ইসলামে শ্রমের গুরুত্ব


আবু সুুফিয়ান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য সকল প্রশংসা, যিনি মানুষের জন্য ভূ-পৃষ্ঠকে বিছানার মত করে বিছিয়ে দিয়েছেন, বসবাসের জন্য আবাসনের সকল উপকরণ দান করেছেন এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য শষ্য, ফলমূল, শাক-সবজি ও মাছ-গোস্ত সহ উত্তম জিবানোপকরণ দার করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
ولقد مكناكم في الأرض وجعلنا لكم فيها معايش قليلا ما تشكرون . ( الأعراف – ১০)
অর্থঃ আর নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে বসবাসের স্থান দিয়েছি এবং তাতে আমি তোমাদের জন্য জীবিকা নির্বাহের উপকরণ সৃষ্টি করেছি। তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।(আ‘রাফ ঃ ১০)


তিনি আরো বলেনঃ
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْ آَدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي البَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفَضِيْلاً. (بني إسرائيل-৭০)
অর্থ ঃ আমি আদম সন্তানদেরকে মর্যাদা দান করেছি, স্তলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের জন্য বাহন দিয়েছে; তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছে এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে আমি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। (বনী ইস্রাঈল-৭০)
সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মদ এর প্রতি, যিনি নিজ হাতে জীবিকা উপার্জনকারীকে আল্লাহর বন্ধু বলেছেন। (" الكاسب حببيب الله ") পাশাপাশি তিনি শ্রম বিনিয়োগের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক সকল সাহাবায়েকেরামগণের উপর যারা ধর্ম ও কর্মের মাঝে সমন্বয় ঘটিয়ে ইহকাল ও পরকালে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তারা দুনিয়া অর্জনের জন্য এমন ভাবে কাজ করেছেন যেমন মনে হত দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকবেন। আর আখেরাত অর্জনের জন্য এমনভাবে ইবাদত করেছেন মনে হত তাঁরা আগামীকালই মৃত্যু বরণ করবেন। কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর সকল অনুসারীদের প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।

জীবিকা উপার্জনের অন্যতম উপায় শ্রম
কবির ভাষায় -পরিশ্রমে ধন আনে, পূণ্যে আনে সুখ,
আলস্যে দারিদ্র আনে, পাপে আনে দুঃখ।
শ্রম বলতে বুঝায় কোন দ্রব্যের উৎপাদনে বা সেবায় ব্যক্তির একক বা যৌথ প্রয়াস। শ্রম দারিদ্র মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার ও সম্পদ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে এবং পৃথিবী আবাদ করার জন্য পাঠিয়েছেন। আর পৃথিবীকে আবাদ ও বসবাসযোগ্য করে তোলার অন্যতম উপাদান হলো শ্রম। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
(هود:৬১) هو أنشأكم من الأرض و استعمركم فيها.
অর্থঃ তিনি যমিন হতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তন্মধ্যে তোমাদের বসতি দান করেছেন। (হুদ - ৬১)
আকাশ হতে জীবিকা আসবে এই আশায় জীবিকা উপার্জন থেকে বিমূখ থাকা নিতান্তই বোকামী এবং ইসলামও এটাকে অনুমোদন করে না। বরং জীবিকা উপার্জনের জন্য চেষ্টা করা সকল নবীগণের সুন্নাত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
هو الذي جعل لكم الأرض ذلولا فامشوا في مناكبها وكلوا من رزقه . ( الملك ১৫)
অর্থঃ তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা ধরাপৃষ্ঠে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযিক থেকে আহার কর। (সূরা মুলক-১৫)
তিনি আরো বলেন,
فإذا قضيت الصلاة فانتشروا في الأرض وابتغوا من فضل الله. ( الجمعة– ১৫)
অর্থঃ সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযিক) সন্ধান কর।(জুমুআÑ ১৫)
রাসূল সা. কর্মবিমূখতা কখনো পছন্দ করেন নি। বরং তিনি কাজের (শ্রমের) প্রতি উৎসাহ দান করেছেন।
তিনি বলেনঃ
ما أكل أحد طعاما قط خيرا من أن يأكل من عمل يده وأن نبي الله داود عليه السلام كان يأكل من عمل يده. অর্থঃ মানুষের খাদ্যের মধ্যে সে খাদ্যই সব চেয়ে উত্তম, যে খাদ্য স্বহস্তে উপার্জিত সম্পদ দ্বারা হয়। আর প্রিয় নবী দাউদ (আ) স্বহস্তে উপার্জিত সম্পদ দ্বারা খাদ্য গ্রহণ করতেন। (বুখারী)
তিনি কৃষি কাজ ও বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে বলেছেনঃ
ما من مسلم يغرس غرسا إلا كان ما أكل منه له صدقة، وما سرق منه له صدقة ولا يرزؤه أحد إلا كان له صدقة. رواه مسلم، وفي رواية له فلا يغرس المسلم غرسا فيأكل منه إنسان ولا دابة ولا طير إلا كان له صدقة إلى يوم القيامة. (مسلم )
অর্থঃ যে কোন মুসলিম ব্যক্তিই কোন গাছ লাগালে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয়, সেটা তার জন্য সাদকা হবে। আর তা থেকে কিছু চুরি হলে এবং কেউ তার কোন ক্ষতি করলে সেটাও তার জন্য সাদকা হবে। ইমাম মুসলিম হাদীসটি রেওয়ায়াত করেছেন। অন্য বর্ণনায় আছে, মুসলিম কোন গাছ লাগালে; তা হতে মানুষ, পশু-পাখি ও অন্যান্য প্রাণী যা কিছু খায়। তা কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য সাদকা হিসেবে জারি থাকে। (মুসলিম)

