মহান আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন এবং সর্বত্র বিরাজমান নন ░░▒▒▓▓▓
মহান আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন এবং সর্বত্র বিরাজমান নন ░░▒▒▓▓▓
▓▓▓▒▒░░ মহান আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন এবং সর্বত্র বিরাজমান নন ░░▒▒▓▓▓
▓▓▓▒▒░░ কূরসীর বর্ণনা ও পরিধি ░░▒▒▓▓▓
▓▓▓▒▒░░
সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি মানব ও জ্বিন জাতিকে কেবল তাঁরই একাত্বতা ঘোষণা ও ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। সালাম বর্ষিত হউক আমাদের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উপর যিনি তাঁর উম্মতের কাছে আল্লাহর একাত্বতা স্বীকার করা ও পালন করার বিস্তারিত জ্ঞান বর্ণনা করে গেছেন। আরও সালাম বর্ষিত হউক তাঁর পরিবার ও সাথীগণের উপর যারা তাঁর কাছ থেকে তাওহীদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
যারা বা অনেকে বলেন এবং বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের জন্য বলছি কুরআন বিশ্বাস করুন। কারন, মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি আরশের উপর সমাসীন। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
সমগ্র জাহানের প্রতিপালক ও সংরক্ষক মহান আল্লাহ্ তা’আলা সপ্তাকাশের উপর অবস্থিত সুমহান আরশের উপর সমুন্নত, তিনি সর্বস্থানে বিরাজমান নন। তাঁর ক্ষমতা অসীম ও সর্বব্যাপী। তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আরশে আ’যীম থেকেই সব কিছু সুচারুরূপে পরিচালিত করেন।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)'ও বলেছেনঃ আল্লাহ আসমানে আছেন। সাহাবী(রাদিঃ) এবং তাবেঈগণ সকলেই বলেছেন আল্লাহ আসমানে আছেন। তাছাড়া সকল ইমামই বলেছেন, আল্লাহ আসমানে আছেন। এরপরও যদি বলা হয়, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাহ’লে কি ঈমান থাকবে এবং আমল কবুল হবে? যারা অস্বীকার করবে তারা কাফের হয়ে যাবে।
আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত। তবে তিনি সৃষ্টি জীবের সব কিছু জানেন, দেখেন, পরিচালনা করেন ও তার প্রতিদান দান করেন।
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান- একথা ঠিক নয়, বরং পবিত্র কুরআন বলছে, আল্লাহ আরশে সমাসীন।
এ মর্মে বর্ণিত দলীলগুলো নিম্নরূপঃ-
(১) "আল্লাহ বলেন,‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।"
***সুরা আ‘রাফঃ আয়াত-৫৪।
(২) "নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।"
***সুরা ইউনুসঃ আয়াত-৩।
(৩) "আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হ’লেন।"
***সুরা রা‘দঃ আয়াত-২।
(৪) "দয়াময়(আল্লাহ) আরশে সমাসীন।"
***সুরা ত্বোয়া-হাঃ আয়াত-৫।
(৫) "তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ।"
***সুরা ফুরক্বানঃ আয়াত-৫৯।
(৬) "আল্লাহ তিনি, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।"
***সুরা সাজদাহঃ আয়াত-৪।
(৭) "তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন।"
***সুরা হাদীদঃ আয়াত-৪।
(৮) "যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।"
***সুরা আম্বিয়াঃ আয়াত-২২।
(৯) "তোমরা কি ভাবনামুক্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন, অতঃপর তা কাঁপতে থাকবে।"
***সুরা মূলকঃ আয়াত-১৬।
১০) "মহান আরশের অধিকারী।"
***সূরা আল বুরূজঃ আয়াত-১৫।
১১) "আল্লাহর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।"
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
***সুরা বাকারা: আয়াত- ২৫৫।
মহান আল্লাহ্ সর্বত্র বিরাজমান নন। তিনি আসমানে বা আকাশে আরশে আযীমে সমাসীন আছেন। এই বিষয়ে কুরআনের আরও কিছু আয়াতঃ-
১) "তিনিই আল্লাহ নভোমন্ডলে এবং ভূমন্ডলে। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় জানেন এবং তোমরা যা কর তাও অবগত।"
***সুরা আল-আনআমঃ আয়াত-৩।
২) "বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"
***সুরা নিসাঃ আয়াত-১৫৮।
৩) "ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।"
***সুরা মা'আরিজঃ আয়াত-৪।
৪) "তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়, তা করে।"
***সুরা নাহলঃ আয়াত-৫০।
৫) "না তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী।"
***সুরা মূলকঃ আয়াত-১৭।
৬) "বলুনঃ সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?"
