প্রাচীন মিশরে প্লেগ - আল্লাহর গজব না প্রাকৃতিক দুর্যোগ ?




মুসা(আঃ) তার অনুসারীদের (ইহুদী দাস) নিয়ে মিশর ত্যাগ করে অন্যত্র খোদার ইবাদত করার ইচ্ছা জানালে ফারাউ বাদশাহ তা মানতে অস্বীকার করে। ফলাফল- আল্লাহর গজব। ইহুদী এবং খৃষ্টান মতানুসারে প্রাচীন মিশরে মুসা(আঃ) কে অবরুদ্ধ করে রাখলে একের পর এক ১০ টা গজব অবতীর্ন হয় যাকে Plagues of Egypt বলা হয়। এখানে প্লেগ কোন রোগের নাম না,গজবের নাম।

১। নীল নদের পানি রক্তে রুপান্তর হয় ,সকল জলজীব ধ্বংস হয়ে যায়
২। ব্যাঙ এর লোকালয়ে উপদ্রব

৩। উকুনের অসহনীয় অত্যাচার
৪। মাছির আক্রমন
৫। পশুদের রোগ
৬। চর্ম রোগ
৭। শীলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত
৮। লোকাস্টের আক্রমন
৯। অন্ধকার
১০।প্রথম সন্তানের মৃত্যু

অন্যদিকে কোরানের সুরা আল আরাফে বলা আছে-

১৩৩ নং আয়াত- সুতরাং আমি তাদের উপর প্রেরণ করলাম ব্যাপক মৃত্যু [প্লেগ], পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাং এবং রক্ত। [এগুলি] প্রকাশ্য স্পষ্ট নিদর্শন। কিন্তু তারা ছিলো মাত্রাধিক দাম্ভিক - পাপে আসক্ত এক সম্প্রদায় ।

১৬২ নং আয়াত- কিন্তু তাদের মধ্যে যারা সীমালংঘনকারী তাদের যা বলা হয়েছিলো তার পরিবর্তে তারা অন্য কথা বললো। সুতরাং আমি আকাশ থেকে প্লেগ [শাস্তি] পাঠালাম, কারণ তারা বারে বারে সীমালংঘন করেছিলো

ব্যাখ্যা
'Tufan'এই আরবী শব্দটির অনেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন প্লাবন, ইংরেজীতে অনুবাদ করা হয়েছে "Wholesale Death"। 'তুফান' - এই আরবী শব্দটির অর্থ : বহুবিধ দুর্যোগ যাতে ব্যাপক মৃত্যু ও ধ্বংস ঘটে। এই দুর্যোগ প্লাবন হতে পারে, সামুদ্রিক টাইফুন হতে পারে, মানুষ ও পশুর মধ্যে মড়ক ও মহামারী হতে পারে ইত্যাদি যাকিছু ব্যাপক ক্ষতি ও ধ্বংস সাধন করতে পারে।
সূরা [১৭:১০১] আয়াতে নয়টি মোজেজা যা আল্লাহ্‌ মুসাকে দান করেছিলেন তার উল্লেখ আছে। এগুলি হলো : (১) লাঠি [৭ : ১০৭] (২) জ্যোতির্ময় হাত [৭ : ১০৮] (৩) খরা এবং পানির স্বল্পতা [৭ : ১৩০] (৪) দূর্ভিক্ষ [৭ : ১৩০] এবং আর পাঁচটি মোজেজার উল্লেখ এখানে আছে। এগুলি হলো (৫) মানুষ ও পশুর মধ্যে মড়ক ও মহামারী (৬) পঙ্গপাল (৭) উকুন (৮) ব্যাং (৯) পানি রক্তে পরিবর্তিত হওয়া। হযরত মুসার (আঃ) দাবী ছিল দুটো।