তিনি আরো বলেনঃ
রিযিকের সন্ধানে যে ব্যক্তি রাত্রে নিষ্প্রভ ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, সে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়। (জামে সগীর)
এ ছাড়াও রাসূল স্বীয় উম্মতকে ভিক্ষাবৃত্তি পরিহার করে শ্রম বিনিয়োগের মাধ্যমে হালাল ও বৈধ পন্থায় উপার্জন করতে উৎসাহিত করেছেন। যদিও তা বাহ্যিকভাবে ছোট কাজ বলে মনে হয়।
যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে, আনাস (রা) বলেনঃ একদা এক আনসারী সাহাবী নবী করীম এর নিকটে এসে কিছু চাইলে তিনি তাকে বললেনঃ তোমার ঘরে কোন কিছু আছে কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, একটি চাদর আছে। যার একাংশ আমি পরিধান করি এবং অপর অংশ আমি শয্যারূপে ব্যবহার করি। তাছাড়া পানি পান করার একটি পাত্রও আছে। রাসূল বললেনঃ তাহলে ঐ দু’টি জিনিসই আমার কাছে নিয়ে এসো। সাহাবী তা নিয়ে এলে, নবী সা. তা হাতে নিয়ে উপস্থিত লোকদের মাঝে নিলাম ডাকলেন। তিনি বললেনঃ কেউ এগুলো খরিদ করার আছে কি? এক সাহাবী বললেনঃ আমি এক দিরহামে নিতে রাজি আছি। রাসূল (সা) বললেনঃ এক দিরহামের চেয়ে অধিক দিতে কে রাজি আছে? তিনি এ কথাটি দু’ তিনবার বললেনঃ তখন অন্য এক সাহাবী বললেনঃ আমি দু’ দিরহামের বিনিময়ে কিনতে রাজি আছি। রাসূল তার কাছে বস্তু দু’টি দু’ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে আনসার সাহাবীকে দু’ দিরহাম দিয়ে বললেনঃ এক দিরহাম দিয়ে তোমার পরিবারের জন্য খাদ্য ক্রয় কর এবং অপর দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার খরিদ করে আমার কাছে নিয়ে এসো।

সাহাবী কুঠার ক্রয় করে রাসূল এর কাছে নিয়ে এলে তিনি নিজ হাতে তার হাতল লাগিয়ে দিয়ে বললেনঃ যাও, জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে তা বাজারে বিক্রি করতে থাক। পনের দিনের ভিতর আমার কাছে আসার প্রয়োজন নেই। রাসূল এর নির্দেশ অনুযায়ী সাহাবী জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে লাগলেন। এভাবে দশ দিরহাম উপার্জন করে তা নিয়ে রাসূল এর কাছে উপস্থিত হলেন। রাসূল (সা) এর কাছে তা পেশ করলে তিনি তা থেকে কিছু দিয়ে পরিবার ও নিজের জন্য কাপড় ক্রয় করার ও বাকী দিরহাম দিয়ে খাদ্য দ্রব্য ক্রয়ের নির্দেশ দিয়ে বললেনঃ অপরের নিকট ভিক্ষার কারণে কিয়ামতের দিবসে চেহারায় দাগ নিয়ে উপস্থিত হওয়ার চেয়ে শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করা অনেক উত্তম।বুখারী ও মুসলিম)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল, রাসূলুল্লাহ সা. উক্ত সাহাবীকে অপরের কাছে হাত না পেতে নিজে পরিশ্রম করে উপার্জন করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি তিনি শ্রম বিনিয়োগের উপযুক্ত পদ্ধতিও বাতলে দিয়েছেন। এমনিভাবে প্রিয় নবী মুহাম্মদ সমাজের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন ও বেকারত্ব দূরীকরণে বাস্তব সম্মত ভুমিকা রেখেছেন।

কুরআন এবং হাদীসের এ সকল দলীলসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে সন্ন্যাসবাদ তথা দুনিয়া বিমুখতা নেই। বরং পার্থিব কাজও যখন বিশুদ্ধ নিয়তে ইসলামী বিধি-বিধান লংঘন না করে সম্পাদন করা হয়, তখন তা ইবাদতে পরিগণিত হয়। মানুষ যখন নিজের স্বাস্থ্য, পরিবারের লালন-পালন, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং সৎ কাজে সহায়তা দানের জন্য রোজগার করে ও ব্যয় করে। তখন তা জেহাদ ফি সাবিলিল্লাহ-এর একটি অংশ হিসেবে ধর্তব্য হয়।

তাই তো আল্লাহ তা‘আলা দু‘টি বিষয়কে পাশাপাশি উল্যেখ করে বলেছেনঃ
وآخرون يضربون في الأرض يبتغون من فضل الله وآخرون يقاتلون في سبيل الله. (المزمل-২০)
অর্থঃ কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের (রিযিক) সন্ধানে দেশে-বিদেশে ভ্রমন করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত হবে। (সূরা মুজ্জাম্মেল- ২০)
ইসলাম বিদেশে শ্রম বিক্রির ব্যাপারে নীরব নয়। ইসলাম আমাদের নিকট সুস্পষ্ট করে দেয় যে, আল্লাহর যমীন বিস্তৃত। রিযিক বিশেষ অঞ্চল ও জনপদের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। সুতরাং রিযিকের জন্য বিদেশ ভ্রমন ইসলামেও স্বীকৃত।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
ومن يهاجر في سبيل الله يجد في الأرض مراغما كثيرا وّسعة . (النساء -১০০)
অর্থঃ যে আল্লাহর পথে দেশ ত্যাগ করবে সে পৃথিবীতে অনেক স্থান ও সচ্ছলতা পাবে। (নিসা-১০০)
শ্রমের ব্যাপারে আমরা যদি নবী রাসূলগণের জীবনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই প্রত্যেকেই শ্রমজীবী ছিলেন। স্বয়ং আমাদের নবী মুহাম্মদ ও একজন শ্রমজীবী ছিলেন। অনেকদিন পর্যন্ত তিনি মুদারাবার ভিত্তিতে খাদীজা (রা) এর ব্যবসায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন। দাউদ (আ) নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
দাউদ (আ) ছিলেন লৌহ বর্ম প্রস্তুতকারক, আদম (আ) ছিলেন কৃষক, নূহ (আ) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি, ইদ্রীস (আ) ছিলেন দর্জি এবং মূসা (আ) ছিলেন রাখাল। এমনিভাবে প্রত্যেক নবী শ্রমজীবী ছিলেন। কেউ কর্মবিমুখ ছিলেন না। সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পর্যালোচনা করলেও দেখা যাবে, তারাও শ্রমের দিক থেকে পিছিয়ে নেই। ওমর (রা) যিনি অর্ধ পৃথিবীর বাদশাহ ছিলেন, তিনিও এক সময় মক্কা থেকে একশ মাইল দূরে জানজান নামক ময়দানে উট চড়াতেন। আলী (রা) ছিলেন মুসলিম খলিফা, তিনি মদীনা শহরে এক একটি খেজুরের বিনিময়ে এক এক বালতি পানি তুলে দিতেন। আবু হুরায়রাও (রা) শ্রমজীবী ছিলেন।
এমনিভাবে প্রত্যেক সাহাবীর জীবনী খুঁজলেই দেখা যাবে তারা শ্রমজীবী ছিলেন এবং শ্রমের মাধ্যমেই আল্লাহর ওপর ভরসা করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তাই প্রত্যেকের জন্য শ্রমের মাধ্যমে রিযিক উপার্জনে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
শ্রমের মাধ্যমে হালাল রিযিক উপার্জনকে হীন মনে না করা
হালাল রিযিক উপার্জন করতে গিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। যা মানুষের হালাল রিযিক উপার্জনের উপায়। সে হালাল রিযিক উপার্জনের কাজটি যে মানেরই হোক না কেন, তা কোনভাবেই ছোট বা হীন মনে করা যাবে না। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল কাজে ও হালাল পথে শ্রম বিনিয়োগ বিন্দুমাত্র লজ্জার কারণ নয়।
আমাদের দেশে অনেকেই বেকার সমস্যায় জর্জরিত। পরিবারের বোঝা হয়ে আছে। বিভিন্ন ধরণের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছে বেকার থাকার কারণে। সাধারণ মানের কোন চাকরী বা ব্যবসা করতে লজ্জা বোধ করে থাকে। অথচ রাসূলুল্লাহ সকল নবী-রাসূলগণের সর্দার হওয়ার পরও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্যের কাজ করে দিয়েছেন। অধিকাংশ নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম শ্রমজীবী ছিলেন। যা আমরা উপরের আলোচনা থেকে জানতে পেরেছি। সুতরাং হালাল রিযিক উপার্জনের জন্য আমরা যে পেশাই অবলম্বন করি না কেন, তা ছোট মনে না করা উচিত। কেননা শ্রম যদি নীচু মানের বিষয় হতো, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা নবীগণের (আ) মাধ্যমে এ জাতীয় কাজ করাতেন না।

হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত
হালাল রিযিক উপার্জন করা কুরআন, হাদীস ও সকল ওলামায়ে কেরামের মতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফরয। হালাল রিযিক গ্রহণ করা না হলে কোন প্রকারের ইবাদতই কবুল করা হয় না।
হাদীসে বর্ণিত আছে,
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله طيّب لا يقبل إلا طيّبا وإن الله أمر المؤمنين بما أمر به المرسلين فقال يا أيها الرسل كلوا من الطيّبات واعملوا صالحا وقال تعالى: يا أيها الذين آمنوا كلوا من الطيّبات ما رزقناكم ثمّ ذكر الرجل يطيل السفر أشعث وأغبر يمد يديه إلى السماء يا رب ومطعمه حرام ومشربه حرام و ملبسه حرام وغذي بالحرام فأنى يستجاب لذلك. (مسلم)
অর্থঃ আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেনঃ আল্লাহ স্বয়ং পবিত্র এবং তিনি কেবল মাত্র পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করে থাকেন। আর আল্লাহ মু‘মিনদেরকে সে নির্দেশই দিয়েছেন, যা তিনি নবীগণকে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন “হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে খাদ্য গ্রহণ কর এবং নেক আমল কর। (অনুরূপভাবে) তিনি মু‘মিনদেরকে বলেছেন “হে ঈমানদারগণ! আমার দেয়া পবিত্র খাদ্য হতে আহার গ্রহণ কর।” অতঃপর রাসূল এমন এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ তুললেন, যিনি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ধূলি-মলিন অবস্থায় (কোন পবিত্র স্থানে হাজির হয়ে আকাশের দিকে দু‘হাত তুলে দোয়া করে আর) বলে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! অথচ তার খাদ্য, পানীয় ও লেবাস সব কিছু হারাম তথা অবৈধ উপায়ে উপার্জিত। এমন কি সে এ পর্যন্ত হারাম খাদ্য দ্বারাই জীবন ধারণ করেছেন। সুতরাং তার দোয়া কি করে কবুল হবে!?
উপরোক্ত হাদীসে হালাল উপায়ে উপার্জিত পবিত্র ও শরীয়ত অনুমোদিত খাদ্য গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সুতরাং হারাম উপায়ে উপার্জিত হালাল খাবার এবং হালাল উপায়ে অর্জিত হারাম খাদ্য এতদুভয়ের কোনটিই কোন মুসলিম গ্রহণ করতে পারে না।
হারাম উপায়ে উপার্জিত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে এবং হারাম টাকার কাপড় পরিধান করে যে কোন পবিত্র স্থানে গিয়ে যত কাকুতি মিনতি করেই দোয়া করা হোক না কেন, আল্লাহ তা কবুল করবেন না। এমনিভাবে ইসলাম তার অনুসারীদেরকে অর্থ উপার্জনের যাবতীয় অন্যায় ও গর্হিত পন্থা পরিত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। যেমন চুরি-ডাকাতি, ধোকা-প্রতারণা, সুদ-ঘুষ ও জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে উপার্জন। অনুরূপভাবে ব্যয় নির্বাহের ব্যাপারেও মানুষকে অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। বরং সেখানেও হালাল-হারামের বাধ্য বাধকতা রাখা হয়েছে।
হাদীসে বর্ণিত আছে,
و عن أبي بردة الأسلمي رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا تزول قدما عبد حتى يسأل عن خمس عمره فيما أفناه و عن علمه فيما فعل و عن ماله من أين اكتسبه و فيما أنفقه و عن جسمه فيما أبلاه. (ترمذي)
অর্থঃ আবু বুরদাহ আসলামী (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের দিন পাঁচটি বিষয়ে হিসাব না দিয়ে কোন ব্যক্তি এক কদমও সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। ১. জীবন কিভাবে কাটিয়েছে, ২. অর্জিত জ্ঞান কী কাজে লাগিয়েছে, ৩. সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে, ৪. উপার্জিত সম্পদ কিভাবে ব্যয় করেছে ও ৫. শরীর কী কাজে ক্ষয় করেছে। (তিরমিযী)
বর্ণিত হাদীসে আল্লাহর নবী সা. মুসলমানদেরকে তাদের আয়-ব্যয় নির্বাহের ব্যাপারে সাবধান করতে গিয়ে বলেছেন যে, কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দাকে যে পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, তার মধ্যে একটি হল, তার সম্পদ। অর্থাৎ সে তার সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে এবং কোন পথে ব্যয় করেছে।
শ্রমিক ও মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
শ্রমিক ও মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়টি যথাযথভাবে অনুসরণ করা খুবই জরুরী। কেননা উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্যের শিথিলতাই উন্নয়নের জন্য বড় প্রতিবন্ধক। শ্রমিক ও মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য স্পষ্ট। নিম্নে তা তুলে ধরা হল।

মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ
মালিক-শ্রমিক একে অন্যের মুখাপেক্ষী। যেমনিভাবে মালিক শ্রমিক ব্যতীত নিজ কাজ সম্পাদন করতে পারে না। তেমনিভাবে শ্রমিকরাও শ্রম বিনিয়োগ ব্যতীত জীবিকা উর্পাজন করতে পারে না। ফলে একে অপরের সহযোগী। তাই শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হবে, সে সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেনঃ
هم إخوانكم جعلهم الله تحت أيديكم فمن جعل الله أخاه تحت يديه فليطعمه مما يأكل و يلبس مما يلبس و لا يكلفه من العمل ما يغلبه فإن كلفه ما يغلبه فليعنه عليه . (مسلم)
অর্থঃ তারা (অধিনস্ত ব্যক্তিবর্গ) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তোমাদের অধিনস্ত করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কারো (দ্বীনি) ভাইকে তার অধিনস্ত করে দিলে, সে যা খাবে তাকে তাই খাওয়াবে। সে যা পরিধান করবে তাকে তাই পরিধান করতে দিবে। আর কষ্টকর ও সাধ্যাতীত কাজে তাকে বাধ্য করবে না। যদি করতেই হয় তবে অবশ্যই সে কাজে তাকে সাহায্য করবে। (মুসলিম)
উপরোক্ত হাদীসটি বিবেচনায় রেখে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মালিক ও শ্রমিক মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে পরস্পরে ভাই ভাই।

শ্রমিক নির্বাচনে মালিকের করণীয়ঃ
১. কর্মক্ষম ও সুদক্ষ, শক্তিমান, আমানতদার ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে কর্মে নিয়োগ দেয়া।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إن خير من استأجرت القوي الأمين . ( القصص- ২৬)
অর্থঃ তোমার মজদূর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী ও আমানতদার। (কাসাস-২৬)
২. সময় ও মজুরী নির্ধারণ করে শ্রমিক নিয়োগ করা।
এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
أن رسول الله صلى الله عليه و سلم نهى عن استئجار الأجير حتى يبين له أجره. (ترمذي وأبو داود)
অর্থঃ রাসূল সা. মজুরী নির্ধারণ না করে শ্রমিককে কাজে নিয়োগ দিতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী,আবু দাউদ)
ইসলামী অর্থনীতিতে মজুরী নির্ধারণের সূত্রঃ প্রত্যেক শ্রমিককে কমপক্ষে এমন মজুরী দেয়া যেন সে এর দ্বারা তার স্বাভাবিক চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণ করতে পারে।
৩. শ্রমিক কী ধরণের কাজ করবে তা আগেই আলোচনা করা।
৪. কাজ শেষ করা মাত্রই তার পারিশ্রমিক প্রদান করা। রাসূল বলেনঃ
أعطوا الأجرة قبل أن يجف عرقه. (بيهقي)
অর্থঃ শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও। (বায়হাকী)
৫. উপযুক্ত কারণ ছাড়া শ্রমিকদের চাকরীর অধিকারে কোনরূপ অন্যায় হস্তক্ষেপ না করা।

শ্রমিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ
১. চুক্তি মোতাবেক কাজ করা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
و أوفوا بالعهد إن العهد كان مسؤولا. (بني إسرائيل: ৩৪)
অর্থঃ তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন কর। কেননা প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। (ইসরাঃ ৩৪)
২. বিশ্বস্ততা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
إن خير من استأجرت القوي الأمين . ( القصص- ২৬)
অর্থঃ তোমার মজদূর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী ও আমানতদার। (কাসাস-২৬)
৩. যথাযথভাবে কাজ করা।
এ প্রসঙ্গে রাসূল বলেনঃ তিন প্রকার লোকদের দ্বিগুণ সাওয়াব দেয়া হবে। তাদের অন্যতম হল, ঐ ব্যক্তি যে মালিকের হক আদায় করে এবং সাথে সাথে আল্লাহর হকও আদায় করে। (বুখারী ও মুসলিম)
শ্রমিকদের প্রতি নির্যাতনের চিত্র
আজ কাল পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে শ্রমিকদের উপর বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের চিত্র। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, বোনাস ইত্যাদি প্রদানের ক্ষেত্রে নানা ধরনের ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে বেতন কর্তন ও চাকুরীর নীতিমালা অনুসরণ না করার প্রবণতা চোখে পড়ার মত। যা দরিদ্র অসহায় শ্রমিক শ্রেণীকে তিলে তিলে ধ্বংস করার নামান্তর। অথচ মে দিবস তথা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস বেশ জাঁকজমক ভাবেই পালন করা হয়। কিন্তু যাদের উপলক্ষ করে এ দিবস পালিত হয় তারা বিভিন্নভাবে শোষিত ও নির্যাতিত।
১মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস
১মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস পালনের প্রেক্ষাপট, শ্রমিকদের উপর মালিকদের শোষণের নির্মম ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যা ১৮৩০ খৃষ্টাব্দে লিয়নসে রেশম শ্রমিকদের উপর চালানো হয়েছিল। দিনে ১৮ ঘন্টা কাজ করেও একজন শ্রমিক সেখানে মাত্র ১৮ ‘সু’ লাভ করত। যা আমাদের মুদ্রায় মাত্র ১৩ পয়সার সমান। এমনি ভাবে ১৮৭১ খৃষ্টাব্দের দিকে রাশিয়ায় শ্রমিকদের উপর অত্যাচার চরমে উঠে। মজদূরদেরকে নুন্যতম সাড়ে বার ঘন্টা ডিউটি করতে হত। শ্রমিকদেরকে অত্যন্ত সামান্য মজুরী দেয়া হত। অন্ধকার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হত। শিল্পপতিরা বাজার দরকে নিজেদের স্বার্থানুযায়ী রাখতে গিয়ে যেমনিভাবে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে ঠিক তেমনিভাবে অল্প মুজুরীতে শ্রমিক লাভের আশায় তারা সারা দেশে সুপরিকল্পিত ভাবে বেকারত্ব সৃষ্টি করে রাখত।
এ অবস্থা চরমে উঠলে আমেরিকার শিকাগোর হে মার্কেটের শ্রমিকরা তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। শ্রমিকদের দাবী ছিল দৈনিক আঠার/সাড়ে বার ঘন্টার পরিবর্তে আট ঘন্টা কার্যকাল নির্ধারণ করতে হবে। মালিকরা তাদের দাবী মেনে নিতে চায়নি। এতে শ্রমিকরা আরো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেয়। মালিকরা ধর্মঘটী শ্রমিকদের উপর ভাড়াটে বাহিনী লেলিয়ে দেয়। তারা শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং শ্রমিকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। হতাহত হয় বহু শ্রমিক। এতে শ্রমিকদের আন্দোলন আরো তীব্রতর হয়ে উঠে। ১৮৮৬ সালে হে মার্কেটের শ্রমিকদের সাথে শিকাগোর অন্যান্য শ্রমিকরাও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৮৮৬ সালের ১মে আন্দোলনরত শ্রমিকদের মিছিলে গুলি চালিয়ে কয়েকজন নেতাসহ অনেককে হত্যা ও আহত এ সকল বাধ্য হয়ে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের এই ন্যায্য দাবীর কাছে নতি স্বীকার করে। অবশেষে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মাঝে দৈনিক আট ঘন্টা কার্যকাল নির্ধারণের চুক্তি হয়। শ্রমিকদের এই আত্মত্যাগের দিনটিকে স্বরণ করে প্রতি বছর ১মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে যা জানা গেল
১. শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ক হতে হবে ভাইয়ের মত। শ্রমিকদের-মালিক কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব ভাই হিসেবে আদায় করা।
২. মালিক শ্রমিকের প্রতি সহানুভুতিশীল, দয়াবান ও দরদী হওয়া।
৩. সময় ও কাজ উভয় দিক দিয়েই সাধ্যাতিত কোন দায়িত্ব শ্রমিকের উপর চাপিয়ে না দেয়া।
৪. শ্রমিকের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা।
৫. মালিক বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শ্রমিককে শোষণ-নির্যাতন না করা।
৬. সাধারণ কারণে শ্রমিক ছাঁটাই করে তাদেরকে অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে না দেয়া।
৭. শ্রমিকের চুক্তি মোতাবেক মালিকের দেয়া জিম্মাদারী অত্যন্ত আমানতদারী ও বিশ্বস্ততার সাথে সম্পাদন করা।
৮. ভৃত্য-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেয়া।
৯. শ্রমিক সম্প্রদায় ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা।
১০. গৃহপরিচারিকাদের সাথে সদাচরণ করা।
১১. মে দিবস পালন যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা না হয়। বরং মালিক ও শ্রমিকের অধিকার যাতে সুনিশ্চিত হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা।
১২. দেশ ও জাতির উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটে এমন কাজ থেকে মালিক-শ্রমিক সকলের বিরত থাকা।
১৩. হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে কোন পেশাকে ছোট করে না দেখা।
১৪. হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত।
১৫. হারাম উপার্জন থেকে বিরত থাকা। কেননা কিয়ামতের দিন সম্পদ কিভাবে উপার্জন করা হয়েছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।
১৬. হালাল পথে উপার্জিত সম্পদ হারাম পথে ব্যয় না করা।
১৭. অপরের নিকট ভিক্ষা করার চেয়ে খেটে খাওয়া অনেক উত্তম।
১৮. অধিনস্তদের সাথে ভাল ব্যবহার করা।
১৯. অধিনস্তদের উপরও অত্যাচার না করা।
২০. সকল দায়িত্ব পালনে আমানতদারী ও বিস্ততার পরিচয় দেয়া, ইত্যাদি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নফস, রুহ, কলব......পরিচয়, ব্যাধি, প্রতিকার

চৌদ্দশ বছরের আমরা এক কাফেলা

হাদিস ছাড়া শুধু কুরআন অনুসরণ কতটুকু যৌক্তিক