আল্লাহ কি নিরাকার ?
আস্-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মানুষের আমল বিশুদ্ধ হবার পূর্বশর্ত হল বিশুদ্ধ ঈমান। যেমন আল্লাহ বলেন, “মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ প্ররষ্কার দান করব।” –সূরা নাহল (১৬:৯৭)
অনত্র আল্লাহ বলেন, “যারা বিশ্বাসী হয়ে পরলোক কামনা করে এবং ওর সাথে যথাযথ চেষ্টা করে তাদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।” সূরা বাণী ইসরাঈল (১৭:১৯)।
ঈমান বিশুদ্ধ না হলে আমল যতই বিশুদ্ধ হোক তা কবুল হবে না। যেমন সলাত বিশুদ্ধ হওয়ার পূর্ব শর্ত উযু। উযু যদি বিশুদ্ধ না হয় তাহলে সলাত হয় না। ঈমানের মধ্যে সর্ব প্রথম হল আল্লাহর উপর ঈমান। সেই আল্লাহর উপর ঈমান যদি বিশুদ্ধ না হয় তাহলে অন্যান্য আমল যতই বিশুদ্ধ হোক, যেমন সলাত, সিয়াম, হাজ্জ, যাকাত কোনটাই কবুল হবে না।
ভ্রান্ত আক্বীদা-০১: আল্লাহ নিরাকার (পর্ব-০১)
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড, ঢাকা। এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড, যার সদস্যরা আমাদের দেশের সকল শিক্ষার্থীদের হাতে (১ম শ্রেনী থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত) বছরের শুরুতে নির্ধারিত বিষয়ের উপর পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন। তার মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞান সম্পর্কিত দুটি বই হচ্ছে ‘ইসলাম শিক্ষা’ (মুসলিম ছাত্রদের জন্য) এবং ‘হিন্দু ধর্ম শিক্ষা।’ কিন্তু এ রকম গুরুদায়িত্ব সম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের মুসলিম শিক্ষার্থীদের হাতে ইসলাম শিক্ষায় শিক্ষিত করার নামে, তাদেরকে ঈমান ও আকাঈদ শিক্ষা দেয়ার মানসে এবং তাওহীদপন্থী করে তুলার লক্ষ্যে কি তুলে দিচ্ছে, তার একটি উদাহারণঃ
“আল্লাহ-তিনি অদৃশ্য ও নিরাকার অথচ সর্বত্র বিরাজমান।” –মাধ্যমিক ইসলাম শিক্ষা (৯ম-১০ম শ্রেণী; প্রথম অধ্যায়ঃ আকাইদ; ১ম পরিচ্ছেদঃ (ক) তাওহীদ)
উল্লেখিত বইটি ছাত্রদের কচি মনে আল্লাহ সম্পর্কে যে বিশ্বাস বদ্ধমূল করতে চেয়েছে তা হল আল্লাহ নিরাকার এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমান। বইটির এই বক্তব্য যে ‘ইসলাম’ তা প্রমান হয় বইটির নামে এবং এখানে আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি ইসালামের শিক্ষা হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হল আল্লাহ সাকার ও আরশে সমাসীন, তিনি নিরাকার নন এবং সর্বত্র বিরাজমানও নন।
যদি এটি ইসলামের শিক্ষা না হয়ে থাকে, তাহলে এ ধারণা বা বিশ্বাসটি কোথা থেকে আমদানি করা হয়েছে। এটা বুঝা যাবে, যদি আমরা ঐ ৯ম-১০ম শেণীর হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য রচিত ‘মাধ্যমিক হিন্দু ধর্ম শিক্ষা’ বইয়ের দিকে তাকাই!!! সেখান থেকে আমরা জানতে পারব যে, “আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান” কথাটি হিন্দু ধর্ম হতে এনে ইসলাম শিক্ষার মধ্যে ঢুকান হয়েছে!!!
এখানে তার প্রমাণ দেয়া হলঃ “ব্রক্ষ্ম ঈশ্বর। তিনি এক, অদ্বিতীয়। তিনি নিরাকার ও সর্বব্যাপী” -মাধ্যমিক হিন্দু ধর্ম শিক্ষা (৪র্থ পাঠঃ ঈশ্বরবাদ; পৃষ্ঠাঃ ২৩, ২৪ ও ২৫)
বইটি হিন্দু ছাত্রদিগকে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা দিতে চেয়েছে, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা দেখছি ইসলাম শিক্ষা বইটিতে মুসলমান কোমলমতি ছাত্রদেরকে হিন্দুধর্ম শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে ইসলাম শিক্ষার নামে। অবশ্য হিন্দু ধর্ম শিক্ষার লেখকগণ ঐ কথাগুলির বরাত ‘বেদ’ হতে দিয়েছেন, কিন্তু ইসলাম শিক্ষার লেখকগণ ‘আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান’ এই কথাটি কোথায় পেলেন, এর কোন বরাত বা দলীল দেন নাই।
এতে প্রমাণ হয় ইসলাম শিক্ষার লেখকগণ হিন্দু ধর্মের শিক্ষাকে ইসলামের শিক্ষা বলে চালিয়ে দেবার অপচেষ্টা করেছেন। এ অপচেষ্টার কারন কি? অন্য দিকে তথা কথিত একদল মুসলমান বলে থাকেন আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান, এ কথাটি একটি খাটি মিথ্যা কথা। এ কথার কোন দলিল কুরআন ও হাদীসে নাই। আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি আল্লাহ সম্পর্কে অসত্য ও মিথ্যা, ঈমানকে কলুষিত করার কথা। এই বিশ্বাস ঈমানকে কলুষিত করবে, জীবন জেন্দেগীর আমলকে বরবাদ করবে। যেহেতু গত পোষ্টগুলোতে “আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান” নন, সে বিষয়ে কুরআন ও হাদীস থেকে আলোচনা করা হয়েছে, তাই আমরা আগামী কয়েকটি পোষ্টে আল্লাহর আকার সম্পর্কে কোরআন ও সহীহ হাদিসের দলীল উল্লেখ করার মাধ্যমে কিছু লিখার চেষ্টা করব (ইনশাআল্লাহ)।
পর্যালোচনাঃ
আল্লাহ তা’আলা নিরাকার নন, তার আকার আছে। তিনি শুনেন, দেখেন এবং কথা বলেন। তার হাত, পা, চেহারা, চোখ ইত্যাদি আছে। তবে তার সাথে সৃষ্টির কোন কিছুই তুলনীয় নয়। আল্লাহ বলেন, “কোন কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা আশ-শূরা (৪২:১১)।
সুতরাং তার আকারের সাথে কোন কিছুর আকারের তুলনা করা যাবে না। যেমন আল্লাহ নিজেই বলেন, “সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন সাদৃশ্য বর্ণনা করো না।” –সূরা নাহল (১৬:৭৪)।
অতএব আল্লাহর আকার আছে, তবে কোন কিছুর সাথে তা তুলনীয় নয়। কুরআন ও সহীহ হাদীসে তার আকৃতি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তার কোন রুপক বা বিকৃত অর্থ করা যাবে না। বরং বলতে হবে তিনি তার মত। নিম্মে কিছু উদাহারণ দেয়া হলঃ
আল্লাহর হাতঃ
আল্লাহর আকার আছে, এর অন্যতম প্রমাণ হল তার হাত আছে। এ সম্পর্কে নিম্নে দলীল পেশ করা হলঃ
(১) মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইহুদীদের একটি বক্তব্য এভাবে তুলে ধরেছেন, “আর ইহুদীরা বলে আল্লাহর হাত রুদ্ধ; তাদের হাতই বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের এ উক্তির দরুণ তাদের প্রতি অভিশাপ করা হয়েছে; বরং তার (আল্লাহর) উভয় হাত প্রসারিত।” -সূরা মায়েদাহ (৫:৬৪)
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, “বরকতময় তিনি, যার হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব, তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” -সূরা মুলক (৬৭:১)
(৩) অনত্র আল্লাহ বলেন, “বলুন, ইয়া আল্লাহ! .....আপনারই হাতে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সব বিষয়ে ক্ষমতাবান।” -সূরা আলে ইমরান (৩:২৬)
(৪) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর।” -সূরা ফাতহ (৪৮:১০)
(৫) আল্লাহ আরো বলেন, “তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করে না। ক্বিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুঠোতে এবং আকাশ সমূহ ভাজ করা অবস্থায় থাকবে তার ডান হাতে।” -সূরা যুমার (৩৯:৬৭)
এ আয়াতের তাফসীরে আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, ইহুদীদের একজন বড় আলেম রসূল (স.)-এর নিকট এসে বলল, “হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে) এটা লিখিত পাচ্ছি যে, আল্লাহ তা‘আলা সপ্ত আকাশ রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর এবং যমীনগুলো রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষরাজিকে রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর এবং পানি ও মাটি রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর, আর সমস্ত মাখলূককে রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর। অতঃপর এগুলা দুলিয়ে তিনি বলবেন, আমিই সবকিছুর মালিক ও বাদশা। রসূল (স.) ইহুদী আলেমের কথার সত্যতায় হেসে ফেলেন, এমনকি তার মাড়ির দাত প্রকাশিত হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করেন।” -সহীহুল বুখারী (হা/৪৮১১, ৭৪১৪, ৭৪১৫, ৭৪৫১, ৭৫১৩, ৬৫১৯: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৪৪৪৮: ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ও সহীহ মুসলিম (হা/২৭৮৬: ফুয়াদ আল-বাকী কর্তৃক প্রদত্ত); (হা/৬৯৩৯, ৬৯৪১, ৬৯৪৩: হাদীস একাডেমী); (হা/৬৭৮৯, ৬৭৯১, ৬৭৯৩: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/৬৮৪৩, ৬৮৪৫, ৬৮৪৭: ইসলামিক সেন্টার) এবং মুসনাদে আহমাদ (হা/৪৩৬৮)
(৬) ইবনু ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রসূল (স.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূল (স.) বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবীকে তার মুঠোতে ধারণ করবেন এবং সমস্ত আকাশকে স্বীয় ডান হাতে গুটিয়ে নিয়ে বলবেন, আমিই একমাত্র বাদশাহ’।” -সহীহুল বুখারী (হা/৭৪১২: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৬৯০৮: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৭) ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (স.) বলেছেন, “ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আকাশমন্ডলী পেচিয়ে নিবেন। তারপর তিনি আকাশমন্ডলীকে ডান হস্তে ধরে বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় শক্তিশালী লোকেরা? কোথায় অহংকারীরা? এরপর তিনি বাম হস্তে গোটা পৃথিবী গুটিয়ে নিবেন এবং বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় অত্যাচারী লোকেরা, কোথায় বড়ত্ব প্রদর্শনকারীরা?” -সহীহ মুসলিম (হা/২৭৮৮: ফুয়াদ আল-বাকী কর্তৃক প্রদত্ত); (হা/৬৯৪৪: হাদীস একাডেমী); (হা/৬৭৯৪: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/৬৮৪৮: ইসলামিক সেন্টার)
(৮) রসূল (স.) বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) প্রতি রাতে তার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে করে দিনের গুনাহগার তওবা করে। আর তিনি দিনে তার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে করে রাতের গুনাহগার তওবা করে।” -সহীহ মুসলিম (হা/২৭৫৯: ফুয়াদ আল-বাকী কর্তৃক প্রদত্ত); (হা/৬৮৮২: হাদীস একাডেমী); (হা/৬৭৩৪: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/৬৭৯০: ইসলামিক সেন্টার)
(৯) শাফা‘আত সংক্রান্ত হাদিছে আছে, হাশরবাসী আদম (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, “হে আদম! আপনি মানুষের পিতা। আল্লাহ আপনাকে তার নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন।” -সহীহুল বুখারী (হা/৩৩৪০, ৩৩৬১, ৪৭১২, ৭৪১০, ৭৫১০: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৩১০১, ৪৩৫৩: ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ও সহীহ মুসলিম (হা/১৯৪: ফুয়াদ আল-বাকী কর্তৃক প্রদত্ত); (হা/৩৮৬: হাদীস একাডেমী); (হা/৩৭৬: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/৩৮৭: ইসলামিক সেন্টার) এবং মুসনাদে আহমাদ (হা/৯২২৯)
(১০) আল্লাহর রসূল (স.) বলেন, “নিশ্চয়ই সকল আদম সন্তানের অন্তর সমূহ একটি অন্তরের ন্যায় আল্লাহ তা‘আলার আঙ্গুল সমূহের দু‘টি আঙ্গুলের মাঝে অবস্থিত। তিনি যেমন ইচ্ছা তা পরিচালনা করেন।” -সহীহ মুসলিম (হা/২৬৫৪: ফুয়াদ আল-বাকী কর্তৃক প্রদত্ত); (হা/৬৬৪৩: হাদীস একাডেমী); (হা/৬৫০৯: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/৬৫৬০: ইসলামিক সেন্টার)
(১১) আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (স.) বলেছেন, “যে তার হালাল রোযগার থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করবে (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ হালাল বস্তু ছাড়া কিছুই গ্রহন করেন না। আর আল্লাহ তা তার ডান হাতে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তার দানকারীর জন্য তা প্রতিপালন করতে থাকেন যেরূপ তোমাদের কেউ তার অশ্ব-শাবককে লালন-পালন করতে থাকে। অবশেষে একদিন তা পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়।” -সহীহুল বুখারী (হা/৭৪৩০, ১৪১০: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৬৮১১: ইসলামিক ফাউন্ডেশন) এবং সহীহ মুসলিম (হা/১০১৪: ফুয়াদ আল-বাকী কর্তৃক প্রদত্ত); (হা/২২৩২: হাদীস একাডেমী); (হা/২২১১: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/২২১২: ইসলামিক সেন্টার)
(১২) রসূল (স.) বলেন, “আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে বলবেন, হে আদম! উত্তরে তিনি বলবেন, হাযির হে প্রতিপালক! আমি সৌভাগ্যবান এবং সমস্ত কল্যাণ আপনার হাতে। তিনি বলবেন, জাহান্নামীদেরকে বের করে দাও।” -সহীহুল বুখারী (হা/৩৩৪৮, ৪৭৪১, ৬৫৩০, ৭৪৮৩: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৩১০৮: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(১৩) আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিল?” -সূরা ছোয়াদ (৩৮:৭৫)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সবাই ঐক্যমত যে, আল্লাহর উভয় হাতই প্রকৃত। এখানে সঠিক অর্থ বাদ দিয়ে কুদরতী হাত, অনুগ্রহ, শক্তি, রাজত্ব, অঙ্গীকার এসব অর্থ গ্রহণ করা যাবে না কয়েকটি কারণে। যেমন-
(ক) প্রমাণ ছাড়া প্রকৃত অর্থকে পরির্বতন করে রূপক অর্থ নেয়া বাতিল।
(খ) সূরা ছোয়াদের ৭৫ নং আয়াতে হাতের সম্বন্ধ করা হয়েছে আল্লাহর দিকে দ্বিবচন শব্দ দ্বারা। পক্ষান্তরে কুরআন এবং সুন্নাহর কোথাও নেয়া’মত ও শক্তির সমন্ধ আল্লাহর দিকে দ্বিবচন করা হয়নি। সুতরাং প্রকৃত হাতকে নেয়া’মত ও কুদরতী অর্থে ব্যাখ্যা করা শুদ্ধ ও সঠিক নয়।
এতগুলো কুরআনের আয়াত ও হাদীস থেকে জানতে পারলাম যে, আল্লাহ তা’আলার ডান হাত আছে, বাম হাত আছে, আল্লাহ তা’আলা তার হাতকে মুষ্টিবদ্ধ করেন, তার হাতে পাঁচটি আঙ্গুল আছে, তিনি তার আঙ্গুলগুলো সংকোচন ও প্রসারণ করেন।
ভ্রান্ত আক্বীদা-০২: আল্লাহ নিরাকার (পর্ব-০২)
সমাজে প্রচলিতে একটি আক্বীদা হচ্ছে যে, ‘আল্লাহ নিরাকার।’ অধিকাংশ মানুষ এই আক্বীদায় বিশ্বাসী। এমনকি অধিকাংশ আলেমও এর পক্ষে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কুরআন ও হাদীস এ সম্পর্কে কি বলে?
পর্যালোচনাঃ
আল্লাহ তা’আলা নিরাকার নন, তার আকার আছে। তিনি শুনেন, দেখেন এবং কথা বলেন। তার হাত, পা, চেহারা, চোখ ইত্যাদি আছে। তবে তার সাথে সৃষ্টির কোন কিছুই তুলনীয় নয়। আল্লাহ বলেন, “কোন কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা আশ-শূরা (৪২:১১)।
সুতরাং তার আকারের সাথে কোন কিছুর আকারের তুলনা করা যাবে না। যেমন আল্লাহ নিজেই বলেন, “সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন সাদৃশ্য বর্ণনা করো না।” –সূরা নাহল (১৬:৭৪)।
অতএব আল্লাহর আকার আছে, তবে কোন কিছুর সাথে তা তুলনীয় নয়। কুরআন ও সহীহ হাদীসে তার আকৃতি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তার কোন রুপক বা বিকৃত অর্থ করা যাবে না। বরং বলতে হবে তিনি তার মত। নিম্মে কিছু উদাহারণ দেয়া হলঃ
-------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহর পা ও পায়ের পাতাঃ
(১) আল্লাহ তার পদনালীর বর্ণনা দিয়ে বলেন, “সেদিন পায়ের নলা উন্মোচিত করা হবে এবং তাদের কে (কাফিরদেরকে) আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য কিন্তু তারা তা করতে পারবে না।” -সূরা কলম (৬৮:৪২)
(২) এ আয়াতের তাফসীরে সহীহুল বুখারীতে আবু সাঈদ খুদরী (রা) হতে একটি হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রসূল (স.) বলেছেন, “(ক্বিয়ামতের দিন) আমাদের প্রভু পায়ের নলা উন্মুক্ত করে দিবেন। অতঃপর সকল মুমিন পুরুষ ও নারী তাকে সিজদা করবে। কিন্তু বাকী থাকবে ঐসব লোক, যারা দুনিয়ায় সিজদা করত লোক দেখানো ও প্রচারের জন্য। তারা সিজদা করার জন্য যাবে, কিন্তু তাদের পৃষ্ঠদেশ একখন্ড তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে।” -সহীহুল বুখারী (হা/৪৯১৯, ২২: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৪৫৫৪: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৩) আল্লাহ তা‘আলার পা সম্পর্কে আল্লাহর রসূল (স.) বলেন, “জাহান্নামে (জাহান্নামীদের) নিক্ষেপ করা হতে থাকবে আর সে (জাহান্নাম) বলবে, আরো আছে কি? শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক তাতে পা রাখবেন। তাতে জাহান্নামরে একাংশের সাথে আরেক অংশ মিশে যাবে। অতঃপর জাহান্নাম বলবে, তোমার প্রতিপত্তি ও মর্যাদার শপথ! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।” -সহীহুল বুখারী (হা/৭৩৮৪, ৪৮৪৮: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৬৮৮০: ইসলামিক ফাউন্ডেশন) এবং সহীহ মুসলিম (হা/২৮৪৮: ফুয়াদ আল-বাকী কর্তৃক প্রদত্ত); (হা/৭০৬৯, ৭০৭১: হাদীস একাডেমী); (হা/৬৯১৪, ৬৯১৬: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/৬৯৭১, ৬৯৭৩: ইসলামিক সেন্টার)
(৪) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (স.) বলেছেন, “কুরসী হচ্ছে আল্লাহর দুটি পায়ের পাতা রাখার জায়গা।” –মুসতাদরেক হাকিম (খন্ডঃ ২; পৃষ্ঠাঃ ২৮২)
-------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহর চোখঃ
আল্লাহ তা’আলা নিজের দেখার ব্যাপারে কুরআনের (৫০) পঞ্চাশটি আয়াতে প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু আইন (চোখ) ও আইয়ুন (চোখগুলো) শব্দ (৫) পাঁচটি আয়াতে ব্যবহার করেছেন। -ঈমান ও আক্বীদা (পৃষ্ঠাঃ ৬২-৬৩: আল্লামা ‘আলীমুদ্দীন একাডেমী; লেখকঃ হাফিয শাইখ আইনুল বারী আলিয়াবী)
এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীস থেকে কয়েকটি দলীল পেশ করা হলঃ
(১) আল্লাহ বলেন, “হে নূহ! তুমি আমার চোখের সামনে আর আমার ওয়াহী মোতাবেক নেীকাটি তৈরী কর।” –সূরা হুদ (১১:৩৭) এবং সূরা মু’মিনূন (২৩:২৭)
(২) আল্লাহ আরো বলেন, “তখন নূহ (আ.) আরোহন করালাম কাঠ ও পেরেক নির্মেত এক নৌযানে, যা আমার চোখের সামনে চললো…” –সূরা ক্বামার (৫৪:১৩-১৪)
(৩) আল্লাহ বলেন, “(হে মূসা!) আমি আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হতে পার।” –সূরা ত্ব-হা (২০:৩৯)
(৪) আল্লাহ বলেন, “(হে মুহাম্মদ!) তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্য ধারণ কর। তুমি আমার চোখের সামনেই রয়েছ।” –সূরা তূর (৫২:৪৮)
(৫) অন্যদিকে রসূল (স.) বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ অন্ধ নন। সাবধান! নিশ্চয়ই দাজ্জালের ডান চোখ কানা। তার চোখটি একটি ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মত।” -সহীহুল বুখারী (হা/৩৪৩৯, ৩০৫৭, ৩৩৩৭, ৪৪০২, ৬১৭৫, ৭১২৩, ৭১২৭, ৭৪০৭: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৩১৯৪: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
সুতরাং কুরআন ও হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা’আলার প্রকৃতই চোখ আছে। আর এটাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করা যাবে না। কারণ আল্লাহর কোন তুলনা নেই।
-------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ তা’আলা সবকিছু শুনেন, দেখেন এবং জানেনঃ
আল্লাহ সব কিছু দেখেন, শোনেন। তিনি এ বিশ্বজাহান ও সমস্ত সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা, নিয়ন্তা ও পরিচালক। তিনি মানুষকে রিযিক দান করেন, রোগাক্রান্ত করেন ও আরোগ্য দান করেন, উপকার-ক্ষতি, কল্যাণ-অকল্যাণ বিধান করেন। তিনি জীবন-মৃত্যুর মালিক, সকল সমস্যার একমাত্র সমাধানদাতা। । সুতরাং তার আকার নেই, একথা স্বীকার করা তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করারই নামান্তর। কুরআন ও হাদীস থেকে দলীলঃ
(১) আল্লাহ বলেন, “কোন কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা আশ শূরা (৪২:১১)
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা আন নিসা (৪:৫৮)
(৩) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “ওটা এজন্য যে, আল্লাহ রাত্রিকে প্রবিষ্ট করেন দিবসের মধ্যে এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করেন রাত্রির মধ্যে এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।” -সূরা হজ্জ (২২:৬১)
(৪) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “হে নাবী! তুমি বল, তারা কত কাল ছিল, আল্লাহই তা ভাল জানেন, আকাশমন্ডলীর ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তারই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা।” -সূরা কাহাফ (১৮:২৬)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, “সমস্ত সৃষ্টজীবকে আল্লাহ তা‘আলা দেখেন ও তাদের সকল কথা শুনেন। তার নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না।” –তাফসীরে ত্বাবারী (খন্ডঃ ১৫; পৃষ্ঠাঃ ২৩২)
ক্বাতাদা (রহঃ) বলেন, “আল্লাহর থেকে কেউ বেশী দেখেন না ও শুনেন না।” –তাফসীরে ত্বাবারী (খন্ডঃ ১৫; পৃষ্ঠাঃ ২৩২)
ইবনু যায়েদ (রহঃ) বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টজীবের সকল কাজকর্ম দেখেন এবং তাদের সকল কথা শুনেন। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” –তাফসীরে ত্বাবারী (খন্ডঃ ১৫; পৃষ্ঠাঃ ২৩২)
বাগাবী (রহঃ) বলেন, “সমস্ত সৃষ্টজীব যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের দেখেন এবং তাদের সর্বপ্রকার কথা শ্রবণ করেন। তার দেখার ও শুনার বাইরে কোন কিছুই নেই।” –মা’আলিমুত তানযীল (খন্ডঃ ৫; পৃষ্ঠাঃ ১৬৫)
(৫) আল্লাহ তা’আলা মূসা ও হারূণ (আঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, “তোমরা ভয় করো না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও আমি দেখি।” -সূরা ত্ব-হা (২০:৪৬)
এখানে আল্লাহ মূসা ও হারূণের সাথে থাকার অর্থ হচ্ছে- তিনি আরশের উপর সমাসীন। আর মূসা ও হারূণ (আঃ)-এর উভয়ের সাথে আল্লাহর সাহায্য রয়েছে এবং তিনি তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করছেন।
(৬) আল্লাহ আরো বলেন, “কখনই নয়, অতএব তোমরা উভয়ে আমার নিদর্শন সহ যাও, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শ্রবণকারী।” -সূরা আশ শূ’আরা (২৬/১৫)।
পূর্বোক্ত ব্যাখ্যাই এখানে প্রযোজ্য।
(৭) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও গোপন পরামর্শের খবর রাখি না? অবশ্যই রাখি। আমার ফেরেশতারা তো তাদের নিকট অবস্থান করে সব কিছু লিপিবদ্ধ করেন।” -সূরা যুখরুফ (৪৩:৮০)
(৮) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “হে নাবী! তুমি বলে দাও, তোমরা কাজ করতে থাক, আল্লাহ তো তেমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন।” -সূরা তওবা (৯:১০৫)
(৯) আল্লাহ আরো বলেন, “সে কি অবগত নয় যে, আল্লাহ দেখেন?” -সূরা আলাক্ব (৯৬:১৪)
(১০) আল্লাহ বলেন, “(আল্লাহ) তোমাকে দেখেন যখন তুমি (সলাতের জন্য) দন্ডায়মান হও এবং দেখেন সিজদাকারীদের সাথে তোমার উঠাবসা। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” -সূরা শু’আরা (২৬:২১৮-২২০)
(১১) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন, যারা বলে যে আল্লাহ দরিদ্র আর আমরা ধনী। তারা যা বলেছে তা এবং অন্যায়ভাবে তাদের নাবীদের হত্যা করার বিষয় আমি লিপিবদ্ধ করব এবং বলব, তোমরা দহন যন্ত্রণা ভোগ কর।” -সূরা আলে ইমরান (৩:১৮১)
(১২) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “আল্লাহ অবশ্যই শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর নিকটও ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা মুজাদালাহ (৫৮:১)
(১৩) আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ বান্দদিগকে সর্বক্ষণ দেখেন বা লক্ষ্য রাখেন।” –সূরা আল ইমরান (৩:১৫)
(১৪) আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ সে সব কিছুই দেখতে পান যা তোমরা কর।” –সূরা বাকারাহ (২:৯৬)
(১৫) আল্লাহর রসূল (স.) সাহাবাদেরকে বলেছিলেন, “তোমরা বধির কিংবা অনুপস্থিতকে ডাকছ না; বরং তোমরা ডাকছ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ও নিকটতমকে।” -সহীহুল বুখারী (হা/৭৩৮৬, ২৯৯২: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৬৮৮৩: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(১৬) আয়িশাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (স.) বলেছেনঃ “জিবরীল আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, আল্লাহ আপনার কওমের (কাফির) লোকদের কথা শুনছেন এবং তারা (কাফিররা) আপনাকে যে জবাব দিয়েছে তাও তিনি শুনছেন।” -সহীহুল বুখারী (হা/৭৩৮৯, ৩২৩১: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৬৮৮৫: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(১৭) আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদিন বায়তুল্লাহর নিকট একত্রিত হল দু‘জন সাকাফী ও একছন কুরাইশী অথবা দু‘জন কুরাইশী ও একজন সাকাফী। তাদের পেটে চর্বি ছিল বেশী, কিন্তু তাদের অন্তরে বুঝার ক্ষমতা ছিল কম। তাদের একজন বলল, তোমাদের অভিমত কি? আমরা যা বলছি আল্লাহ কি সবই শুনতে পান? দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ শোনেন, যদি আমরা উচ্চস্বরে বলি। আমরা চুপি চুপি বললে তিনি শুনেন না। তৃতীয়জন বলল, যদি তিনি উচ্চস্বরে বললে শোনেন, তবে তিনি নিচু স্বরে বললেও শুনবেন। এরই পেক্ষিতে আল্লাহ নিম্মোক্ত আয়াত নাযিল করলেন, “(দুনিয়ায় নিজেদের শরীরের অংশগুলোকে তোমরা) এই ভেবে গোপন করতে না যে, না তোমাদের কান, না তোমাদের চোখ আর না তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। বরং তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা কর তার অধিকাংশই আল্লাহ জানেন না। [সূরা ফুসসিলাত (৪১:২২)]” -সহীহুল বুখারী (হা/৭৫২১, ৪৮১৬: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৭০১৩: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(১৮) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, ও সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা হজ্জ (২২:৭৫)
আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, “এ আয়াতটিই হচ্ছে জাহমিয়্যা সম্প্রদায়ের বাতিল কথার প্রত্যুত্তর। কেননা জাহমিয়্যা সম্প্রদায় আল্লাহর নাম ও গুনবাচক নাম কোনটাই সাব্যস্ত করে না। সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলা যে দেখেন ও শুনেন এটাও সাব্যস্ত করে না এ ধারনায় যে, সৃষ্টির সাথে আল্লাহর সাদৃশ্য হবে। তাদের এ ধারণা বাতিল। এজন্য যে, তারা আল্লাহকে মুর্তির সাথে সাদৃশ্য করে দিল। কারণ মুর্তি শুনেও না দেখেও না।” –মা’আরিজুল কবূল (খন্ডঃ ১; পৃষ্ঠাঃ ৩০০-৩০৪)
মু‘তাযিলা সম্প্রদায় বলে, আল্লাহর কর্ণ আছে কিন্তু শুনেন না, চক্ষু আছে কিন্তু দেখেন না। এভাবে তারা আল্লাহর সমস্ত গুণকে অস্বীকার করে। অর্থাৎ কোন গুণ-বৈশিষ্ট ছাড়া তারা শুধু নামগুলো সাব্যস্ত করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের মতবাদ জাহমিয়্যাদের মতবাদের ন্যায়। তাদের উভয় মতবাদই কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী। পক্ষান্তরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কোন কিছুর সাথে তুলনা ব্যতিরেখে আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করে ঠিক সেভাবেই, যেভাবে কুরআন ও হাদীস সাব্যস্ত করে। যেমন আল্লাহ বলেন, “কোন কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা আশ শূরা (৪২:১১)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন, “সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন সাদৃশ্য স্থির করো না।” -সূরা নাহল (১৬:৭৪)
আল্লাহ তা’আলা যে শুনেন এবং দেখেন, এটা কোন সৃষ্টির শুনা ও দেখার সাথে তুলনা করা নিষেধ। আল্লাহর দেখা ও শুনা তেমন, যেমন তার জন্য শোভা পায়। এ দেখা-শুনা সৃষ্টির দেখা ও শুনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। –মা’আরিজুল কবূল (খন্ডঃ ১; পৃষ্ঠাঃ ৩০৪)
আল্লাহর সাথে সৃষ্টজীবের সাদৃশ্য করা হারাম। কারণঃ
(১) আল্লাহর জাত ও সিফাত তথা আল্লাহ তা’আলার সত্ত্বা ও গুণ-বৈশিষ্ট্য এবং সৃষ্টজীবের গুণ-বৈশিষ্ট্য এক নয়। প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে এবং সেটা তার জন্যই প্রযোজ্য। আল্লাহ তা’আলা সর্বদা জীবিত আছেন ও থাকবেন। কিন্তু সৃষ্টিকুলকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে। আল্লাহ তা’আলাকে নিদ্রা এমনকি তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না কিন্তু সৃষ্টকুলের ঘুম/নিদ্রা ছাড়া চলে না। তাহলে কি করে আল্লাহর সাথে সৃষ্টজীবের তুলনা করা যায়।
(২) সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করায় সৃষ্টিকর্তার মান-ইজ্জত নষ্ট হয়। ত্রুটিযুক্ত সৃষ্টিজীবের সাথে ত্রুটিমুক্ত মহান ও পবিত্র আল্লাহ তা’আলাকে তুলনা করা হলে আল্লাহকে অপমান করা হয়।
(৩) স্রষ্টা ও সৃষ্টজীবের নাম ও গুণ রয়েছে কিন্তু উভয়ের প্রকৃতি এক নয়।
ভ্রান্ত আক্বীদা - আল্লাহ নিরাকার (পর্ব-০৩)
সমাজে প্রচলিতে একটি আক্বীদা হচ্ছে যে, “আল্লাহ নিরাকার” এবং অধিকাংশ মানুষ এই আক্বীদায় বিশ্বাসী। এমনকি অধিকাংশ আলেমও এর পক্ষে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কুরআন ও হাদীস এ সম্পর্কে কি বলে?
পর্যালোচনাঃ
আল্লাহ তা’আলা নিরাকার নন, তার আকার আছে, তবে কোন কিছুর সাথে তা তুলনীয় নয়। কুরআন ও সহীহ হাদীসে তার আকৃতি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তার কোন রুপক বা বিকৃত অর্থ করা যাবে না। বরং বলতে হবে তিনি তার মত। মহান আল্লাহ তা’আলা যে নিরাকার নন, তার সমর্থনে নিম্মে কিছু উদাহারণ দেয়া হলঃ
আল্লাহর চেহারাঃ
আল্লাহ তা’আলা আল-কুরআনের চৌদ্দটি (১৪ টি) আয়াতে তার চেহারার প্রমাণ দিয়েছেন। -আক্বীদাতুল মুসলিমীন (খন্ডঃ ০২; পৃষ্ঠাঃ ৪৬৬)। নিম্নে তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
(১) আল্লাহ বলেন, “তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও সেদিকেই আল্লাহর চেহারা রয়েছে।” –সূরা বাকারাহ (২:১১৫)
(২) আল্লাহ বলেন, “ভূ-পৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার চেহারা ব্যতীত।” –সূরা আর-রহমান (৫৫:২৬-২৭)
(৩) আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর মুখমন্ডল (সত্ত্বা) ব্যতীত সবকিছু ধ্বংসশীল।” –সূরা কাসাস (২৮:৮৮)
(৪) আল্লাহ বলেন, “অতএব আত্মীয়কে দিয়ে দাও তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও তার মুসাফিরকেও। যারা আল্লাহর চেহারা (দর্শন) কামনা করে তাদের জন্যে এটা শ্রেয় এবং তারাই সফলকাম।” -সূরা রুম (৩০:৩৮)
(৫) আল্লাহ বলেন, “বরং শুধু তার মহান প্রতিপালকের মুখমন্ডল (সন্তোষ) লাভের প্রত্যাশায়।” –সূরা লাইল (৯২:২০)
(৬) আল্লাহ বলেন, “(তারা বলে) কেবল আল্লাহর মুখমন্ডল (সন্তুষ্টি) লাভের জন্য আমরা তোমাদেরকে খাদ্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।” –সূরা দাহর/ সূরা ইনসান (৭৬:৯)
আল্লাহর চেহারা সম্পর্কিত আরো কয়েকটি আয়াতঃ সূরা বাকারা (২:২৭২); সূরা রা’দ (১৩:২২); সূরা আন’আম (৬:৫২) এবং সূরা রুম (৩০:২২)
(৭) জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্নিত। তিনি বলেন, এ আয়াত যখন অবতীর্ন হলঃ “হে নাবী (স.)! আপনি বলে দিন উপর থেকে তোমাদের প্রতি শাস্তি পাঠাতে তিনিই সক্ষম।” [সূরা আন’আম (৬:৬৫)]। নাবী (স.) বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার সত্ত্বার (চেহারার) সাহায্যে আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহ তখন বললেনঃ “কিংবা তোমাদের পায়ের নিচ হতে” তখন নাবী (স.) বললেন, আমি আপনার সত্ত্বার (চেহারার) সাহায্যে আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহ বললেনঃ “কিংবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে” তখন নাবী (স.) বললেনঃ এটি অপেক্ষাকৃত সহজ।” -সহীহুল বুখারী (হা/৭০৪৬, ৪৬২৮: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৬৯০২: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); পর্ব (৯৭): তাওহীদ; অধ্যায় (১৬): আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর চেহারা ছাড়া সবকিছুই ধ্বংসশীল - [সূরা আল-কাসাস (২৮:৮৮)]
(৮) রসূল (স.) বলেন, “জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বলবেন, তোমরা কি চাও, আমি আরও অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেই? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারাগুলো আলোকোজ্জল করে দেন নি, আমাদের জান্নাতে দাখিল করেন নি এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন নি? রসূল (স.) বলেন, এরপর আল্লাহ তা’আলা (হঠাৎ) আবরণ তুলে নিবেন (এবং তারা তার চেহারা দর্শন লাভ করবে)। আল্লাহর (চেহারা) দর্শন লাভের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় জিনিস আর কিছুই তাদের দেয়া হয় নি।” -সহীহ মুসলিম (হা/১৮১: ফুয়াদ আল-বাকী কর্তৃক প্রদত্ত); (হা/৩৩৮: হাদীস একাডেমী); (হা/৩৪৬: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/৩৫৭: ইসলামিক সেন্টার) এবং সূনান ইবনু মাযাহ (হা/১৮৭: আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
সুতরাং উল্লেখিত আয়াত ও হাদীসমূহ দ্বারা প্রমাণ হল যে, আল্লাহর চেহারা আছে। অতএব যার চেহারা আছে তিনি নিরাকার নন। বলা বাহুল্য, চেহারা বা মুখমন্ডলের অপব্যাখ্যা করে সওয়াব বা নেকী বলা বৈধ নয়। যেহেতু তা শাব্দিক অর্থের বিরোধী এবং সলফদের ইজমার পরিপন্থী।
যেমন, মুআততিলাহ ফির্কা বলেঃ আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত ‘ওয়াজহুন’ শব্দের অর্থ আল্লাহর প্রকৃত চেহারা নয়। বরং তা হল আল্লাহর সত্ত্বা কিংবা তার সন্তুষ্টি ও নেকী অথবা তার দিক প্রভৃতি। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জাম’আতের মতে ঐ ধারণা ভুল। বরং তা আল্লাহরই মর্যাদাযোগ্য সত্যিকার চেহারা। -আস-সওয়ায়িকুল মুরসালাত (খন্ডঃ ২; পৃষ্ঠাঃ ১৭৪)
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা’আলার চেহারা বা মুখমন্ডলের সাথে সৃষ্টির মুখমন্ডলের সাদৃশ্য স্থাপন করা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেছেন, “কোন কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা আশ-শূরা (৪২:১১)।
অনুরুপভাবে, তার আকারের সাথে কোন কিছুর আকারের তুলনা করা যাবে না। যেমন আল্লাহ নিজেই বলেন, “সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন সাদৃশ্য বর্ণনা করো না।” –সূরা নাহল (১৬:৭৪)।
যেমন, কেউ যদি আল্লাহকে কোন সৃষ্টির চেহারার মত কল্পনা করে প্রশ্ন করে যে, “আল্লাহর যেহেতু মুখমন্ডল আছে, তাহলে তার মুখমন্ডলে নাক আছে কি?” তাহলে এ প্রশ্নটি বিদ’আত হলেও উত্তর হবে, ‘জানি না।’ যেহেতু কুরআন ও হাদীসে তার উল্লেখ নেই। আছে বলেও নেই, নেই বলেও নেই। সুতরাং যা ‘নেই’ বলে উল্লেখ নেই, তার জন্য আমরা মানবীয় চাহিদার উপর ক্বিয়াস করে একথা বলতে পারি না যে, “অবশ্যই জানি, তার (আল্লাহর) নাক নেই।”
আল্লাহর কথা ও সাক্ষাতঃ
আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে সম্বোধন করেন, আদেশ করেন, উপদেশ দেন। তার এ আদেশ, নিষেধ কিংবা উপদেশমূলক বাণী বা কথা অহীর মাধমে বা পর্দার অন্তরাল থেকে কিংবা দূত মারফত মানুষের কাছে পেীঁছে থাকে।
(১) যেমন আল্লাহ বলেন, “কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন ওহীর (প্রত্যাদেশ) ব্যতিরেকে, অন্তরাল ব্যতিরেকে কিংবা কোন দূত ব্যতিরেকে। আর তখন আল্লাহ যা চান তার অনুমতিক্রমে অহী (প্রত্যাদেশ) করেন। নিঃসন্দেহে তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।” –সূরা শূরা (৪২:৫১)
(২) আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ.) এর সাথে তূর পাহাড়ে কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আমি অনেক রসূলের কথা পূর্বে তোমার নিকট বর্ণনা করেছি এবং অনেক রসূলের কথা তোমার নিকট বর্ণনা করি নি। আর আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন।” –সূরা নিসা (৪:১৬৪)
(৩) এ প্রসঙ্গে অনত্র আল্লাহ বলেন, “মূসা যখন আমার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হল এবং তার প্রতিপালক তার সঙ্গে কথা বললেন, তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দিন, আমি আপনাকে দেখব। (তখন) তিনি বললেন, তুমি আমাকে আদৌ দেখতে পাবে না।” –সূরা আ’রাফ (৭:১৪৩)
(৪) রসূল (স.) বলেছেন, “হে জাবির! আমার কি হল, আমি তোমাকে ভগ্ন হৃদয়ে দেখছি কেন? জাবির (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে রসূলুল্লাহ! আমার পিতা শহীদ হয়েছেন এবং তিনি অনেক সন্তান ও ঋণের বোঝা রেখে গেছেন। তিনি (স.) বলেন, আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দিব না যে, আল্লাহ তা’আলা তোমার পিতার সাথে কিভাবে সাক্ষাত করেছেন? তিনি বলেন, অবশ্যই, ইয়া রসূলুল্লাহ! তিনি (স.) বলেন, আল্লাহ তা’আলা কখনো অন্তরাল ছাড়া কারো সাথে কথা বলেন নি, কিন্তু তোমার পিতার সাথে অন্তরাল ছাড়াই কথা বলেছেন।….” -সূনান ইবনু মাযাহ (হা/১৯০: হাসান, আত-তাওহীদ প্রকাশনী) এবং আত-তিরমিযী (হা/৩০১০: হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী)
আল্লাহ তা’আলা আদম-সহ সকল নাবী ও রসূলগণের সাথে কথা বলেছেন। তিনি মি’রাজের রাতে শেষনাবী (স.) এর সাথে কথা বলেছেন। ক্বিয়ামাত দিবসে তিনি বান্দার সাথে কথা বলবেন। যখন ইচ্ছা তিনি বলেন, যা ইচ্ছা বলেন। যে কোন সময়ে তিনি কথা বলেন। আর সে বলার কোন দৃষ্টান্ত নেই, কোন রকমত্ব নেই। কোন সৃষ্টির বলার মত তার বলা নয়। মূলত, সম্পূর্ণ কুরআন মাজীদ তারই বলা ‘কালাম’ (বাণী) এবং রসূল (স.) এর মুখ নিঃসৃত বাণীও আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী। সুতরাং যিনি কথা বলতে পারেন, তিনি কি কখনো স্ব-সত্ত্বায় নিরাকার হতে পারেন?
সাহায্যকারী গ্রন্থসমূহঃ
১. আল-কুরআনুল কারীম
২. সহীহুল বুখারী
৩. সহীহ মুসলিম
৪. সুনান ইবনে মাজাহ
৫. কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা; লেখকঃ হাফেয আব্দুল মতীন
৬. তাওহীদের ডাক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর’ ২০১৩)
৭. আল্লাহ কি নিরাকার? ও সর্বত্র বিরাজমান; লেখকঃ মুফতী মোঃ আঃ রউফ সালাফী
৮. মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী; লেখকঃ আব্দুল হামীদ ফাইযী
৯. ঈমান ও আক্বীদা; লেখকঃ হাফিয শাইখ আইনুল বারী আলিয়াবী
-------------------------------------------------------------------------------
সাহায্যকারী গ্রন্থসমূহঃ
১. আল-কুরআনুল কারীম
২. সহীহুল বুখারী
৩. সহীহ মুসলিম
৪. কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা; লেখকঃ হাফেয আব্দুল মতীন
৫. তাওহীদের ডাক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর’ ২০১৩)
৬. আল্লাহ কি নিরাকার? ও সর্বত্র বিরাজমান; লেখকঃ মুফতী মোঃ আঃ রউফ সালাফী
৭. তাওহীদ; লেখকঃ আব্দুল হামীদ ফাইযী
৮. ঈমান ও আক্বীদা; লেখকঃ হাফিয শাইখ আইনুল বারী আলিয়াবী
৯. ঈমান ও সহীহ আক্বীদাহঃ আল্লাহ কি নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান; লেখকঃ হাফিয মুহাম্মদ আইয়ূব বিন ইদু মিয়া
সাহায্যকারী গ্রন্থসমূহঃ
১. আল-কুরআনুল কারীম
২. সহীহুল বুখারী
৩. সহীহ মুসলিম
৪. কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা; লেখকঃ হাফেয আব্দুল মতীন
৫. তাওহীদের ডাক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর’ ২০১৩)
৬. আল্লাহ কি নিরাকার? ও সর্বত্র বিরাজমান
ুুুুু
উত্তরমুছুনঅসাধারন লিখেছেন ...আপনার সাথে যদি ফেসবুকে যোগাযোগ করতে পারলে আরো ভালো হত...জাযাকাল্লাহু খাইরেন
উত্তরমুছুন