(১) আল্লাহ্‌র রাস্তায় আসা ও ইসরাঈলীদের উপরে অত্যাচার বন্ধ করা এবং (২) ইসরাঈলীদের মিশরের দাসত্ব মুক্ত করে মিশরের বাইরে চলে যেতে দেওয়া। মুসার (আঃ) দাবী ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের কাছে এতই অযৌক্তিক মনে হয়েছিল যে তারা ব্যাপারটিকে হাস্যস্পদ মনে করেছিল। এর ফলে এক একবার এক এক গজব ফেরাউন সম্প্রদায়ের উপরে পতিত হয়। দূর্ভিক্ষ, খরা, পঙ্গপাল, প্লাবন, মহামারী ইত্যাদি বিভিন্ন আযাব তাদের উপরে পতিত হয়। এই আয়াতে [৭:১৩৩] প্লেগের উল্লেখ আছে। প্লেগ যখন মহামারী আকারে তাদের গ্রাস করলো, তখন তারা মুসার (আঃ) কাছে প্রার্থনা করলো এই আযাব থেকে তাদের রক্ষা করতে, বিনিময়ে তারা নিজেদের সংশোধন করার প্রতিজ্ঞা করে। মুসার প্রার্থনায় যখনই গজব থেকে রক্ষা পেত, তখনই তারা স্বমূর্তি ধারণ করতো। তারা কখনই তাদের প্রতিজ্ঞা রাখতো না। পাপীদের মানসিকতা সব সময়ে সব যুগে একই রকম থাকে। এটা সর্বকালের জন্য সত্য। এই আয়াত থেকে পাপীদের মানসিকতা অনুধাবন করা যায়।ফেরাউন সম্প্রদায় আল্লাহ্‌র সাথে কৃত অঙ্গীকার বারে বারে ভঙ্গ করে, ফলে বারে বারে তারা আল্লাহ্‌র গজবে পতিত হয়। শেষ পর্যন্ত ফেরাউন ইসরাঈলীদের মিশর ত্যাগের অনুমতি দান করে।


এইবার দেখি বৈজ্ঞানিক ভাবে কিভাবে ব্যাখ্যায়িত করা যায়-

১। পানি যা রক্তে রুপান্তর হয় ,সকল জলজীব ধ্বংস হয়ে যায়


১৬০০ খৃষ্টপূর্বে নীলনদের উৎপত্তি স্থলে আগ্নেয় গিরীর অগ্নুৎপাতের ছাই বা লাভা দ্বারা গঠিত লাল পাললিক ভুমিতে অতিবর্ষনের কারনে ভু অবক্ষয়ের দরুন পানি লাল হয়ে দুষিত গিয়েছিল(লোহা জাতীয়) , স্বাভাবিকভাবেই দুষিত পানিতে জলজ প্রাণী বাচবে না। বর্ত্মানে নীলের পানিতে আগ্নেয় ছাইয়ের প্রমান পাওয়া গেছে। অন্যভাবে লাল বিষাক্ত শৈবালের অস্বাভাবিক বিস্তৃতিতেও পানি লাল হয়। এইটা দেখলে ধারনা পাওয়া যাবে।

২। ব্যাঙ এর লোকালয়ে উপদ্রব


নদী যদি দুষিত হয় ব্যাঙ খাদ্যের জন্য লোকালয়েই আসবে।

৩। উকুনের অসহনীয় অত্যাচার
৪। মাছির আক্রমন
৫। পশুদের রোগ
৬। চর্ম রোগ
৮। লোকাস্টের আক্রমন


প্রকৃতপক্ষে সব একই সুত্রে গাথা। যখন খাদ্য শৃংখলের কোন ধাপ পুরা বন্ধ থাকে তাহলে এইরূপ ঘটনা একটা চেইন রিয়েকশনের মতই ঘটবে। আলোচ্য ক্ষেত্রে উকুন কে মাথার উকুন না ভেবে মাইট হিসেবে ভাবুন। সর্বস্তরে মাইটের আক্রমন রয়েছ, এরা ফসলহানী,চর্মরোগ, এমনকি মারত্মক ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার বাহক।



আমরা জানি ব্যাঙ পোকামাকড় খায়। যখন পানি দুষিত এবং ব্যাঙ সেখান থেকে বিতারিত তখন পোকামাকড়ের ঘনত্ব অবশ্যই ব্যাপক বেড়ে যাবে ।এখানে সে ঘটনাই ঘটেছে।


৭। শীলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত
৯। অন্ধকার




আগ্নেয় অগ্নুৎপাতের কারনে আগ্নেয় ছাই এতই ব্যাপক ভাবে স্থানীয় আকাশ ঢেকে ফেলে যে সুর্যের আলো পর্যন্ত দেখা/অনুভব যায় না। বৃষ্টির দিন বা ঘন কুয়াশায় আমাদের দেশে যেমন হয়। আবার লোকাস্ট (সাধারন অর্থে পঙ্গপাল) যখন ঝাক বেধে চলাচল করে তখনও আকাশ ঢেকে ফেলে। অন্যদিকে এইরূপ আগ্নেয়পাতের ফলে স্থানীয় আবহাওয়া হঠাৎ বিরুপ হয়ে যায়। যার ফলে শীলা বৃষ্টি হয়। সালফার মিশ্রিত আগ্নেয় ছাই সেই সাথে বজ্রপাতের কারন ঘটায়

১০। প্রথম সন্তানের মৃত্যু


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নফস, রুহ, কলব......পরিচয়, ব্যাধি, প্রতিকার

চৌদ্দশ বছরের আমরা এক কাফেলা

হাদিস ছাড়া শুধু কুরআন অনুসরণ কতটুকু যৌক্তিক