***সুরা মুমিনূনঃ ৮৬।
৭) "অতএব শীর্ষ মহিমায় আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক।"
***সুরা মুমিনূনঃ আয়াত-১১৬।
৮) "যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী।"
***সুরা তাকভীর-২০।
৯) "আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি মহা আরশের মালিক।"
***সুরা নমলঃ আয়াত-২৬।
১০) "তারা যা বর্ণনা করে, তা থেকে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তা, আরশের পালনকর্তা পবিত্র।"
***সুরা যুখরুফঃ আয়াত-৮২।
১১) "বলুনঃ তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্যান্য উপাস্য থাকত; তবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌছার পথ অন্বেষন করত।"
***সুরা বনি ইসরাইলঃ আয়াত-৪২।
১২) "এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।"
***সুরা তাওবাহঃ আয়াত-১২৯।
১৩) "তিনিই সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তত্ত্বপূর্ণ বিষয়াদি নাযিল করেন, যাতে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে।"
***সুরা মুমিন/গাফিরঃ আয়াত-১৫।
১৪) "আপনি ফেরেশতাগণকে দেখবেন, তারা আরশের চার পাশ ঘিরে তাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ঘোষনা করছে। তাদের সবার মাঝে ন্যায় বিচার করা হবে। বলা হবে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর।"
***সুরা যুমারঃ আয়াত-৭৫।
১৫) "আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।"
***সুরা বাকারাহঃ আয়াত-২৫৫।
শেষ কথাঃ
মহান আল্লাহ্ কি বান্দার ‘সাথে’ রয়েছেন???
“তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন। আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্মের সম্যক দ্রষ্টা।”
***সুরা হাদীদঃ আয়াত- ৪।
অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আমাদের সাথে আছেন, স্ব-অস্তিত্বে নয়।
হযরত মুসা(আঃ) ও হারূন (আঃ)- কে আল্লাহ্ ফেরাউনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ
“আমি তোমাদের সাথেই রয়েছি শুনছি ও দেখছি।”
***সূরা ত্বোয়াহাঃ আয়াত- ৪৬।
__________আল্লাহর সিংহাসনের পরিধি_________
আল্লাহর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। অথচ এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা বলে আল্লাহ সব যায়গায় বিরাজমান। মহান আল্লাহ আসমানের উপর তার সিংহাসনে সমাসীন বা উপবিষ্ট আছেন এবং তার সিংহাসনের পরিধি সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। তার সেই সিংহাসনটি কেমন তাহা কেউই বলতে পারবে না। তিনি তার সিংহাসনের উপর থেকে সব কিছু পরিচালনা করেন। কোন কিছুই তার দৃষ্টির অগোচরে নেই।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।"
***সূরা বাকারাহঃ আয়াতঃ ২:২৫৫।
__________সিংহাসন বা কূরসীর বর্ণনা_________
"ওয়াসিয়্যা 'কূরসী' ইউহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ।"
***সূরা বাকারাহঃ আয়াতাংশঃ ২:২৫৫।
আল্লাহর সিংহাসন বা কুরসী বিষয়ে হাদিসঃ
কূরসী শব্দটি সাধারনতঃ রাজত্ব বা নেতৃত্ব বা প্রশাসনিক ক্ষমতা বিষয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
একটি হাদিসে এসেছে যেঃ
ইবনে কাসীর (রহিঃ) - আ'বুযর (রাদিঃ)-এর বর্ণিত একটি হাদিসের সূত্রে উল্লেখ করেছেন যেঃ
তিনি রাসুল (সাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলেন যেঃ
কূরসী কি এবং তা কেমন?রাসুল (সাঃ) উক্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন যেঃ
"সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, সাত আসমান ও যমীনের উদাহরন হল এই যে, আল্লাহর 'সিংহাসন বা কুরসী'র সামনে এক বিশাল ময়দানে একটি আংটি ফেলে দেওয়া হল।"
সূত্রঃ
তাফসীর জালালাইনঃ পৃঃ ৩৯ (আরবী); সূরা বাকারাহ'র তাফসীর এবং
তাফসীর জালালাইনঃ ১ম খন্ড; পৃঃ ৫৩৮; বাংলা; 'কূরসীর তাফসীর'।
▓▓▓▒▒░░ কূরসীর বর্ণনা ও পরিধি ░░▒▒▓▓▓
▓▓▓▒▒░░
সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি মানব ও জ্বিন জাতিকে কেবল তাঁরই একাত্বতা ঘোষণা ও ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। সালাম বর্ষিত হউক আমাদের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উপর যিনি তাঁর উম্মতের কাছে আল্লাহর একাত্বতা স্বীকার করা ও পালন করার বিস্তারিত জ্ঞান বর্ণনা করে গেছেন। আরও সালাম বর্ষিত হউক তাঁর পরিবার ও সাথীগণের উপর যারা তাঁর কাছ থেকে তাওহীদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
যারা বা অনেকে বলেন এবং বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের জন্য বলছি কুরআন বিশ্বাস করুন। কারন, মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি আরশের উপর সমাসীন। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
সমগ্র জাহানের প্রতিপালক ও সংরক্ষক মহান আল্লাহ্ তা’আলা সপ্তাকাশের উপর অবস্থিত সুমহান আরশের উপর সমুন্নত, তিনি সর্বস্থানে বিরাজমান নন। তাঁর ক্ষমতা অসীম ও সর্বব্যাপী। তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আরশে আ’যীম থেকেই সব কিছু সুচারুরূপে পরিচালিত করেন।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)'ও বলেছেনঃ আল্লাহ আসমানে আছেন। সাহাবী(রাদিঃ) এবং তাবেঈগণ সকলেই বলেছেন আল্লাহ আসমানে আছেন। তাছাড়া সকল ইমামই বলেছেন, আল্লাহ আসমানে আছেন। এরপরও যদি বলা হয়, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাহ’লে কি ঈমান থাকবে এবং আমল কবুল হবে? যারা অস্বীকার করবে তারা কাফের হয়ে যাবে।
আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত। তবে তিনি সৃষ্টি জীবের সব কিছু জানেন, দেখেন, পরিচালনা করেন ও তার প্রতিদান দান করেন।
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান- একথা ঠিক নয়, বরং পবিত্র কুরআন বলছে, আল্লাহ আরশে সমাসীন।
এ মর্মে বর্ণিত দলীলগুলো নিম্নরূপঃ-
(১) "আল্লাহ বলেন,‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।"
***সুরা আ‘রাফঃ আয়াত-৫৪।
(২) "নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।"
***সুরা ইউনুসঃ আয়াত-৩।
(৩) "আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হ’লেন।"
***সুরা রা‘দঃ আয়াত-২।
(৪) "দয়াময়(আল্লাহ) আরশে সমাসীন।"
***সুরা ত্বোয়া-হাঃ আয়াত-৫।
(৫) "তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ।"
***সুরা ফুরক্বানঃ আয়াত-৫৯।
(৬) "আল্লাহ তিনি, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।"
***সুরা সাজদাহঃ আয়াত-৪।
(৭) "তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন।"
***সুরা হাদীদঃ আয়াত-৪।
(৮) "যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।"
***সুরা আম্বিয়াঃ আয়াত-২২।
(৯) "তোমরা কি ভাবনামুক্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন, অতঃপর তা কাঁপতে থাকবে।"
***সুরা মূলকঃ আয়াত-১৬।
১০) "মহান আরশের অধিকারী।"
***সূরা আল বুরূজঃ আয়াত-১৫।
১১) "আল্লাহর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।"
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
***সুরা বাকারা: আয়াত- ২৫৫।
মহান আল্লাহ্ সর্বত্র বিরাজমান নন। তিনি আসমানে বা আকাশে আরশে আযীমে সমাসীন আছেন। এই বিষয়ে কুরআনের আরও কিছু আয়াতঃ-
১) "তিনিই আল্লাহ নভোমন্ডলে এবং ভূমন্ডলে। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় জানেন এবং তোমরা যা কর তাও অবগত।"
***সুরা আল-আনআমঃ আয়াত-৩।
২) "বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"
***সুরা নিসাঃ আয়াত-১৫৮।
৩) "ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।"
***সুরা মা'আরিজঃ আয়াত-৪।
৪) "তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়, তা করে।"
***সুরা নাহলঃ আয়াত-৫০।
৫) "না তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী।"
***সুরা মূলকঃ আয়াত-১৭।
৬) "বলুনঃ সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?"
***সুরা মুমিনূনঃ ৮৬।
৭) "অতএব শীর্ষ মহিমায় আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক।"
***সুরা মুমিনূনঃ আয়াত-১১৬।
৮) "যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী।"
***সুরা তাকভীর-২০।
৯) "আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি মহা আরশের মালিক।"
***সুরা নমলঃ আয়াত-২৬।
১০) "তারা যা বর্ণনা করে, তা থেকে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তা, আরশের পালনকর্তা পবিত্র।"
***সুরা যুখরুফঃ আয়াত-৮২।
১১) "বলুনঃ তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্যান্য উপাস্য থাকত; তবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌছার পথ অন্বেষন করত।"
***সুরা বনি ইসরাইলঃ আয়াত-৪২।
১২) "এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।"
***সুরা তাওবাহঃ আয়াত-১২৯।
১৩) "তিনিই সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তত্ত্বপূর্ণ বিষয়াদি নাযিল করেন, যাতে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে।"
***সুরা মুমিন/গাফিরঃ আয়াত-১৫।
১৪) "আপনি ফেরেশতাগণকে দেখবেন, তারা আরশের চার পাশ ঘিরে তাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ঘোষনা করছে। তাদের সবার মাঝে ন্যায় বিচার করা হবে। বলা হবে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর।"
***সুরা যুমারঃ আয়াত-৭৫।
১৫) "আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।"
***সুরা বাকারাহঃ আয়াত-২৫৫।
শেষ কথাঃ
মহান আল্লাহ্ কি বান্দার ‘সাথে’ রয়েছেন???
“তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন। আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্মের সম্যক দ্রষ্টা।”
***সুরা হাদীদঃ আয়াত- ৪।
অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আমাদের সাথে আছেন, স্ব-অস্তিত্বে নয়।
হযরত মুসা(আঃ) ও হারূন (আঃ)- কে আল্লাহ্ ফেরাউনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ
“আমি তোমাদের সাথেই রয়েছি শুনছি ও দেখছি।”
***সূরা ত্বোয়াহাঃ আয়াত- ৪৬।
__________আল্লাহর সিংহাসনের পরিধি_________
আল্লাহর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। অথচ এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা বলে আল্লাহ সব যায়গায় বিরাজমান। মহান আল্লাহ আসমানের উপর তার সিংহাসনে সমাসীন বা উপবিষ্ট আছেন এবং তার সিংহাসনের পরিধি সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। তার সেই সিংহাসনটি কেমন তাহা কেউই বলতে পারবে না। তিনি তার সিংহাসনের উপর থেকে সব কিছু পরিচালনা করেন। কোন কিছুই তার দৃষ্টির অগোচরে নেই।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।"
***সূরা বাকারাহঃ আয়াতঃ ২:২৫৫।
__________সিংহাসন বা কূরসীর বর্ণনা_________
"ওয়াসিয়্যা 'কূরসী' ইউহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ।"
***সূরা বাকারাহঃ আয়াতাংশঃ ২:২৫৫।
আল্লাহর সিংহাসন বা কুরসী বিষয়ে হাদিসঃ
কূরসী শব্দটি সাধারনতঃ রাজত্ব বা নেতৃত্ব বা প্রশাসনিক ক্ষমতা বিষয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
একটি হাদিসে এসেছে যেঃ
ইবনে কাসীর (রহিঃ) - আ'বুযর (রাদিঃ)-এর বর্ণিত একটি হাদিসের সূত্রে উল্লেখ করেছেন যেঃ
তিনি রাসুল (সাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলেন যেঃ
কূরসী কি এবং তা কেমন?রাসুল (সাঃ) উক্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন যেঃ
"সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, সাত আসমান ও যমীনের উদাহরন হল এই যে, আল্লাহর 'সিংহাসন বা কুরসী'র সামনে এক বিশাল ময়দানে একটি আংটি ফেলে দেওয়া হল।"
সূত্রঃ
তাফসীর জালালাইনঃ পৃঃ ৩৯ (আরবী); সূরা বাকারাহ'র তাফসীর এবং
তাফসীর জালালাইনঃ ১ম খন্ড; পৃঃ ৫৩৮; বাংলা; 'কূরসীর তাফসীর'।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন