ অনুসরণের কারণে মানুষ শিরকে লিপ্ত হয় :
(২৬.শুআরা:৬৯) আর তাদেরকে ইবরাহীমের কাহিনী শুনিয়ে দাও, ৭০) যখন সে তার বাপ ও তার সম্প্রদায়কে জিজ্ঞেস করেছিল, "তোমরা কিসের পূজা করো?"৭১) তারা বললো, "আমরা কতিপয় মূর্তির পূজা করি এবং তাদের সেবায় আমরা নিমগ্ন থাকি৷৭২) সে জিজ্ঞেস করলো, "তোমরা যখন তাদেরকে ডাকো তখন কি তারা তোমাদের কথা শোনে? ৭৩) অথবা তোমাদের কি কিছু উপকার বা ক্ষতি করে?"৭৪) তারা জবাব দিল, "না, বরং আমরা নিজেদের বাপ-দাদাকে এমনটিই করতে দেখেছি৷"
(অর্থাৎ এরা আমাদের প্রার্থনা , মুনাজাত ও ফরিয়াদ শোনে অথবা আমাদের উপকার বা ক্ষতি করে মনে করে আমরা এদের পূজা করতে শুরু করেছি তা নয়। আমাদের এ পূজা-অর্চনার কারণ এটা নয়। বরং আমাদের এ পূজা-অর্চনার আসল কারণ হচ্ছে , আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে তা এভাবেই চলে আসছে। এভাবে তারা নিজেরাই একথা স্বীকার করে নিয়েছে যে , তাদের ধর্মের পেছনে তাদের পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই। অন্য কথায় তারা যেন বলছিল , তুমি আমাদের কি এমন নতুন কথা বলবে ৷ আমরা নিজেরা দেখছি না এগুলো কাঠ ও পাথরের মূর্তি ৷ আমরা কি জানি না , কাঠ শোনে না এবং পাথর কারো ইচ্ছা পূর্ণ করতে বা ব্যর্থ করে দিতে পারে না ৷ কিন্তু আমাদের শ্রদ্ধেয় পূবপুরুষরা শত শত বছর ধরে বংশ পরস্পরায় এদের পূজা করে আসছে। তোমার মতে তারা সবাই কি বোকা ছিল ৷ তারা এসব নিস্প্রাণ মূর্তিগুলোর পূজা করতো , নিশ্চয়ই এর কোন কারণ থাকবে । কাজেই আমরাও তাদের প্রতি আস্থাশীল হয়ে এ কাজ করছি।) (বিস্তারিত দেখুন : শ > শিরক > শিরকে লিপ্ত হবার কারণ সমূহ )
(১১:১০৯) কাজেই হে নবী! এরা যেসব মাবুদের ইবাদাত কাছে তাদের ব্যাপারে তুমি কোন প্রকার সন্দেহের মধ্যে থেকো না৷ এরা তো (নিছক গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলেছে৷) ঠিক তেমনিভাবে পূজা-অর্চনা করে যাচ্ছে যেমন পূর্বে এদের বাপ-দাদারা করতো৷ আর আমি কিছু কাটাছাঁটা না করেই তাদের অংশ তাদেরকে পুরোপুরি দিয়ে দোবো৷
(১৬:৩৫) এ মুশরিকরা বলে, “আল্লাহ চাইলে তাঁর ছাড়া আর কারো ইবাদাত আমরাও করতাম না, আমাদের বাপ-দাদারাও করতো না এবং তাঁর হুকুম ছাড়া কোনো জিনিসকে হারামও গণ্য করতো না৷” এদের আগের লোকেরাও এমনি ধরনের বাহানাবাজীই চালিয়ে গেছে৷
(১৮:৪) আর যারা বলে, আল্লাহ কাউকে সন্তানরূপে গ্রহণ করেছেন, তাদেরকে (এ কুরআন ) ভয় দেখায়৷৫) এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই এবং তাদের বাপ-দাদারও ছিলো না৷ তাদের মুখ থেকে বেরুনো একথা অত্যন্ত সাংঘাতিক ! তারা নিছক মিথ্যাই বলে৷
শিরক সবচেয়ে বড় পাপ : এমনকি পিতা মাতার অবাধ্য হতে হবে যদি পিতা মাতা শিরক করার জন্য বাধ্য করে :তখন পিতা মাতার কথা মান্য করা যাবে না :
(২৯-আনকাবুত:৮) আমি মানুষকে নিজের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি৷ কিন্তু যদি তারা তোমার ওপর চাপ দেয় যে, তুমি এমন কোন (মা’বুদকে ) আমার সাথে শরীক করো যাকে তুমি (আমার শরীক হিসেবে)জানো না, তাহলে তাদের আনুগত্য করো না৷ ১১ আমার দিকেই তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের জানাবো তোমরা কি করছিলে ৷
১১ . এ আয়াতটি সম্পর্কে মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনা হচ্ছে, এটি হযরত সা'দ ইবনে আবি ওয়াককাস এর ব্যাপারে নাযিল হয়। তার বয়স যখন আঠারো উনিশ বছর তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মা হামনা বিনতে সুফিয়ান (আবু সুফিয়ানের ভাইঝি) যখন জানতে পারে যে. তার ছেলে মুসলমান হয়ে গেছে তখন সে বলে, যতক্ষণ না তুমি মুহাম্মদকে অস্বীকার করবে ততক্ষণ আমি কিছুই পানাহার করবো না এবং ছায়াতেও বসবো না। মায়ের হক আদায় করা তো আল্লাহর হুকুম। কাজেই তুমি আমার কথা না মানলে আল্লাহরও নাফরমানী করবে। একথায় হযরত সা'দ অত্যন্ত পেরেশান হয়ে পড়েন। তিনি রসূলুল্লাহ (সা) এর দরবারে হাজির হয়ে নিজের ঘটনা বর্ণনা করেন। এ ঘটনায় এ আয়াত নাযিল হয়। মক্কা মুআযযামার প্রথম যুগে যেসব যুবক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন হতে পারে তারাও একই ধরনের অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাই সূরা লুকমানেও পূর্ণ শক্তিতে এ বক্তব্যটির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
আলোচ্য সূরার ১৫ আয়াতের বলা হয়েছে, সৃষ্ট জীবের মধ্যে মানুষের মধ্যে মানুষের ওপর মা-বাপের হক হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেই মা- বাপই যদি মানুষকে শিরক করতে বাধ্য করে তাহলে তাদের কথা মেনে নেয়া উচিত নয়। কাজেই এ ক্ষেত্রে অন্য কারো কথায় মানুষের এ ধরনের শিরক করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তারপর শব্দগুলি হচ্ছেঃ 'ওয়া ইন জাহাদাকা' অর্থাৎ যদি তারা দু'জন তোমাকে বাধ্য করার জন্য তাদের পূর্ণশক্তি নিয়োগ করে । এ থেকে জানা গেল , কম পর্যায়ের চাপ প্রয়োগ বা বাপ-মায়ের মধ্য থেকে কোন একজনের চাপ প্রয়োগ আরো সহজে প্রত্যাখান করার যোগ্য। এই সঙ্গে -------"যাকে তুমি আমার শরীক হিসেবে জানো না" বাক্যাংশটিও অনুধাবনযোগ্য। এর মধ্যে তাদের কথা না মানার সপক্ষে একটি শক্তিশালী যুক্তি প্রদান করা হয়েছে। অবশ্যই এটা পিতা-মাতার অধিকার যে, ছেলেমেয়েরা তাদের সেবা করবে, তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে এবং বৈধ বিষয়ে তাদের কথা মেনে চলবে। কিন্তু তাদেরকে এ অধিকার দেয়া হয়নি যে, মানুষ নিজের জ্ঞানের বিরুদ্ধে তাদের অন্ধ অনুসরণ করবে। শুধমাত্র বাপ-মায়ের ধর্ম বলেই তাদের ছেলে বা মেয়ের সেই ধর্ম মেনে চলার কোন কারণ নেই। সন্তান যদি এ জ্ঞান লাভ করে যে, তার বাপ-মায়ের ধর্ম ভুল ও মিথ্যা তাহলে তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে তার সঠিক ধর্ম গ্রহণ করা উচিত এবং তাদের চাপ প্রয়োগের পরও যে পথের ভ্রান্তি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে সে পথ অবলম্বন করা তার উচিত নয়। বাপ-মায়ের সাথে যখন এ ধরনের ব্যবহার করতে হবে তখন দুনিয়ার প্রত্যেক ব্যক্তির সাথেও এ ব্যবহার করা উচিত। যতক্ষণ না কোন ব্যক্তির সত্য পথে থাকা সম্পর্কে জানা যাবে ততক্ষণ তার অনুসরণ করা বৈধ নয়।
হাদীস : রিয়াদুস সালেহীন : সত্যনিষ্ঠা অধ্যায় ::বাপদাদার অন্ধ অনুসরণ ত্যাগ কর :
বই ১ :: হাদিস ৫৬
আবু সুফিয়ান সাখ্র ইবনে হার্ব (রা) এক দীর্ঘ হাদীসে হিরাকলের কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেনঃ হিরাকল জিজ্ঞেস করল যে, নবী তোমাদের কী কী কাজের আদেশ করেন? আবু সুফিয়ান বলেনঃ তিনি (নবী) বলেন; ‘তোমরা একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী (দাসত্ব) করো এবং তার সাথে কোন ব্যাপারে কাউকে শরীক করো না। তোমরা তোমাদের বাপ-দাদা যা বলে গেছেন তা পরিহার করো। পক্ষান্তরে নবী আমাদেরকে নামায, সত্যনিষ্ঠা, ঔদার্য ও মধুর সম্পর্কের আদেশ করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
ধনী পুর্বপূরুষদের সন্তানেরা খুব সহজেই পথভ্রষ্ট হতে পারে :
(ফুরকান:১৮) তারা বলবে, “পাক - পবিত্র আপনার সত্তা ! আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের প্রভুরুপে গ্রহণ করার ক্ষমতাও তো আমাদের ছিল না কিন্তু আপনি এদের এবং এদের বাপ - দাদাদের খুব বেশী জীবনোপকরণ দিয়েছেন, এমনকি এরা শিক্ষা ভুলে গিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যপীড়িত হয়েছে৷
পিতা কি পুত্রকে অনুসরণ করবে ? কারণ কি ?
(১৯:৪৩) আব্বাজান! আমার কাছে এমন এক জ্ঞান এসেছে যা আপনার কাছে আসেনি, আপনি আমার অনুসরণ করে চলুন, আমি আপনাকে সোজাপথ দেখিয়ে দেবো৷
৩।মনের কামনা বাসনার অনুসরণ / প্রবৃত্তির অনুসরণ / খেয়াল খুশির অনুসরণ :
(২৫.ফুরকান:৪৩) কখনো কি তুমি সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো, যে তার নিজের প্রবৃত্তির কামনাকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে পার৷
(প্রবৃত্তির কামনাকে মাবুদে পরিণত করার মানে হচ্ছে , তার পূজা করা। আসলে এটাও ঠিক মূর্তি পূজা করা বা কোন সৃষ্টিকে উপাস্য পরিণত করার মতই শির্ক । আবু উমামাহ রেওয়ায়াত করেছেন , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
مَا تَحْتَ ظِلِّ السَّمَاءِ مِنْ إِلَهٍ يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللَّهِ، أَعْظَمُ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مِنْ هَوًى مُتَّبَعٍ
"এ আকাশের নীচে যতগুলো উপাস্যের উপাসনা করা হয়ে থাকে , তাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপাস্য হচ্ছে এমন প্রবৃত্তির কামনা করা যার অনুসরণ করা হয়।" (তাবরানী) [আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন আল কাহ্ফ ৫০ টীকা।])
(১৮:২৮) .... যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির কামনা বাসনার অনুসরণ করেছে এবং যার কর্মপদ্ধতি কখনো উগ্র, কখনো উদাসীন৷
(১৯:৫৯) তারপর এদের পর এমন নালায়েক লোকেরা এদের স্থলাভিষিক্ত হলো যারা নামায নষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির কামনার দাসত্ব করলো৷ তাই শীঘ্রই তারা গোমরাহীর পরিণামের মুখোমুখি হবে৷
(২০:১৬) কাজেই যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান আনে না এবং নিজের প্রবৃত্তির দাস হয়ে গেছে সে যেন তোমাকে সে সময়ের চিন্তা থেকে নিবৃত্ত না করে৷ অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে৷
এ হেদায়াতের সাথে আমি এ আরবী ফরমান তোমার প্রতি নাযিল করেছি৷ এখন তোমার কাছে যে জ্ঞান এসে গেছে তা সত্ত্বেও যদি তুমি লোকদের খেয়াল খুশীর তাবেদারী করো তাহলে আল্লাহর মোকাবিলায় তোমার কোন সহায়ও থাকবে না, আর কেউ তাঁর পাকড়াও থেকেও তোমাকে বাঁচাতে পারবে না৷(রা’দ:৩৭)
(২৮-ক্বাছাছ : ৪৯) (হে নবী?) তাদেরকে বলো, "বেশ, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে আনো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কিতাব, যা এ দু'টির চাইতে বেশী হিদায়াতদানকারী হবে; আমি তারই অনুসরণ করবো৷"৫০) এখন যদি তারা তোমার এ দাবী পূর্ণ না করে, তাহলে জেনে রাখো, তারা আসলে নিজেদর প্রবৃত্তির অনুসরণ করে৷ আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত ছাড়াই নিছক নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে হবে? আল্লাহ এ ধরনের জালেমদেরকে কখনো হিদায়াত দান করেন না৷
যারা প্রবৃত্তির দাস তাদের অনুসরণ করা যাবে না :
(২০:১৬) কাজেই যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান আনে না এবং নিজের প্রবৃত্তির দাস হয়ে গেছে সে যেন তোমাকে সে সময়ের চিন্তা থেকে নিবৃত্ত না করে৷ অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে৷
অতপর হে নবী, আমি দীনের ব্যাপারে তোমাকে একটি সুস্পষ্ট রাজপথের (শরীয়তের) ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছি৷ সুতরাং তুমি তার ওপরেই চলো এবং যারা জানে না তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না৷(জাসিয়া:১৮)
(মু’মিনুন:৭১) ----আর সত্য যদি কখনো তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতো তাহলে আকাশ ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যের সবকিছুর ব্যবস্থাপনা ওলট পালট হয়ে যেতো।
৪। লোকদের ইচ্ছাবাসনার অনুসরণ :
এখন তোমার কাছে যে জ্ঞান এসে গেছে তা সত্ত্বেও যদি তুমি লোকদের খেয়াল খুশীর তাবেদারী করো তাহলে আল্লাহর মোকাবিলায় তোমার কোন সহায়ও থাকবে না, আর কেউ তাঁর পাকড়াও থেকেও তোমাকে বাঁচাতে পারবে না৷ -১৩:৩৭,
(১৮:২৮) .... এমন কোনো লোকের আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির কামনা বাসনার অনুসরণ করেছে এবং যার কর্মপদ্ধতি কখনো উগ্র, কখনো উদাসীন৷
অতপর হে নবী, আমি দীনের ব্যাপারে তোমাকে একটি সুস্পষ্ট রাজপথের (শরীয়তের) ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছি৷ সুতরাং তুমি তার ওপরেই চলো এবং যারা জানে না তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না৷(জাসিয়া:১৮)
একজন মানুষ আরেকজন মানুষের অনুসরণ/পূজা করবে না : বরং সবাই সমান : এটা কাফেররাও বুঝে :
(মু’মিনুন:৩৪) এখন যদি তোমরা নিজেদেরই মতো একজন মানু্ষের আনুগত্য করো তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
৫। শয়তানের অনুসরণ :
জ্ঞানহীন বিতর্ক যারা করে তারা শয়তানের অনুসরণে লিপ্ত হয় : :
(হাজ্ব:৩) কতক লোক এমন আছে যারা জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের অনুসরণ করতে থাকে৷
শয়তানের অনুসরণের অর্থই হলো জাহান্নামের আযাবের পথ অনুসরণ করা :
(হাজ্ব:৪) অথচ তার ভাগ্যেই তো এটা লেখা আছে যে, যে ব্যক্তি তার সাথে বন্ধুত্ব করবে তাকে সে পথভ্রষ্ট করে ছাড়বে এবং জাহান্নামের আযাবের পথ দেখিয়ে দেবে৷
যারা অশ্লীলতার পথে চলে তারাই শয়তানের অনুসারী :
(নূর:২১) হে ঈমানদানগণ ! শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে চলো না ৷ যে কেউ তার অনুসরণ করবে তাকে সে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ করার হুকুম দেবে৷
৬। অসৎ নেতা / অসৎ ধনীদের অনুসরণ / ভন্ড নেতাদের অনুসরণ:
(১৪:২১) আর এরা যখন সবাই একত্রে আল্লাহর সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাবে, সে সময় এদের মধ্য থেকে যারা দুনিয়ায় দুর্বল ছিল তারা যারা নিজেদেরকে বড় বলে জাহির করতো তাদেরকে বলবে, “দুনিয়ায় আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে আমাদের বাঁচাবার জন্যও কিছু করতে পারো ? তারা জবাব দেবে, “আল্লাহ যদি আমাদের মুক্তিলাভের কোন পথ দেখাতেন তাহলে আমরা নিশ্চয়ই তোমাদেরও দেখিয়ে দিতাম৷ এখন তো সব সমান, কান্নাকাটি করো বা সবর করো- সর্বাবস্থায় আমাদের বাঁচার কোন পথ নেই৷
(এটি এমন সব লোকের জন্য সতর্কবাণী যারা দুনিয়ায় চোখ বন্ধ করে অন্যের পেচনে চলে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে শক্তিশালী জালেমদের আনুগত্য করে। তাদের জানানো হচ্ছে, আজ যারা তোমাদের নেতা, কর্মকর্তা ও শাসক হয়ে আছে আগামীকাল এদের কেউই তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে সামান্যতম নিষ্কৃতিও দিতে পারবে না। কাজেই আজই ভেবে নাও, তোমরা যাদের পেছনে ছুটে চলছো অথবা যাদের হুকুম মেনে চলছো তারা নিজেরাই কোথায় যাচ্ছে এবং তোমাদের কোথায় নিয়ে যাবে।)
অসৎ ও ভন্ড নেতাদের অনুসরনের কুফল ও পরকালে অসৎ নেতাদের পক্ষ থেকে জওয়াব :
২:১৬৬ , ১৬৭, (ভন্ড নেতা ভন্ড পীর ইত্যাদি অনুসরণের কুফল),
(৩৩-আহযাব: ৬৬) যেদিন তাদের চেহারা আগুনে ওলট পালট করা হবে তখন তারা বলবে “হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করতাম”৷ ৬৭) আরো বলবে, “হে আমাদের রব! আমরা আমাদের সরদারদের ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে৷ ৬৮) হে আমাদের রব!তাদেরকে দ্বিগুন আযাব দাও এবং তাদের প্রতি কঠোর লানত বর্ষণ করো”৷১১৭
১১৭. এ বিষয়বস্তুটি কুরআন মজীদের বহুস্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ নিম্নলিখিত স্থানগুলো দেখুনঃ আল আ'রাফ ১৮৭ আন নাযি'আত ৪২ ও ৪৬ সাবা ৩ ও ৫, আল মুলক ২৪ ও ২৭ আল মুতাফফিফীন ১০ ও ১৭ আল হিজর ২ ও ৩ আল ফুরকান ২৭ ও ২৯ এবং হা-মীম আস সাজদাহ ২৬ ও ২৯ আয়াত।
(১৪:২২) আর যখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে তখন শয়তান বলবে, “সত্যি বলতে কি আল্লাহ তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করে ছিলেন তা সব সত্যি ছিল এবং আমি যেসব ওয়াদা করেছিলাম তার মধ্য থেকে একটিও পুরা করিনি৷ তোমাদের ওপর আমার তো কোন জোর ছিল না, আমি তোমাদের আমার পথের দিকে আহ্বান জানানো ছাড়া আর কিছুই করিনি এবং তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলে৷ এখন আমার নিন্দাবাদ করো না, নিজেরাই নিজেদের নিন্দাবাদ করো৷ এখানে না আমি তোমাদের অভিযোগের প্রতিকার করতে পারি আর না তোমরা আমার৷ ইতিপূর্বে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কতৃত্বের শরীক করেছিলে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, এ ধরনের জালেমদের জন্য তো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবধারিত৷
(১৯:৮১) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের কিছু খোদা বানিয়ে রেখেছে, যাতে যারা এদের পৃষ্ঠপোষক হয়৷৮২) কেউ পৃষ্ঠপোষক হবে না৷ তারা সবাই এদের ইবাদতের কথা অস্বীকার করবে এবং উল্টো এদের বিরোধী হয়ে পড়বে৷
(২১:৪৩) তাদের কাছে কি এমন কিছু ইলাহ আছে যারা আমার মুকাবিলায় তাদেরকে রক্ষা করবে ? তারা না নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে, না আমার সমর্থন লাভ করে৷
(২৯-আনকাবুত:২৫) ......কিন্তু কিয়ামতের দিন তোমরা পরস্পরকে অস্বীকার এবং পরস্পরের প্রতি অভিসম্পাত করবে ৪৩ আর আগুন তোমাদের আবাস হবে এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী হবে না৷”
(৪৩ . অর্থাৎ মিথ্যা আকীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তোমাদের এ সামাজিক কাঠামো আখেরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না। সেখানে পারস্পরিক প্রীতি-ভালোবাসা , সহযোগিতা, আত্মীয়তা এবং আকীদা-বিশ্বাস ও কামনা-বাসনার কেবলমাত্র এমন ধরনের সম্পর্ক বজায় থাকতে পারে যা দুনিয়ায় এক আল্লাহর বন্দেগী এবং সৎকর্মশীলতা ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কুফরী ও শিরক এবং ভুল পথ ও কুপথের সাথে জড়িত যাবতীয় সম্পর্ক সেখানে ছিন্ন হয়ে যাবে। সকল ভালোবাসা শত্রুতায় পরিণত হবে। সমস্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি ঘৃণায় রুপান্তরিত হবে। পিতা-পুত্র,স্বামী-স্ত্রী, পীর-মুরীদ পর্যন্ত একে অন্যেও ওপর লানত বর্ষণ করবে এবং প্রত্যেকে নিজের গোমরাহীর দায়-দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বলবে, এই জালেম আমাকে ধ্বংস করেছে, কাজেই একে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হোক। একথা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে। যেমন সূরা যুখরুফে বলা হয়েছেঃ
----------------
"বন্ধুরা সেদিন পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে, মুত্তাকীরা ছাড়া।"
সূরা আ'রাফে বলা হয়েছেঃ
------------------
"প্রত্যেকটি দল যখন জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন তার কাছের দলের প্রতি লানত বর্ষণ করতে করতে প্রবেশ করবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন সবাই সেখানে একত্র হয়ে যাবে তখন প্রত্যেক পরবর্তী দল পূর্ববর্তী দলের পক্ষে বলবেঃ হে আমাদের রব! এ লোকেরাই আমাদের পথভ্রষ্ট করে ,কাজেই এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দিন।" (আয়াতঃ৩৮)
সূরা আহযাবে বলা হয়েছেঃ
---------------
"আর তারা বলবে , হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের সরদারদেরও বড়দের আনুগত্য করেছি এবং তারা আমাদের বিপথগামী করেছে। হে আমাদের রব! তুমি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদের ওপর বড় রকমের লানত বর্ষণ করো। ")
( আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ব > বন্ধুত্ব > পরকালে বন্ধুত্ব কি থাকবে ? )
দ্বিগুণ শাস্তি কাদের জন্য ? আর কাদের জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার ? :
দেখুন : শ > শাস্তি > দ্বিগুণ শাস্তি কাদের জন্য ?
শ > শাস্তি > দ্বিগুণ শাস্তি ও দ্বিগুণ পুরস্কারের তাৎপর্য কি ?
ক্লিক করুন :
আলেম ওলামা সহ সমাজের যারা নেতৃস্থানীয়, যাদেরকে মানুষ অনুসরণ করে যাদের কথায় মানুষ চলে তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি :
(৩৩-আহযাব: ৩০) হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ কোনো সুস্পষ্ট অশ্লীল কাজ করবে তাকে দ্বিগুন শাস্তিদেয়া হবে৷ আল্লাহর জন্য এটা খুবই সহজ কাজ৷ ৩১)আর তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে এবং সৎকাজ করবে তাকে আমি দুবার প্রতিদান দেবো ৪৫ এবং আমি তার জন্য সম্মানজনক রিযিকের ব্যবস্থা করে রেখেছি৷
৪৫. গোনাহর জন্য দু'বার শাস্তিও নেকীর জন্য দু'বার পুরস্কার দেবার কারণ হচ্ছে এই যে,আল্লাহ যাদেরকে মানুষের সমাজে কোন উন্নত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন তারা সাধারণত জনগণের নেতা হয়ে যায় এবং জনগণের বিরাট অংশ ভালো ও মন্দ কাজে তাঁদেরকেই অনুসরণ করে চলে। তাঁদের খারাপ কাজ শুধুমাত্র তাঁদের একার খারাপ কাজ হয় না বরং একটি জাতির চরিত্র বিকৃতরি কারণও হয় এবং তাঁদের ভালো কাজ শুধুমাত্র তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত ভালো কাজ হয় না বরং বহু লোকের কল্যাণ সাধনেরও কারণ হয়। তাই তারা যখন খারাপ কাজ করে তখন নিজেদের খারাপের সাথে সাথে অন্যদের খারাপেরও শাস্তি পায় এবং যখনি তারা সৎকাজ করে তখন নিজেদের সৎকাজের সাথে সাথে অন্যদেরকে তারা যে সৎপথ দেখিয়েছে তারও প্রতিদান লাভ করে।
আলোচ্য আয়াত থেকে এ মূলনীতিও স্থিরীকৃত হয়ে যে,যেখানে মর্যাদা যত বেশী হবে এবং যত বেশী বিশ্বস্ততার আশা করা হবে যেখানে মর্যাদাহানি ও অবিশ্বস্ততার অপরাধ ততবেশী কঠোর হবে এবং এ সংগে তার শাস্তি ও হবে তত বেশী কঠিন। যেমন মসজিদে শরাব পান করা নিজ গৃহে শরাব পান করার চেয়ে বেশী ভয়াবহ অপরাধ এবং এর শাস্তি ও বেশী কঠোর। মাহরাম নারীদের সাথে যিনা করা অন্য নারীদের সাথে যিনা করার তুলনায় বেশী গোনাহের কাজ এবং এ জন্য শাস্তি ও হবে বেশী কঠিন।
( ব্যাখ্যা : এক, যদি তুমি সত্যকে সত্য জানার পর মিথ্যার সাথে কোন আপোস করে নিতে তাহলে বিক্ষুব্ধ জাতি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যেতো ঠিকই কিন্তু আল্লাহর গযব তোমার ওপর নেমে পড়তো এবং তোমাকে দুনিয়ায় ও আখেরাত উভয় স্থানেই দ্বিগুণ সাজা দেয়া হতো । দুই মানুষ নবী হলেও আল্লাহর সাহায্য ও সুযোগ - সুবিধা তার সহযোগী না হলে শুধুমাত্র নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করে সে মিথ্যার তুফানের মোকাবিলা করতে পারে না । শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ধৈর্য ও অবিচলতার সাহায্যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য ও ন্যায়ের ওপর পাহাড়ের মতো অটল থাকেন এবং বিপদের সয়লাব স্রোত তাঁকে একচুলও স্থানচ্যুত করতে পারেনি ।)
শ > শাস্তি > দুবার শাস্তি ও দুবার পুরস্কারের তাৎপর্য কি ?
কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না:
(৩৩-আহযাব: ১) হে নবী! আল্লাহকে ভয় করো এবং কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না৷ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী৷২
২. ভাষণ শুরু করে প্রথম ব্যাক্যেই নবী করীমের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আশংকার অবসান ঘটিয়েছেন। বক্তব্যের নিগূঢ় অর্থ হচ্ছে দীনের কল্যাণ কিসে এবং কিসে নয় এ বিষয়টি আমিই ভালো জানি। কোন্ সময় কোন্ কাজটি করতে হবে এবং কোন্ কাজটি অকল্যানকর তা আমি জানি।কাজেই তুমি এমন কর্মনীতি অবলম্বন করো না যা কাফের ও মুনাফিকদের ইচ্ছার অনুসারী হয় বরং এমন কাজ করো যা হয় আমার ইচ্ছার অনুসারী। কাফের ও মুনাফিকদেরকে নয় বরং অমাকেই ভয় করা উচিত।
৭। সঠিক নেতৃত্বের অনুসরণ :
রাসুলের অনুসরণ :
দেখুন : ন > নবী > নবী ও রাসুল।
(৩৩-আহযাব: ৬৬) যেদিন তাদের চেহারা আগুনে ওলট পালট করা হবে তখন তারা বলবে “হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করতাম”৷
(৩৩-আহযাব:৭১).......যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে সে বড় সাফল্য অর্জন করে৷
উসওয়াতুন হাসানাহ : / রাসুল সা: এর উত্তম আদর্শ-উত্তম চরিত্র কেমন ছিল :
নেতার কেমন ধরণের গুণাবলী থাকা উচিত : রাসুল সা: কেমন নেতা ছিলেন :আর উত্তম নেতার অনুসারীদের মধ্যেও কেমন ধরণের গুণাবলী থাকা উচিত :
(৩৩-আহযাব: ২১) আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে ছিল একটি উত্তম আদর্শ ৩৪ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিনের আকাঙ্ক্ষী এবং বেশী করে আল্লাহকে স্মরণ করে৷৩৫
৩৪. যে প্রেক্ষাপটে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে সে দৃষ্টিতে বিচার করলে বলা যায়, যারা আহ্যাব যুদ্ধে সুবিধাবাদী ও পিঠ বাঁচানের নীতি অবলম্বন করেছিল তাদেরকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই নবী করীম (সা) কর্মদারীকে এখানে আদর্শ হিবেবে পেশ করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরা ছিলে ঈমান, ইসলাম ও রাসূলের আনুগত্যের দাবীদার। তোমাদের দেখা উচিত ছিল, তোমরা যে, রাসূলের অনুসারীদের অন্তরভুক্ত হয়েছো তিনি এ অবস্থায় কোন ধরনের নীতি অবলম্বন করেছিলেন। যদি কোন দলের নেতা নিজেদের নিরাপদ থাকার নীতি অবলম্বন করেন, নিজেই আরামপ্রিয় হন, নিজেই ব্যক্তিগত স্বার্থ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেন, বিপদের সময় নিজেই পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি করতে থাকেন, তাহলে তার অনুসারীদের পক্ষ থেকে এ দুর্বলতাগুলোর প্রকাশ যুক্তিসংগত হতে পারে। কিন্তু এখানে তো রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থা এই ছিল যে, অন্যদের কাছে তিনি যে কষ্ট স্বীকার করার জন্য দাবী জানান তার প্রত্যেকটি কষ্ট স্বীকার করার ব্যাপারে তিনি সবার সাথে শরীক ছিলেন, সবার চেয়ে বেশী করে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এমন কোন কষ্ট ছিল না যা অন্যরা বরদাশ্ত করেছিল কিন্তু তিনি করেননি। খন্দক খননকারীরে দলে তিনি নিজে শামিল ছিলেন। ক্ষুধা ও অন্যান্য কষ্ট সহ্য করার ক্ষেত্রে একজন সাধারণ মুসলমানের সাথে তিনি সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অবরোধকালে তিনি সর্বক্ষণ যুদ্ধের ময়দানে হাজির ছিলেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও শত্রুদের সামনে থেকে সরে যাননি। বনী কুরাইযার বিশ্বাসঘাতকতার পরে সমস্ত মুসলমানদের সন্তান ও পরিবারবর্গ যে বিপদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল তার সন্তান ও পরিবারবর্গও সেই একই বিপদের মুখে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল । তিনি নিজের সন্তান ও পরিবারবর্গের হেফাজতের জন্যও এমন কোন বিশেষ ব্যবস্থা করেননি যা অন্য মুসলমানের জন্য করেননি। যে মহান উদ্দেশ্যে তিনি মুসলমানদের কাছ থেকে ত্যাগ ও কোরবানীর দাবী করেছিলেন সে উদ্দেশ্যে সবার আগে এবং সবার চেয়ে বেশি করে তিনি নিজে নিজের সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। তাই যে কেউ তাঁর অনুসরনের দাবীদার ছিল তাকে এ আর্দশ দেখে তারই অনুসরণ করা উচিত ছিল।
পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এ ছিল এ আয়াতের নির্গলিতার্থ। কিন্তু এর শব্দগুলো ব্যাপক অর্থবোধক এবং এর উদ্দেশ্যেকে কেবলমাত্র এ অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখার কোন কারণ নেই । আল্লাহ্ এ কথা বলেননি যে, কেবলমাত্র এ দৃষ্টিতেই তাঁর রসূলের জীবন মুসলমানদের জন্য আর্দশ বরং শর্তহীন ও অবিমিশ্রভাবে তাকে আর্দশ গন্য করেছেন। কাজেই এ আয়াতের দাবী হচ্ছে, মুসলমানরা সকল বিষয়েই তাঁর জীবনকে নিজেদের জন্য আর্দশ জীবন মনে করেবে এবং সেই নিজেদের চরিত্র ও জীবন গড়ে তুলবে।
৩৫. অর্থাৎ যে, ব্যক্তি আল্লাহ থেকে গাফিল তার জন্য এ জীবন আদর্শ নয়। কিন্তু তার জন্য অবশ্যই আদর্শ যে, কখনো ঘটনাক্রমে আল্লাহর নাম নেয় না বরং বেশী করে তাঁকে স্মরণ করে ও স্মরন রাখে। অনুরূরপভাবে এ জীবন এমন ব্যক্তির জন্যও কোন আদর্শ নয় যে আল্লাহর কাছ থেকেও কিছু আশা করে না এবং আখেরাতের আগমনেরও প্রত্যাশা করে না। কিন্তু এমন ব্যক্তির জন্য তার অবশ্যই আদর্শ যে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দান আশা করে এবং যে একথা চিন্তা করে যে, একদিন আখেরাতের জীবন শুরু হবে যেখানে দুনিয়ার জীবন তার মনোভাব ও নীতি আল্লাহর রসূলের (সা) মনোভার ও নীতির কতটুকু নিকটতর আছে তার ওপরই তার সমস্ত কল্যাণ নির্ভর করবে।
সঠিক পথ লাভ করতে হলে : নবীগণের অনুসরণ করতে হবে :
(হাজ্ব:৬৭) ...(হে মুহাম্মদ) অবশ্যই তুমি সঠিক সরল পথে আছো৷
নবুওয়াত শরীয়াতের একটি পদ : শুতরাং,একমাত্র নবীগণই একথা জোর দিয়ে বলতে পারেন “তোমরা আমার অনুসরণ কর ও আমার আনুগত্য কর ”
(২০:৯০) ...... তোমাদের রব তো করুণাময়, কাজেই তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার কথা মেনে নাও৷
(বিস্তারিত দেখুন : ন > নবী )
পূর্ববর্তী সৎলোকদের অনুসরণ :
৪:২৬,
সঠিক লোক, সঠিক নেতার অনুসরণ :
৩:২৬, ৬:১২১, ৭:৩,
(১৮:১০২) তাহলে কি যারা কুফরী অবলম্বন করেছে তারা একথা মনে করে যে, আমাকে বাদ দিয়ে আমার বান্দাদেরকে নিজেদের কর্মসম্পাদনকারী হিসেবে গ্রহণ করে নেবে ? এ ধরনের কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য আমি জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি৷
উলুল আমর (সঠিক নেতা / সঠিক ধর্মীয় নেতৃত্বের) অনুসরণ : (দেখুন : ন > নেতা )
৩:২৬, ৪:৫৯ (উলুল আমর এর অনুসরণ করতে হবে )
৭:৩,
৮। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত “ওহীর” অনুসরণ :
(৩৩-আহযাব: ২) তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যে বিষয়ের ইংগিত করা হচ্ছে তার অনুসরণ করো৷ তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা সবই জানেন৷৩
৩. এ বাক্যে সম্বোধন করা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে , মুসলমানদেরকেও ইসলাম বিরোধীদেরকেও। এর অর্থ হচ্ছে নবী যদি-আল্লাহর হুকুম পালন করে দুর্নামের জুঁকি মাথা পেতে নেন এবং নিজের ইজ্জত আবরুর ওপর শত্রুর আক্রমণ ধৈর্যসহকারে বরদাশ্ত করেন তাহলে তাঁর বিশ্বস্তামূলক কর্মকান্ড আল্লাহর দৃষ্টির আড়ালে থাকবে না। মুসলমানদের মধ্য থেকে যে সব লোক নবীর প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অবিচল থাকবে এবং যারা সন্দেহ-সংশয়ে ভুগবে তাদের উভয়ের অবস্থাই অগোচরে থাকবে না। কাফের ও মুনাফিকরা তাঁর দুর্নাম করার জন্য যে প্রচেষ্টা চালাবে সে সম্পর্কেও আল্লাহ বেখবর থাকবেন না। কাজেই ভয়ের কোন কারণ নেই। প্রত্যেকে যার যার কার্য অনুযায়ী যে পুরস্কার বা শাস্তি লাভের যোগ্য হবে তা সে অবশ্যই পাবে।
অনুগত :
আসমান ও জমীনের সবকিছু আল্লাহ তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন, এ কথার অর্থ কি ?
(হাজ্ব:৬৫) তুমি কি দেখো না, তিনি পৃথিবীর সবকিছুকে তোমাদের জন্য অনুগত করে রেখেছেন।
(৩১-লোকমান: ২০) তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ যমীন ও আসমানের সমস্ত জিনিস তোমাদের জন্য অনুগত ও বশীভুত করে রেখেছেন ৩৫
৩৫ . কোন জিনিসকে কারো জন্য অনুগত করে দেয়ার অর্থ হচ্ছেঃ এক, জিনিসটিকে তার অধীন ও ব্যবহারোপযোগী করে দেয়া হবে। তাকে যেভাবে ইচ্ছা ব্যয় ও ব্যবহার করার ক্ষমতা তাকে দেয়া হবে। দুই, জিনিসটিকে কোন নিয়মের অধীন করে দেয়া হবে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য তা উপকারী ও লাভজনক হয়ে যাবে এবং এতে তার স্বার্থ উদ্ধার হবে। পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসকে মহান আল্লাহ একই অর্থে মানুষের জন্য অনুগত করে দেননি। বরং কোন জিনিসকে প্রথম অর্থে এবং কোনটিকে দ্বিতীয় অর্থে অনুগত করে দিয়েছেন। যেমন পানি, মাটি,আগুন, উদ্ভিদ, খনিজ পদার্থ, গবাদি পশু ইত্যাদি আমাদের জন্য প্রথম অর্থে এবং চন্দ্র , সূর্য , গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদিকে দ্বিতীয় অর্থে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন।
তোমরা তো আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত সমূহ ভোগ করছো, সুতরাং তোমরা কেন আল্লাহর অনুগত হবে না ?
এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর নিয়ামতসমূহ সম্পূর্ণ করেন, হয়তো তোমরা অনুগত হবে৷-১৬:৮১,
৩৬ . যেসব নিয়ামত মানুষ কোন না কোনভাবে মানুষ অনুভব করে এবং তার জ্ঞানে ধরা দেয় সেগুলো প্রকাশ্য নিয়ামত। আর যেসব নিয়ামত মানুষ জানে না এবং অনুভব ও করে না সেগুলো গোপন নিয়ামত। মানুষের নিজের শরীরে এবং তার বাইরে দুনিয়ায় তার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে এমন অগণিত ও অসংখ্য জিনিস রয়েছে কিন্তু মানুষ জানেও না যে, তার স্রষ্টা তার হেফাযত ও সংরক্ষণের জন্য,তাকে জীবিকা দান করার জন্য , তার বৃদ্ধি ও বিকাশ সাধনের জন্য এবং তার কল্যাণার্থে কত রকমের সাজ-সরঞ্জাম যোগাড় করে রেখেছেন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মানুষ যতই গবেষণা করছে ততই তার সামনে আল্লাহর এমনসব নিয়ামতের দরোজা উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে যা পূর্বে তার সম্পূর্ণ অগোচরে ছিল। আবার আজ পর্যন্ত যেসব নিয়ামতের জ্ঞান মানুষ লাভ করতে পেরেছে সেগুলো এমনসব নিয়ামতের তুলনায় তুচ্ছ যেগুলোর ওপর থেকে এখনো গোপনীয়তার পর্দা ওঠেনি।
অনুগত বনাম অবাধ্য, আর যারা বাতিলকে অনুসরণ করে তাদের জন্য রয়েছে আযাব:
অনুগত আর অবাধ্য এক নয় :
৩:১৬২,
অনুগত আর অবাধ্য এক নয় : ৩:১৬২,
বাতিলকে অনুসরণের কুফল :
(১৭:৭৪) আর যদি (হে মুহাম্মদ !) আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না৷৭৫) কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মুকাবিলায় তুমি কোনো সাহায্যকারী পেতে না৷
শিরক এর ক্ষেত্রে বা অবৈধ ক্ষেত্রে পিতা-মাতার কথাও মান্য করা যাবেনা, পিতা-মাতাকে অনুসরণ করা যাবেনা :
শিরক সবচেয়ে বড় পাপ : এমনকি পিতা মাতার অবাধ্য হতে হবে যদি পিতা মাতা শিরক করার জন্য বাধ্য করে :তখন পিতা মাতার কথা মান্য করা যাবে না :
(২৯-আনকাবুত:৮) আমি মানুষকে নিজের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি৷ কিন্তু যদি তারা তোমার ওপর চাপ দেয় যে, তুমি এমন কোন (মা’বুদকে ) আমার সাথে শরীক করো যাকে তুমি (আমার শরীক হিসেবে)জানো না, তাহলে তাদের আনুগত্য করো না৷ ১১ আমার দিকেই তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের জানাবো তোমরা কি করছিলে ৷
১১ . এ আয়াতটি সম্পর্কে মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনা হচ্ছে, এটি হযরত সা'দ ইবনে আবি ওয়াককাস এর ব্যাপারে নাযিল হয়। তার বয়স যখন আঠারো উনিশ বছর তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মা হামনা বিনতে সুফিয়ান (আবু সুফিয়ানের ভাইঝি) যখন জানতে পারে যে. তার ছেলে মুসলমান হয়ে গেছে তখন সে বলে, যতক্ষণ না তুমি মুহাম্মদকে অস্বীকার করবে ততক্ষণ আমি কিছুই পানাহার করবো না এবং ছায়াতেও বসবো না। মায়ের হক আদায় করা তো আল্লাহর হুকুম। কাজেই তুমি আমার কথা না মানলে আল্লাহরও নাফরমানী করবে। একথায় হযরত সা'দ অত্যন্ত পেরেশান হয়ে পড়েন। তিনি রসূলুল্লাহ (সা) এর দরবারে হাজির হয়ে নিজের ঘটনা বর্ণনা করেন। এ ঘটনায় এ আয়াত নাযিল হয়। মক্কা মুআযযামার প্রথম যুগে যেসব যুবক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন হতে পারে তারাও একই ধরনের অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাই সূরা লুকমানেও পূর্ণ শক্তিতে এ বক্তব্যটির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
আলোচ্য সূরার ১৫ আয়াতের বলা হয়েছে, সৃষ্ট জীবের মধ্যে মানুষের মধ্যে মানুষের ওপর মা-বাপের হক হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেই মা- বাপই যদি মানুষকে শিরক করতে বাধ্য করে তাহলে তাদের কথা মেনে নেয়া উচিত নয়। কাজেই এ ক্ষেত্রে অন্য কারো কথায় মানুষের এ ধরনের শিরক করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তারপর শব্দগুলি হচ্ছেঃ 'ওয়া ইন জাহাদাকা' অর্থাৎ যদি তারা দু'জন তোমাকে বাধ্য করার জন্য তাদের পূর্ণশক্তি নিয়োগ করে । এ থেকে জানা গেল , কম পর্যায়ের চাপ প্রয়োগ বা বাপ-মায়ের মধ্য থেকে কোন একজনের চাপ প্রয়োগ আরো সহজে প্রত্যাখান করার যোগ্য। এই সঙ্গে -------"যাকে তুমি আমার শরীক হিসেবে জানো না" বাক্যাংশটিও অনুধাবনযোগ্য। এর মধ্যে তাদের কথা না মানার সপক্ষে একটি শক্তিশালী যুক্তি প্রদান করা হয়েছে। অবশ্যই এটা পিতা-মাতার অধিকার যে, ছেলেমেয়েরা তাদের সেবা করবে, তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে এবং বৈধ বিষয়ে তাদের কথা মেনে চলবে। কিন্তু তাদেরকে এ অধিকার দেয়া হয়নি যে, মানুষ নিজের জ্ঞানের বিরুদ্ধে তাদের অন্ধ অনুসরণ করবে। শুধমাত্র বাপ-মায়ের ধর্ম বলেই তাদের ছেলে বা মেয়ের সেই ধর্ম মেনে চলার কোন কারণ নেই। সন্তান যদি এ জ্ঞান লাভ করে যে, তার বাপ-মায়ের ধর্ম ভুল ও মিথ্যা তাহলে তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে তার সঠিক ধর্ম গ্রহণ করা উচিত এবং তাদের চাপ প্রয়োগের পরও যে পথের ভ্রান্তি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে সে পথ অবলম্বন করা তার উচিত নয়। বাপ-মায়ের সাথে যখন এ ধরনের ব্যবহার করতে হবে তখন দুনিয়ার প্রত্যেক ব্যক্তির সাথেও এ ব্যবহার করা উচিত। যতক্ষণ না কোন ব্যক্তির সত্য পথে থাকা সম্পর্কে জানা যাবে ততক্ষণ তার অনুসরণ করা বৈধ নয়।
(বিস্তারিত দেখুন : শ > শিরক > শিরক সবচেয়ে বড় পাপ, পিতা মাতার অবাধ্য হতে হবে যদি শিরক করতে বাধ্য করে। )
সহযোগী নবীও কি প্রধান রাসুলের আনুগত্য করতে বাধ্য ? :
(বিস্তারিত দেখুন : ন > নবী > সহযোগী নবীও কি প্রধান রাসুলের আনুগত্য করতে বাধ্য ? )
২। আনুগত্য :
ইসলামী নেতৃত্বের আনুগত্য ফরজ : ৪:৫৯
(নুর:৫৬) .....এবং রসূলের আনুগত্য করো,আশা করা যায়, তোমাদের প্রতি করুণা করা হবে ৷
আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য কর : ৮:১, ২০, ৪৬
আল্লাহর আনুগত্য করা ফরজ : ৩:৩২, ৫:৭,
কাফেরদের আনুগত্য করলে তোমরা সৎপথ থেকে বিচ্যুত হবে : ৩:১৪৯, ৪:৫৯, ৫:৭,
জিহাদের ময়দানে সেনাপতির আনুগত্য না করার কুফল : ৩:১৫৩,
আল্লাহ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দাও :৮:২৪,
আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করোনা : ৮:২৭
(১১:১১২) কাজেই হে মুহাম্মদ৷ তুমিও তোমার সাথীরা যারা (কুফরী ও বিদ্রোহ থেকে ঈমান ও অনুগত্যের দিকে) ফিরে এসেছে সত্য সঠিক পথে অবিচল থাকো যেমন তোমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে এবং বন্দেগীর সীমানা অতিক্রম করো না৷ তোমরা যা কিছু করছো তার ওপর তোমাদের রব দৃষ্টি রাখেন৷
(১১:১১৩) এ জালেমদের দিকে মোটেই ঝুঁকবে না, অন্যথায় জাহান্নামের গ্রাসে পরিণত হবে এবং তোমরা এমন কোন পৃষ্ঠপোষক পাবে না যে আল্লাহর হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করতে পারে আর কোথাও থেকে তোমাদের কাছে কোন সাহায্য পৌঁছুবে না৷
(১৮:৫০) .... সে ছিল জিনদের একজন, তাই তার রবের হুকুমের আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেলো৷ (অর্থাৎ, ইবলিশ শয়তান, এখানে ইবলিশ শয়াতানের কথা বলা হয়েছে)।
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর :
(২৬.শুআরা:১১০) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (নির্দ্বিধায়) আমার আনুগত্য কর৷"
(২৬.শুআরা:১০৮) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর৷
(২৬.শুআরা:১২৬) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
(২৬.শুআরা:১৩১) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
(২৬.শুআরা:১৪৪) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
(২৬.শুআরা:১৫০) আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
(২৬.শুআরা:১৬৩) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
মু’মিনদের প্রধান গুণ হচ্ছে আনুগত্যশীল হওয়া : শুনলাম ও মেনে নিলাম এ মনোভাবসম্পন্ন হওয়া:
(নুর:৫১) মু’মিনদের কাজই হচ্ছে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রসূল তাদের মোকদ্দমার ফায়সালা করেন, তখন তারা বলেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম৷ এ ধরনের লোকেরাই সফলকাম হবে ৷
আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কুফল :
(নুর:৪৭) তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একটি দল (আনুগত্য থেকে ) মুখ ফিরিয়ে নেয় ৷ এ ধরনের লোকেরা কখনোই মু’মিন নয় ৷৭৬
(৭৬ . অর্থাৎ আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াই তাদের ঈমানের দাবী মিথ্যা প্রমাণ করে দেয়। তাদের এহেন কার্যকলাপ থেকে বুঝা যায় যে,তারা যখন বলেছে আমরা ঈমান এনেছি ও আনুগত্য স্বীকার করেছি তখন তারা অসত্য বলেছে।)
তুমিই প্রথম মুসলমান হও / আনুগত্যকারী হও :
৬:১৪, ১৫, ১৬২, ১৬৩,
(২১:১০৮) এদেরকে বলো, “আমার কাছে যে অহী আসে তা হচ্ছে এই যে, কেবলমাত্র এক ইলাহই তোমাদের ইলাহ, তারপর কি তোমরা আনুগত্যের শির নত করছো ?”
(হাজ্ব:৩৭) ....তিনি তাদেরকে (গৃহপালিত পশুগুলিকে) তোমাদের জন্য এমনভাবে অনুগত করে দিয়েছেন যাতে তাঁর (আল্লাহর) দেয়া পথনির্দেশনার ভিত্তিতে তোমরা তাঁর (আল্লাহর) শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো৷
আল্লাহর আইন বিধান সমূহের আনুগত্যের নামই হচ্ছে ইসলাম :
(হাজ্ব:৩৪) .....কাজেই তোমাদের ইলাহও সে একজনই এবং তোমরা তাঁরই ফরমানের অনুগত হয়ে যাও৷
আসমান ও জমীনের সবকিছুই আল্লাহর আনুগত্য করছে :
(১৬:৫২) সবকিছুই তাঁরই, যা আকাশে আছে এবং যা আছে পৃথিবীতে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে একমাত্র তাঁরই দীন চলছে৷
আনুগত্য সম্পর্কিত আরো আয়াত : ৬০:১২, ৫৫:৬, ৪৮:১৮, ৪৮:১০, ৪৭:২১, ৩৯:৯, ৩৩:২২, ৩১:৩২, ২৪:৫৪, ২৪:৫৩, ১৭:২৪, ১০:২২, ৯:২৯, ২:৬২,
সহযোগী নবীও কি প্রধান রাসুলের আনুগত্য করতে বাধ্য ? :
(বিস্তারিত দেখুন : ন > নবী > সহযোগী নবীও কি প্রধান রাসুলের আনুগত্য করতে বাধ্য ? )
নবীর আনুগত্যে কাফেরদের আপত্তি ছিল : কারণ তিনি মানুষ ছিলেন :
(মু’মিনুন:৩৩) তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার ঈমান আনতে অস্বীকার করেছিল এবং আখেরাতের সাক্ষাতকারকে মিথ্যা বলেছিল, যাদেরকে আমি দুনিয়ার জীবনে প্রাচুর্য দান করেছিলাম, তারা বলতে লাগলো , ‘‘এ ব্যক্তি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়৷ তোমরা যা কিছু খাও তা-ই সে খায় এবং তোমরা যা কিছু পান করো তা-ই সে পান করে ৷ ৩৪) এখন যদি তোমরা নিজেদেরই মতো একজন মানু্ষের আনুগত্য করো তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
সৎপথ ও সঠিক পথ লাভের প্রধান শর্ত হচ্ছে : আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করা
(নুর:৫৪) বলো, ‘‘ আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের হুকুম মেনে চলো ৷ কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও ৷ তাহলো ভালোভাবে জেনে রাখো, রসূলের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য রাসূল দায়ী এবং তোমাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য তোমরাই দায়ী ৷ তাঁর আনুগত্য করলে তোমরা নিজেরাই সৎ পথ পেয়ে যাবে, অন্যথায় পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন হুকুম শুনিয়ে দেয়া ছাড়া রসূলের আর কোন দায়িত্ব নেই ৷’’
ইসলামী নেতৃত্বের আনুগত্য ফরজ : নেতার অনুমতি ছাড়া ময়দান ত্যাগ করা যাবে না:
(নুর:৬২) মু’মিন৯৭ তো আসলে তারাই যারা অন্তর থেকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে মানে এবং যখন কোন সামষ্টিক কাজে রসূলের সাথে থাকে তখন তার অনুমতি ছাড়া চলে যায় না ৷৯৮ যারা তোমার কাছে অনুমতি চায় তারাই আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাসী৷ কাজেই তারা যখন তাদের কোন কাজের জন্য তোমার কাছে অনুমতি চায়৯৯ তখন যাকে চাও তুমি অনুমতি দিয়ে দাও১০০ এবং এ ধরনের লোকদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করো৷১০১ আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷
(৯৭ . মুসলমানদের জামায়াতের নিয়ম-শৃংখলা আগের তুলনায় আরো বেশী শক্ত করে দেবার জন্য শেষ নির্দেশাবলী দেয়া হচ্ছে।
৯৮ . নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে তাঁর স্থলাভিষিক্তগণ এবং ইসলামী জামায়াত ব্যবস্থার আমীরগণের জন্যও এ একই বিধান । কোন সামগ্রীক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ বা শান্তি যে কোন সময় মুসলমানদের যখন একত্র করা হয় তখন আমীররের অনুমতি ছাড়া তাদের ফিরে যাওয়া বা ছাড়িয়ে পড়া কোনক্রমেই জায়েয নয় ।
৯৯ . এর মধ্যে এ সতর্কবাণী রয়েছে যে, কোন যথার্থ প্রয়োজন ছাড়া অনুমতি চাওয়া তো আদতেই অবৈধ । বৈধতা কেবল তখনই সৃষ্টি হয় যখন যাবার জন্য কোন প্রকৃত প্রয়োজন দেখা দেয়।
১০০ . অর্থাৎ প্রয়োজন বর্ণনা করার পরও অনুমতি দেয়া বা না দেয়া রসূলের এবং রসূলের পর জামায়াতের আমীরের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। যদি তিনি মনে করেন সামগ্রিক প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রয়োজনের তুলনায় বেশী গুরুত্বপূর্ণ তাহলে অনুমতি না দেবার পূর্ণ অধিকার তিনি রাখেন । এ অবস্থায় একজন মু'মিনের এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকা উচিত নয়।
১০১ . এখানে আবার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, অনুমতি চাওয়ার মধ্যে যদি সামান্যতম বাহানাবাজীরও দখল থাকে অথবা সামগ্রীক প্রয়োজনের ওপর ব্যক্তিগত প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেবার প্রবণতা সক্রিয় থাকে, তাহলে এ হবে একটি গোনাহ । কাজেই রসূল ও তাঁর স্থলাভিষিক্তের শুধুমাত্র অনুমতি দিয়েই ক্ষান্ত হলে চলবে না বরং যাকেই অনুমতি দেবেন সংগে সংগে একথাও বলে দেবেন যে, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন।)
(নুর:৬৩) হে মুসলমানরা ! রসূলের আহবানকে তোমাদের মধ্যে পরস্পরের আহবানের মতো মনে করো না ৷
আনুগত্যকারীর মানসিক অবস্থা কিরূপ হওয়া উচিত ?
অহমিকা নাকি নম্রতা ও আল্লাহর ভয় ?
(মু’মিনুন:৬০) এবং যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যা কিছুই দেয় এমন অবস্থায় দেয় যে, ৬১) তাদের অন্তর এ চিন্তায় কাঁপতে থাকে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে৷ ৫৪
(৫৪ . আরবী ভাষায় ''দেয়া'' ----- শব্দটি শুধুমাত্র সম্পদ বা কোন বস্তু দেয়া অর্থেই ব্যবহার হয় না বরং বিমূর্ত জিনিস দেয়া অর্থেও বলা হয়। যেমন কোন ব্যক্তির আনুগত্য গ্রহণ করার জন্য বলা হয় ----- আবার কোন ব্যক্তির আনুগত্য অস্বীকার করার জন্য বলা হয় ----- কাজেই এ দেয়ার মানে শুধুমাত্র এই নয় যে, তারা আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ দান করে বরং আল্লাহর দরবারে আনুগত্য ও বন্দেগী পেশ করাও এর অর্থের অন্তরভূক্ত।
এ অর্থের দৃষ্টিতে আয়াতের পুরোপুরি মর্ম এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহর হুকুম পালনের ক্ষেত্রে যা কিছু সদাচার, সেবামূলক কাজ ও ত্যাগ করে সে জন্য একটুও অহংকার ও তাকওয়ার বড়াই করে না এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যাবার অহমিকায় লিপ্ত হয় না। বরং নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সবকিছু করার পরও এ মর্মে আল্লাহর ভয়ে ভীত হতে থাকে যে, না জানি এসব তাঁর কাছে গৃহীত হবে কিনা এবং রবের কাছে মাগফেরাতের জন্য এগুলো যথেষ্ট হবে কিনা। ইমাম আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাকেম ও জারির বর্ণিত নিম্মোক্তা হাদীসটিই এ অর্থ প্রকাশ করে। এখানে হযরত আয়েশা (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেনঃ 'হে আল্লাহর রসূল! এর অর্থ কি এই যে, এক ব্যক্তি চুরি, ব্যভিচার ও শরাব পান করার সময়ও আল্লাকে ভয় করবে৷'' এ প্রশ্ন থেকে জানা যায়, হযরত আয়েশা একে ---------- অর্থে গ্রহণ করছিলেন অর্থাৎ ''যা কিছু করে করেই যায়। জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
------------
''না, হে সিদ্দীকের মেয়ে! এর অর্থ হচ্ছে এমন লোক, যে নামায পড়ে, রোযা রাখে, যাকাতা দেয় এবং মহান আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।''
এ জবাব থেকে জানা যায় যে, আয়াতের সঠিক পাঠ ----- নয় বরং ----- এবং এ ----- শুধু অর্থ-সম্পদ দান করার সীমিত অর্থে নয় বরং আনুগত্য করার ব্যাপক অর্থে।
একজন মু'মিন কোন্ ধরনের মানসিক অবস্থা সহকারে আল্লাহর বন্দেগী করে এ আয়াতটি তা বর্ণনা করে। হযরত উমরের (রা) অবস্থাই এর পূর্ণ চিত্র প্রকাশ করে। তিনি সারা জীবনের অতুলনীয় কার্যক্রমের পর যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে থাকেন তখন আল্লাহর জবাবদিহির ভয়ে ভীত হতে থাকেন এবং যেতে থাকেন, যদি আখেরাতে সমান সমান হয়ে মুক্তি পেয়ে যাই তাহলেও বাঁচোয়া। হযরত হাসান বাসরী (র) বড়ই চমৎকার বলেছেনঃ মু'মিন আনুগত্য করে এরপরও ভয় করে এবং মুনাফিক গোনাহ করে তারপরও নির্ভীক ও বেপরোয়া থাকে।))
আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আনুগত্যের স্বরূপ :
(নুর:৫৪) বলো, ‘‘ আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের হুকুম মেনে চলো ৷
(নুর:৫৪) ... রাসূলের আনুগত্য করলে তোমরা নিজেরাই সৎ পথ পেয়ে যাবে, অন্যথায় পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন হুকুম শুনিয়ে দেয়া ছাড়া রসূলের আর কোন দায়িত্ব নেই ৷’’
(নুর:৫৪) ...কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও ৷ তাহলো ভালোভাবে জেনে রাখো, রসূলের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য রাসূল দায়ী এবং তোমাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য তোমরাই দায়ী ৷
আনুগত্য করা যাবে না কাদের ?
আরো দেখুন : ন > নেতা > অসৎ নেতা / অসৎ সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতার অনুসরণের কুফল।
(২৬.শুআরা:১৫১) যেসব লাগামহীন লোক পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে ১৫২) এবং কোন সংস্কার সাধন করে না তাদের আনুগত্য করো না।
(অর্থাৎ তোমাদের যেসব রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ এবং শাসকদের নেতৃত্বে এ ভ্রান্ত বিকৃত জীবন ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে তাদের আনুগত্য পরিহার করো। এরা সব লাগাম ছাড়া। নৈতিকতার সমস্ত সীমা লংঘন করে এরা লাগামহীন পশুতে পরিণত হয়েছে। এদের দ্বারা সমাজ-সভ্যতার কোন সংস্কার হতে পারে না। এরা যে ব্যবস্থা পরিচালনা করবে তার মধ্যে বিকৃতিই ছড়িয়ে পড়বে। তোমাদের জন্য কল্যাণের কোন পথ যদি থাকে তাহলে তা কেবলমাত্র একটিই। অর্থাৎ তোমরা নিজেদের মধ্যে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করো এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের আনুগত্য পরিহার করে আমার আনুগত্য করো। কারণ আমি আল্লাহর রসূল। আমার আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে তোমরা পূর্ব থেকেই অবগত আছো। আমি একজন নিস্বার্থ ব্যক্তি। নিজের কোন ব্যক্তিগত লাভের জন্য আমি এ সংস্কারমূলক কাজে হাত দেইনি- এ ছিল হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের ঘোষণাপত্রের সংক্ষিপ্ত সার। নিজের জাতির সামনে তিনি এটি পেশ করেছিলেন। এর মধ্যে শুধু ধর্মীয় প্রচারণাই ছিল না বরং একই সঙ্গে তামাদ্দুনিক ও নৈতিক সংস্কার এবং রাজনৈতিক বিপ্লবের দাওয়াতও ছিল।)
কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না:
(৩৩-আহযাব: ১) হে নবী! আল্লাহকে ভয় করো এবং কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না৷ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী৷২
২. ভাষণ শুরু করে প্রথম ব্যাক্যেই নবী করীমের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আশংকার অবসান ঘটিয়েছেন। বক্তব্যের নিগূঢ় অর্থ হচ্ছে দীনের কল্যাণ কিসে এবং কিসে নয় এ বিষয়টি আমিই ভালো জানি। কোন্ সময় কোন্ কাজটি করতে হবে এবং কোন্ কাজটি অকল্যানকর তা আমি জানি।কাজেই তুমি এমন কর্মনীতি অবলম্বন করো না যা কাফের ও মুনাফিকদের ইচ্ছার অনুসারী হয় বরং এমন কাজ করো যা হয় আমার ইচ্ছার অনুসারী। কাফের ও মুনাফিকদেরকে নয় বরং অমাকেই ভয় করা উচিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন