আল্লাহ আসমানের আরশে সমুন্নত হওয়ার হাদিস সমূহ ░░▒▒▓▓▓

মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক ধারনা রাখার গুরুত্ব এবং তাঁর প্রতি ভুল ধারনা পোষণকারীর পরিনতিঃ
কিয়ামতে মহান আল্লাহ তাঁর প্রতি ভুল ধারনা পোষণকারীকে বল্বেনঃ ''তোমাদের প্রতিপালক সম্পর্কে তোমাদের এই (ভুল) ধারনাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছে'' ফুসসিলাত ৪১/২৩
''আর তিনি মুনাকিক পুরুষ ও মুনাফিকা নারী, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিকা নারীকে শাস্তি দিবেন যারা আল্লাহ্‌ সম্পর্কে খারাপ ধারনা পোষণ করে। তাদের জন্য আছে অশুভ চক্র। আল্লাহ্‌ তাদের উপর রাগান্বিত হয়েছেন আর তাদেরকে লা’নাত করেছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জাহান্নাম। তা কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল'' ফাতহ ৪৮/৬
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর সম্পর্কে সঠিক ধারনা লাভ করার তৌফীক দান করুন, এবং সমস্ত বাতিল আকিদা থেকে নিজের ঈমানকে হিফাজত করার তৌফীক দান করুন। আমীন।


▓▓▓▒▒░░ আল্লাহ আসমানের আরশে সমুন্নত হওয়ার হাদিস সমূহ ░░▒▒▓▓▓

আল্লাহ্ তাআলা আসমানে সমুন্নত হওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত সহীহ হাদীস সমূহঃ
১) আওআলের হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

(والعرش فوق ذلك والله فوق العرش وَهُوَ يَعْلَمُ مَا أَنتُمْ عَليْهِ)

"তার উপর আল্লাহর আরশ। আর আল্লাহ্ আরশের উপরে।
তিনি তোমাদের অবস্থা (আমল) সম্পর্কে অবগত আছেন।"

***তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর, মুসনাদে আহমাদঃ ১/২০৬।
আলেমগণ হাদীসটি সহীহ ও যঈফ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন।
ইমাম ইবনে তাইমীয়া এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল কাইয়্যেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
ইমাম তিরমিজী বলেছেনঃ
হাদীসটি হাসান গরীব।
ইমাম আলবানী হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন।
দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, হাদীসঃ ১২৪৭।
যঈফ হওয়া সত্ত্বেও আলেমগণ আসমানের উপর আল্লাহর সমুন্নত হওয়া প্রমাণ করতে গিয়ে হাদীসটিকে উল্লেখ করেছেন।
তবে আল্লাহ্ তাআলা আসমানের উপরে সমাসীন হওয়ার বিষয়ে অনেক বিশুদ্ধ দলীল-প্রমাণ থাকার পরও এ ধরণের যঈফ হাদীস দ্বারা দলীল না গ্রহণ করাই উত্তম।
এখানে আরেকটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তা এই যে, أوعال (আওআল) শব্দটি وعل এর বহুবচন। এর অর্থে আলেমগণ থেকে একাধিক উক্তি পাওয়া যায়।
কেউ কেউ বলেছেনঃ
এরা হচ্ছেন বিশাল আকারের ফেরেশতা। কুরআনে ফেরেশতা কর্তৃক আরশ বহনের কথা সুস্পষ্ট করেই বলা হয়েছে ["ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে।"***সূরা হাক্বক্বাহঃ আয়াতঃ ৬৯:১৭]।
আবার কেউ কেউ বলেছেনঃ
আওআল হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ এমন এক সৃষ্টি, যার প্রকৃত রূপ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কেউ জানেনা।
কেউ কেউ বলেছেনঃ
আওআল হচ্ছে বিশাল আকারের ষাঁড়।
আবার কেউ বলেছেনঃ
বিরাট আকৃতির শকুন।
মোট কথা এগুলো পৃথিবীর পরিচিত কোন প্রাণী নয়। আল্লাহই ভাল জানেন।

আওআলের হাদীসের বিস্তারিত বিবরণ এই যেঃ

আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেছেনঃ
আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে খোলা ময়দানে বসা ছিলাম।
তখন আমাদের মাথার উপর দিয়ে একটি মেঘখন্ড অতিক্রম করার সময় তিনি বললেনঃ
তোমরা কি জান এটি কী?
আমরা বললামঃ
এটি একটি মেঘের খন্ড।
অতঃপর তিনি বললেনঃ
তোমরা কি জান আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের দূরত্ব কতটুকু?
আমরা বললামঃ
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।
তিনি বললেনঃ
উভয়ের মধ্যে রয়েছে পাঁচশত বছরের দূরত্ব।
এমনি প্রত্যেক আকাশ ও তার পরবর্তী আকাশের মধ্যবতী দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশত বছরের পথ।
এভাবে সপ্তম আকাশের উপর রয়েছে একটি সাগর। সাগরের গভীরতা হচ্ছে আসমান ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। সাগরের উপরে রয়েছে আটটি ওয়া-ইল (ফেরেশতার আকৃতিতে আটটি পাঠা)। তাদের হাঁটু থেকে পায়ের খুর পর্যন্ত দূরত্ব আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। তারা আল্লাহর আরশ পিঠে বহন করে আছে। আরশ এত বিশাল যে, তার উপরের অংশ থেকে নীচের অংশের দূরত্ব হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। আর আল্লাহ্ তাআলা হচ্ছেন আরশের উপরে।

২) সা’দ বিন মুআয যখন বনী কুরায়যার ব্যাপারে ফয়সালা দান করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ
"তুমি তাদের ব্যাপারে সেই ফয়সালা করেছো, যা সাত আসমানের উপর থেকে আল্লাহ্ তা’আলা করেছেন।"
***বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাগাযী।

৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা জনৈক দাসীকে বললেনঃ
আল্লাহ্ কোথায়?
দাসী বললঃ
আকাশে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দাসীর মালিককে বললেনঃ
তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ সে মু’মিন।
***মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।

৪) আল্লাহ্ তা’আলা আকাশের উপরে। মি’রাজের ঘটনায় বর্ণিত হাদীসগুলো তার সুস্পষ্ট দলীল।

৫) পালাক্রমে ফেরেশতাদের দুনিয়াতে আগমণের হাদীসেও আল্লাহ্ তাআলা আকাশের উপরে সমুন্নত হওয়ার দলীল রয়েছে।
হাদীসের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

(يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ)

"তোমাদের নিকট রাতে একদল ফেরেশতা এবং দিনে একদল ফেরেশতা পালাক্রমে আগমণ করে থাকে। তারা ফজর ও আসরের নামাযের সময় একসাথে একত্রিত হয়। অতঃপর তোমাদের কাছে যে দলটি ছিল, তারা উপরে উঠে যায়।
মহান আল্লাহ জানা সত্ত্বেও তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ
আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ?
তাঁরা বলেনঃ
আমরা তাদেরকে নামায অবস্থায় ছেড়ে এসেছি এবং যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তখন তারা নামাযেই ছিল।
***বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।

৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ

(مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلَا يَصْعَدُ إلَى اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ)

"যে ব্যক্তি বৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ হতে একটি খেজুর পরিমাণ সম্পদ দান করে, আর আল্লাহর নিকট তো পবিত্র ব্যতীত কোন কিছুই উর্ধ্বমুখী হয় না, আল্লাহ্ ঐ দান স্বীয় ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা দানকারীর জন্য প্রতিপালন করতে থাকেন। যেভাবে তোমাদের কেউ নিজের ঘোড়ার বাচ্চাকে প্রতিপালন করে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঐ দান পাহাড় সমুতল্য হয়ে যায়।"
***বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ, মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত।

৭) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ

(إِذَا قَضَى اللَّهُ الأَمْرَ فِي السَّمَاءِ ضَرَبَتِ الْمَلاَئِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا خُضْعَانًا لِقَوْلِهِ كَالسِّلْسِلَةِ عَلَى صَفْوَانٍ)

"আল্লাহ তা’আলা যখন আকাশে কোন বিষয়ে ফয়সালা করেন, তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর উক্ত ফয়সালার প্রতি অনুগত হয়ে তাদের পাখাসমূহ এমনভাবে নাড়াতে থাকেন যার ফলে শক্ত পাথরে শিকল দিয়ে প্রহার করলে যে ধরণের আওয়াজ হয় সে রকম আওয়াজ হতে থাকে।"
***বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।

আল্লাহ তাআলা আকাশের উপরে আছেন বাতিল ফির্কা ব্যতীত কেউ তা অস্বীকার করেনি।

সূত্রঃ 
গ্রন্থঃ কুরআন ও হাদীসের মানদন্ডে সুফীবাদ।
অধ্যায়ঃ সূফীবাদ।
সঙ্কলকঃ আব্দুল্লাহ্ শাহেদ আল-মাদানী।

▓▓▓▒▒░░ মহান আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন এবং সর্বত্র বিরাজমান নন ░░▒▒▓▓▓
▓▓▓▒▒░░ কূরসীর বর্ণনা ও পরিধি ░░▒▒▓▓▓

সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি মানব ও জ্বিন জাতিকে কেবল তাঁরই একাত্বতা ঘোষণা ও ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। সালাম বর্ষিত হউক আমাদের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উপর যিনি তাঁর উম্মতের কাছে আল্লাহর একাত্বতা স্বীকার করা ও পালন করার বিস্তারিত জ্ঞান বর্ণনা করে গেছেন। আরও সালাম বর্ষিত হউক তাঁর পরিবার ও সাথীগণের উপর যারা তাঁর কাছ থেকে তাওহীদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

যারা বা অনেকে বলেন এবং বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের জন্য বলছি কুরআন বিশ্বাস করুন। কারন, মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি আরশের উপর সমাসীন। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
সমগ্র জাহানের প্রতিপালক ও সংরক্ষক মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা সপ্তাকাশের উপর অবস্থিত সুমহান আরশের উপর সমুন্নত, তিনি সর্বস্থানে বিরাজমান নন। তাঁর ক্ষমতা অসীম ও সর্বব্যাপী। তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আরশে আ’যীম থেকেই সব কিছু সুচারুরূপে পরিচালিত করেন।

রাসূলুল্লাহ(সাঃ)'ও বলেছেনঃ
আল্লাহ আসমানে আছেন।
সাহাবী (রাদিঃ) এবং তাবেঈগণ সকলেই বলেছেন আল্লাহ আসমানে আছেন। তাছাড়া সকল ইমামই বলেছেন, আল্লাহ আসমানে আছেন। এরপরও যদি বলা হয়, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাহ’লে কি ঈমান থাকবে এবং আমল কবুল হবে? যারা অস্বীকার করবে তারা কাফের হয়ে যাবে।

আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত। তবে তিনি সৃষ্টি জীবের সব কিছু জানেন, দেখেন, পরিচালনা করেন ও তার প্রতিদান দান করেন।
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান- একথা ঠিক নয়, বরং পবিত্র কুরআন বলছে, আল্লাহ আরশে সমাসীন।
এ মর্মে বর্ণিত দলীলগুলো নিম্নরূপঃ-

(১) "আল্লাহ বলেন,‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।"
***সুরা আ‘রাফঃ আয়াত-৫৪।
(২) "নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।"
***সুরা ইউনুসঃ আয়াত-৩।
(৩) "আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হ’লেন।"
***সুরা রা‘দঃ আয়াত-২।
(৪) "দয়াময়(আল্লাহ) আরশে সমাসীন।"
***সুরা ত্বোয়া-হাঃ আয়াত-৫।
(৫) "তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ।"
***সুরা ফুরক্বানঃ আয়াত-৫৯।
(৬) "আল্লাহ তিনি, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।"
***সুরা সাজদাহঃ আয়াত-৪।
(৭) "তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন।"
***সুরা হাদীদঃ আয়াত-৪।
(৮) "যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।"
***সুরা আম্বিয়াঃ আয়াত-২২।
 (৯) "তোমরা কি ভাবনামুক্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন, অতঃপর তা কাঁপতে থাকবে।"
***সুরা মূলকঃ আয়াত-১৬।
১০) "মহান আরশের অধিকারী।"
***সূরা আল বুরূজঃ আয়াত-১৫।
১১) "আল্লাহর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।"
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
***সুরা বাকারা: আয়াত- ২৫৫।

মহান আল্লাহ্ সর্বত্র বিরাজমান নন। তিনি আসমানে বা আকাশে আরশে আযীমে সমাসীন আছেন। এই বিষয়ে কুরআনের আরও কিছু আয়াতঃ-
১) "তিনিই আল্লাহ নভোমন্ডলে এবং ভূমন্ডলে। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় জানেন এবং তোমরা যা কর তাও অবগত।"
***সুরা আল-আনআমঃ আয়াত-৩।
২) "বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"
***সুরা নিসাঃ আয়াত-১৫৮।
৩) "ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।"
***সুরা মা'আরিজঃ আয়াত-৪।
৪) "তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়, তা করে।"
 ***সুরা নাহলঃ আয়াত-৫০।
৫) "না তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী।"
***সুরা মূলকঃ আয়াত-১৭।
৬) "বলুনঃ সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?"
***সুরা মুমিনূনঃ ৮৬।
৭) "অতএব শীর্ষ মহিমায় আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক।"
***সুরা মুমিনূনঃ আয়াত-১১৬।
৮) "যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী।"
***সুরা তাকভীর-২০।
৯) "আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি মহা আরশের মালিক।"
***সুরা নমলঃ আয়াত-২৬।
১০) "তারা যা বর্ণনা করে, তা থেকে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তা, আরশের পালনকর্তা পবিত্র।"
***সুরা যুখরুফঃ আয়াত-৮২।
১১) "বলুনঃ তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্যান্য উপাস্য থাকত; তবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌছার পথ অন্বেষন করত।"
***সুরা বনি ইসরাইলঃ আয়াত-৪২।
১২) "এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।"
***সুরা তাওবাহঃ আয়াত-১২৯।
১৩) "তিনিই সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তত্ত্বপূর্ণ বিষয়াদি নাযিল করেন, যাতে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে।"
***সুরা মুমিন/গাফিরঃ আয়াত-১৫।
১৪) "আপনি ফেরেশতাগণকে দেখবেন, তারা আরশের চার পাশ ঘিরে তাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ঘোষনা করছে। তাদের সবার মাঝে ন্যায় বিচার করা হবে। বলা হবে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর।"
***সুরা যুমারঃ আয়াত-৭৫।
১৫) "আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।"
***সুরা বাকারাহঃ আয়াত-২৫৫।

শেষ কথাঃ 

মহান আল্লাহ্‌ কি বান্দার ‘সাথে’ রয়েছেন???

“তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন। আল্লাহ্‌ তোমাদের কৃতকর্মের সম্যক দ্রষ্টা।”
***সুরা হাদীদঃ আয়াত- ৪।
অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আমাদের সাথে আছেন, স্ব-অস্তিত্বে নয়।
হযরত মুসা(আঃ) ও হারূন (আঃ)- কে আল্লাহ্‌ ফেরাউনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ
“আমি তোমাদের সাথেই রয়েছি শুনছি ও দেখছি।”
***সূরা ত্বোয়াহাঃ আয়াত- ৪৬।

▓▓▓▒▒░░ আল্লাহর সিংহাসনের পরিধি ░░▒▒▓▓▓

আল্লাহর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। অথচ এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা বলে আল্লাহ সব যায়গায় বিরাজমান। মহান আল্লাহ আসমানের উপর তার সিংহাসনে সমাসীন বা উপবিষ্ট আছেন এবং তার সিংহাসনের পরিধি সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। তার সেই সিংহাসনটি কেমন তাহা কেউই বলতে পারবে না। তিনি তার সিংহাসনের উপর থেকে সব কিছু পরিচালনা করেন। কোন কিছুই তার দৃষ্টির অগোচরে নেই।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।"
***সূরা বাকারাহঃ আয়াতঃ ২:২৫৫।

▓▓▓▒▒░░ কূরসীর বর্ণনা ও পরিধি ░░▒▒▓▓▓

"ওয়াসিয়্যা 'কূরসী' ইউহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ।"
***সূরা বাকারাহঃ আয়াতাংশঃ ২:২৫৫।

আল্লাহর সিংহাসন বা কুরসী বিষয়ে হাদিসঃ
কূরসী শব্দটি সাধারনতঃ রাজত্ব বা নেতৃত্ব বা প্রশাসনিক ক্ষমতা বিষয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
একটি হাদিসে এসেছে যেঃ
ইবনে কাসীর (রহিঃ) - আ'বুযর (রাদিঃ)-এর বর্ণিত একটি হাদিসের সূত্রে উল্লেখ করেছেন যেঃ
তিনি রাসুল (সাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলেন যেঃ
কূরসী কি এবং তা কেমন?রাসুল (সাঃ) উক্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন যেঃ
"সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, সাত আসমান ও যমীনের উদাহরন হল এই যে, আল্লাহর 'সিংহাসন বা কুরসী'র সামনে এক বিশাল ময়দানে একটি আংটি ফেলে দেওয়া হল।"
সূত্রঃ 
তাফসীর জালালাইনঃ পৃঃ ৩৯ (আরবী); সূরা বাকারাহ'র তাফসীর এবং
তাফসীর জালালাইনঃ ১ম খন্ড; পৃঃ ৫৩৮; বাংলা; 'কূরসীর তাফসীর'।


ব্যক্তিগত মন্তব্যঃ
হাদিস যঈফ কিংবা সন্দেহযূক্ত হয় তাহলে আলেমরা সেই হাদিস সাধারনের পাঠের উদ্দেশ্যে প্রচার করেন কেন?
কারন সহীহ ব্যতীত যঈফ হাদিস আমলযোগ্য নয়।

আল্লাহর আরশের নীচে একটি সাগর রয়েছে এবং হাদিসটি এমনভাবেও বর্ণিত আছেঃ 

সপ্তমাকাশ ও আরশের মধ্যখানে রয়েছে একটি সাগর। যার তলদেশ ও উপরিভাগের দূরত্ব হল আকাশসমূহ ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। যমীন হতে সপ্তম আসমানের দূরত্ব ৭০০০ হাজার বছরের পথ(একটি দ্রুতগামী ঘোড়া বিরতিহীনভাবে চলমান অবস্থায় সর্বোচ্চ গতিতে)।
আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব(রাদিঃ) হতে বর্ণিত আছে যেঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
"তোমরা কি জান আসমান ও যমীনের মাঝে দূরত্ব কত?
আমরা বললামঃ
আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন।
তিনি বললেনঃ
আসমান ও যমীনের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে ৫০০ বছরের পথ। এইভাবে এক আসমান হতে অন্য আসমানের দূরত্ব হচ্ছে ৫০০ বছরের পথ। প্রতিটি আকাশের পূরুত্ব বা ঘনত্ব (পুরু ও মোটা) ৫০০ বছরের পথ।
সপ্তমাকাশ ও আরশের মধ্যখানে রয়েছে একটি সাগর। যার তলদেশ ও উপরিভাগের দূরত্ব হল আকাশ ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান।
আল্লাহতা'আলা তার উপর সমাসীন আছেন। আদম সন্তানের কোন কর্মকান্ডই তার অজানা নয়।"
***সুনান আবু দাউদঃ ৪৮২৩; মুসনাদে আহমদঃ ২০৬, ২০৭।
সুবহানআল্লাহ! সুবহানআল্লাহ!! সুবহানআল্লাহ!!!

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বিখ্যাত তাফসির কারক হাফেজ ইবনু কাসির (রহিঃ) উল্লেখ করেছেন (সংক্ষেপে)।
ইমাম আহমদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যেঃ
আব্বাস ইবনে মুত্তালিব (রাদিঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যেঃ
পৃথিবী থেকে আকাশের দূরত্ব ৫০০ বছরের দূরত্ব। এক আকাশ থেকে আরেক আকাশের দূরত্ব ৫০০ বছরের দূরত্ব। প্রতিটি আকাশ ৫০০ বছরের দূরত্ব পরিমাণ পুরু ...। (সংক্ষিপ্ত)।
ইমাম আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ ও ইমাম তিরমিজি (রহঃ) সিমাক (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ননা করেছেন।
ইমাম তিরমিজি (রহঃ) হাদিসটি হাসান বলে মন্তব্য করেছেন।
এই দূরত্বের হিসাব একটি দ্রুতগামী ঘোড়া না থেমে টানা ৫০০ বছর চলার কথা বিভিন্ন হাদিস সমূহে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব, হাদিস থেকে দেখা যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী থেকে প্রথম আকাশ ৫০০ বছরের দূরত্ব।
এবং প্রথম আকাশই ৫০০ বছরের দূরত্বে ও ৫০০ বছরের পুরুত্বে রয়েছে!
এভাবে একটি আসমান ১০০০ হাজার বছরের পথ এবং সাতটি আসমান ৭০০০ হাজার বছরের পথ এবং সাগর আরও ৭০০০ হাজার বছরের পথ।
মোট ১৪,০০০ হাজার বছরের পথ।
আল্লাহ আলেমূল গায়েব।
"আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।"

সূস্পস্ট বিষয় হলোঃ 
মহান আল্লাহ্ আসমানের উপর আরশে সমাসীন- এই বিষয়ে কুরআনের দলিল কি যথেস্ট নয়?
লেখাটি পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত করা হয়েছে।
লেখার শুরুতে ৭টি হাদিস ছাড়া বাকী সব কুরআন ও হাদিসের দলিল আমার দ্বারা সংযোজিত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নফস, রুহ, কলব......পরিচয়, ব্যাধি, প্রতিকার

চৌদ্দশ বছরের আমরা এক কাফেলা

হাদিস ছাড়া শুধু কুরআন অনুসরণ কতটুকু যৌক্তিক