নবীদের ওয়ারিসদের দায়িত্ব, অবদান ও মূল্যায়ন ।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। কিভাবে কোন পদ্ধতীতে ইবাদত করবে তার প্রকৃতি, ধরণ, নিয়ম নীতি দিয়েছেন। প্রত্যেক যুগে এই উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক তার পক্ষ থেকে একটি করে গ্রন্থ এবং একজন করে বার্তাবাহক বা পথ নির্দেশক পাঠিয়েছেন। যাদেরকে নবী বা রাসুল বলে জানি।আর এই রিসালাত এবং নবুওয়াতের সমাপ্তি হয়েছে বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. এর মাধ্যমে। বিশ্ব
মুসলিমের অগ্রদূত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এসে জাহিলিয়াতের আগ্রাসনে ভুলুন্ঠিত সমাজ, ত্রাসের
দাবদাহে প্রজ্জলিত, জালিমের অত্যাচার আর নির্যাতনে নিপড়ীত অভিশপ্তজনপদ যখন পরিত্রাণের প্রত্যাশায় সৃষ্টিকর্তার নিকট আরাধনা করেছিল ঠিক সেই মূহুর্তে একটি সোনালী সমাজ উপহার দিয়েছেন ও বিশ্বের মানুষকে তার সেই কার্যধারা ধরে রেখেছিলেন সাহাবায়ে কেরাম, তারপর তাবিয়ীন তবেতাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন সালফে সালেহীন, দায়িত্ব এসে পৌছে একপর্যায়ে এই কুরআনের ধারক বাহক হক্কানী ওলামায়ে কেরাম এর উপর। কেননা ওলামায়ে কেরাম হচ্ছে নবীগণের ওয়ারিছ। আর নবুওয়তের ওয়ারাসাত টাকা দিয়ে পয়সা দিয়ে ক্রয় করা যায়না। আর একারণেই নবী রাসুলদের যতগুলো কাজ বা দায়িত্ব ছিল, এইসবগুলো দায়িত্ব ওলামায়ে কেরামের উপর বর্তাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা তার নবীকে তিনটি বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন এক. তাহার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শোনানোর জন্য। দুই. তাদেরকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা থেকে, কলুষতা থেকে পবিত্র করে আত্বশুদ্ধি করার জন্য। তিন. এবং উম্মতকে কিতাব তথা আল্লাহ পাকের বিধি বিধান হিকমত তথা রাসুলের আদর্শ বা সুন্নত শিক্ষা দেওয়ার জন্য। [সুরা জুমা-২] তাইতো একজন আলেম যেমন অনেক দায়িত্বশীল অনেক সম্মানের অধিকারী, সমাজে তার অবদানও অনেক বেশী। এজন্য আল্লার রাসুল সা. বলেন যে, তুমি হয়তো একজন আলেম হও না হয় দীনি অন্বেষণকারী ছাত্র হও; অন্যথা আলেমের সেবক হও অথবা কমপক্ষে আলেমের ভালবাসা অর্জনকারী হও। এগুলো ছাড়া পঞ্চম অবস্থানে যাইওনা। একজন আলেমের অবদান সমাজে অনেক বেশী। একজন মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ধাপে ধাপে আলেমের সরণাপন্ন হতে হয়। যেমন নবজাতক শিশুর জন্মের সাথে সাথে তার ডান কানে আজান বাম কানে ইকামত দিতে হয়। জন্মের কয়েক দিন পর সুন্দর একটি নামের প্রয়োজনে আলেমের সরণাপন্ন হতে হয়। এবং তার কিছুদিন পর তার আকীকা মুসলমানী ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক মসজিদের ইমামের প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশেষ করে কোন অদৃশ্য আক্রমণ বা অদৃশ্য ছোবল বা ভয় পাওয়া, বিছানায় প্রস্রাব করা-মাথার ব্রেণ টাল হওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে আলেমের সরণাপন্ন হতেই হয় এবং এর ফলে সমস্যার সমাধানও হয়ে যায়। এছাড়া বিবাহ সম্পাদনে ইজাব কবুল পড়ানো এবং শেষ মুহুর্তে মৃত্যুর পর একজন আলেম এর মাধ্যমেই জানাযা সম্পন্ন করতে হয়। সর্বোপরি শেষ কথা হলো যে, আলেমদেরকে কোন অবস্থাতেই অবহেলা, অবজ্ঞা এবং অপমান করা যাবেনা। যদি দ্বীনের পথ প্রদর্শক আলেমদের অবমাননা করা হয় তাহলে নবীর অবমাননা হবে। আর নবীর অবমাননা হলে আল্লাহ রাগাম্বিত হবেন। আর আল্লাহ ক্রোধান্বিত হলে আমাদের উপর আল্লাহর আযাব পতিত হবে। তাই আসুন আমরা কুরআন হাদিস, মসজিদ মাদ্রাসা, আলেম ওলামা আইম্মায়ে কেরাম, মুদাররিসকে সম্মান করি এবং মাদরাসাগুলোকে রক্ষা করে ইসলামকে রক্ষা করি। নিজে জাহান্নাম থেকে বাঁচি অপরকে বাচানোর চেষ্টা করি। আমীন।

(হা.মাও.আবু বকর ছিদ্দিক)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নফস, রুহ, কলব......পরিচয়, ব্যাধি, প্রতিকার

চৌদ্দশ বছরের আমরা এক কাফেলা

হাদিস ছাড়া শুধু কুরআন অনুসরণ কতটুকু যৌক্তিক